দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা হত্যা: তদন্ত কতদূর?
তানজিল জাহান ইসলাম তামিম
দুই মাসের অধিক সময় পার হলেও রাজধানীর রামপুরার মহানগর প্রজেক্টে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোনো কূল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফ্ল্যাটে রাখা গুরুত্বপূর্ণ আলামতও পুলিশ জব্দ করতে পারেনি।
আলামত হিসেবে সিসিটিভির ডিভিআর গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটির সন্ধান মিলছে না। যদিও বলা হচ্ছে, ডিভিআরটি পেলে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে ডিভিআরটি দ্রুত খুঁজে বের করার জন্য মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাতিরঝিল থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৬ নভেম্বর আদালতে মামলার জামিনে থাকা আসামি ও ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিতভাবে জানান, ‘ঘটনার দিন ১০ অক্টোবর সকাল ১০টার পর মহানগর প্রজেক্টে এ ঘটনা ঘটে। যে ফ্ল্যাটে অতর্কিতভাবে ১০/১২ জন হামলা চালায়, সেই ভবনের নিচতলায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন তামিম। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের জন্য ডেভেলপার মালিক ও তার ভাড়াটে বাহিনী দায়ী। কেননা এখানে ডেভেলপার ও জায়গার মালিকের মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ঘটনার সময় নাসরিন আক্তার ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ডাক-চিৎকারে সাক্ষীরাসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদী সানভিল জাহান ইসলাম বাদীকে স্বামীসহ বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেন, অন্যথায় বাদী এবং তার স্বামী ও সন্তানদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।’
‘‘ওই দিন আনুমানিক দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে অভিযোগকারীর ফ্ল্যাটের ভেতর থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার একটি কালো রংয়ের ডিভিআরবক্সসহ সন্দেহভাজন আসামি সামভিল চুরি করে নিয়ে যায়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাদীর বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে বাসায় রক্ষিত মালামালও ভাঙচুর করে। যা দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৪/৪৪৭/৪৪৮/৩৮০/৪২৭/৫০৬/১১৪ ধারার অপরাধ গ্রহণ করে আদালত ইতোমধ্যে সামভিলকে আদালতে নিজে কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দিয়েছেন।’’
আদালতে আরও অভিযোগ করা হয়, ‘গত ১০ অক্টোবর দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে অন্য বিবাদীর নির্দেশে তার বড় ছেলে সামভিল জাহান লোহার ধারালো শাবল দিয়ে বাদীর ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বাদী বাসায় ও তার দুই সন্তান, কাজের বুয়া শাহিদা এবং বাদীর চাচা শ্বশুর আব্দুল মান্নান বাসায় উপস্থিত ছিলেন। ভেতরে প্রবেশ করেই সামভিল শাবল দিয়ে আঘাত করে ঘরের সব আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে।’
নাসরিন আক্তারের অভিযোগ, ‘‘ঘটনা জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার আগে আসামি হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে আমাকে এবং আমার স্বামী মো. মামুনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে উদ্দশ্যমূলকভাবে। আবার আমরা তাদের ওপর হামলা বা চড়াও হয়নি। যা ডিভিআর দেখলেই প্রমাণিত হবে। কিন্তু ঘটনার পরপর মিথ্যা মামলা সাজাতে সামভিল জাহান সিসিটিভির ডিভিআরটি নিয়ে যায়।’’
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ডিভিআরের ভেতরই ঘটনার দিন, ঘটনাস্থল ও আশপাশে কার কী ভূমিকা ছিল, কার আঘাতে মেধাবী তামিম মারা যেতে পারেন, কারা জড়িত তার সবকিছুই ডিভিআরে রক্ষিত থাকতে পারে। যা এই তদন্ত কার্যক্রমকে শুধু নিরপেক্ষতাই এনে দেবে না, যে দোষী তাকে পুলিশ সহজেই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে।
মামলাটি তদন্ত করছেন হাতিরঝিল থানার ওসি (তদন্ত) মীর সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। তদন্তের পরই বলা যাবে কারা কারা দায়ী এ ঘটনায়। তদন্তনাধীন বিষয় নিয়ে এই মুহূর্তে এর বাইরে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় ঘরে ঢুকে তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে মারধর ও গলা টিপে হত্যার ঘটনা ঘটে। রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের চার নম্বর রোডের ডি-ব্লকের বাড়ির আট তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই লোকজন তামিমকে উদ্ধার করে মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষার পর মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা/এসবি