‘বরফ পড়লেও রিকশা নিয়ে নামতে হবে রাস্তায়’
তীব্র শীতে কষ্ট বেড়েছে কর্মজীবী মানুষের
মাঝ পৌষে রাজধানীসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। চারপাশে ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়া। বইছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন। এতে কর্মজীবী মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে, দিনমজুর ও রিকশাচালকদের কষ্টের শেষ নেই। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন যোগাতে বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হতেই হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীতে লাখ লাখ রিকশা, অটো, ভ্যানের চালকের কষ্ট বেড়েছে তীব্র শীতের কারণে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী মিলছে কম। অন্যদিকে, বাড়তি ভাড়া চাইলে শুনতে হচ্ছে রূঢ় কথা। নিরুপায় হয়ে সব সহ্য করতে হচ্ছে তাদের।
শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ীতে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন জুয়েল মিয়া। ঠান্ডার মাঝে রিকশা চালাতে কেমন লাগে, জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “যে ঠান্ডা পড়েছে, মনে হয়, মরেই যাব।”
জুয়েল মিয়া আরও বলেন, “থাকি বস্তিতে। পরিবারে বউ আর দুই ছেলে-মেয়ে আছে। বাধ্য হয়ে নামতে হচ্ছে রাস্তায়। ঠান্ডায় বের হওয়া যায় না। কাঁপায় ফেলছে। হাত-পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কী করব, উপায় নেই। ক্ষুধার জ্বালায় সব সহ্য করতে হয়। কামাই না করলে খামু কী? জমা তো কিছু নেই।”
শুক্ররাত রাত ১০টার দিকে কাজলা এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক কামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বাড়িতে ছেলে-মেয়ে, অসুস্থ মা আছে। বরফ পড়লেও রাস্তায় বের হতে হবে রিকশা নিয়ে। পেট তো চালাতে হবে। গরিব মানুষ, জমানো টাকাও নেই। ইনকামও কমে গেছে। আগে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা আয় হতো। এখন তো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ইনকাম করতে কষ্ট হয়।”
কামাল বলেন, “অন্য সময় সকাল ৬টায় বের হতাম। শীতের কারণে এখন ১০টায় বের হই। দূরের যাত্রী নিই না। ছোট ছোট ট্রিপ মারি। কয়েকটা গরম কাপড় পরছি, তাতেও শীত কমে না। আর যাত্রীও কম, রিকশা বেশি। কী যে একটা অবস্থায় আছি।”
যাত্রী শেফালী আক্তার বলেন, “রিকশা ছাড়া ঢাকায় চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। অফিস কিংবা বাজার, যেখানেই যাওয়ার প্রয়োজন হয়, রিকশা নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিনই রিকশায় চড়তে হয়। যখন রিকশায় বসি, তখন চালকের কষ্ট দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এই শীতে তাদের অবস্থা আরও করুণ। কিছু করার নেই। মেনে নিতেই হয়। অনেক সময় আমরা কারণে-অকারণে তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে যাই। আশা করব, সবাই যেন তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন।”
ঢাকা/মামুন/রফিক