সারা দেশে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হবে বিজয় দিবস
প্রতীকী ছবি
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। এ সরকার সারা দেশে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিজয় দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় বিজয় দিবসে রাজধানীসহ জেলা-উপজেলায় কুচকাওয়াজ না করে দিনব্যাপী বিজয় মেলা করার সিদ্ধান্ত হয়। বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালে মহান বিজয় দিবস পালনে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এবার অন্তর্বর্তী সরকার বিজয় দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে ৯ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
২০২৩ সালে মহান বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের জন্য ৪৩২টি উপজেলায় ৭৫ হাজার টাকা করে এবং প্রতিটি জেলায় ১ লাখ করে ৬৪ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এ বছর মহান বিজয় দিবসে প্রতিটি উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা করে এবং বিজয় মেলা আয়োজনের জন্য ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার জন্য ১ লাখ টাকা এবং বিজয় মেলা আয়োজনের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর সভাপতিত্বে মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ঢাকাসহ সারা দেশে উঁচু ভবনগুলোতে বাংলাদেশের বড় আকারের পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন/সোহরাওয়ার্দী উদ্যান/মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেল বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী জাতীয় পতাকা তৈরি করে তা উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে এককভাবে বা যৌথভাবে এবং চাঁদপুরে ও মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো এককভাবে দুপুর ২টা থেকে ওইদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার করবে। ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলে বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং দেশের সর্বত্র মিলনায়তনে বা উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ খাবার সরবরাহ করা হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ এবং বিভিন্ন স্থাপনা জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন রঙিন নিশানের মাধ্যমে সজ্জিত করা হবে।
দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত এবং বিনা টিকিটে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জাদুঘরগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকিটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেছেন, “বিজয় দিবস আমাদের জাতির জন্য অনন্য দিন। ৯ মাস যুদ্ধ করে জাতি এই বিজয় অর্জন করেছে। সারা দেশের মানুষ যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিল। একসময় সারাদেশেই বিজয় উৎসব হতো। ধীরে ধীরে এ আয়োজন কমে যায়। এবার উৎসবমুখর করতে সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় মেলা করা হবে।”
তিনি জানান, জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। কারণ, সেনাবাহিনী এখন সারাদেশে ব্যস্ত। এটার জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় আছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রোগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
ঢাকা/এএএম/রফিক