ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মুক্তা চাষের জন্য বিশেষজ্ঞ খুঁজছে বাংলাদেশ

তরিকুল ইসলাম সুমন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ৩ মে ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তা চাষের জন্য বিশেষজ্ঞ খুঁজছে বাংলাদেশ

ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা

তরিকুল ইসলাম সুমন
বাংলাদেশে মুক্তা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ও কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না। পর পর দুই বছর বিশেষজ্ঞ ও কারিগর নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দরপত্রে বিশেষজ্ঞ ও কারিগরদের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে, সে পরিমাণ অর্থে কোনো বিশেষজ্ঞ ও কারিগর আগ্রহী হচ্ছেন না। এ জন্য বাংলাদেশ তাদের ডিপিপি পরিবর্তন করারও উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, মুক্তা চাষ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের একটি। এটি বাস্তবায়নে সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের উন্নয়নে ডিপিপি সংশোধন করে বিশেষজ্ঞ ও কারিগর নিয়োগ দেওয়া হবে। এ জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘মুক্তাচাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিষয়ক’ প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর তত্ত্বাবধায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রকল্প মেয়াদ ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।

তিনি আরো বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৪টি রঙের (কমলা, গোলাপী, সাদা, ছাই) এবং তিন আকারের (গোল, রাইস, আঁকাবাঁকা) মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তবে সমস্যা হলো- বাংলাদেশে উৎপাদিত মুক্তার আকার অসমতল, অমসৃন। এসব মুক্তা কেন গোলাকার হচ্ছে না- এ জন্য বিশেষজ্ঞ ও কারিগর নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরপর দু বছর দরপত্র আহ্বান করা হলেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘গত বছর দরপত্র আহ্বান করা হলে একজন চীনা নাগরিক অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার চাহিদা অনেক বেশি ছিল, যা যোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি। চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২টি অস্ট্রেলিয়ান এবং অপরটি সুইডেনের। এর মধ্যে টেকনিশিয়ান বা কারিগর ক্যাটাগরিতে ১টি এবং বিশেষজ্ঞ ক্যাটাগরিতে ২টি দরপত্র জমা পড়েছে।’

প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, দরপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রস্তাবিত টাকা হলো ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এই পারিশ্রমিকে কোনো বিদেশি কারিগর রাজি নন। তাদের চাহিদা, প্রতিমাসে ২৪-২৮ লাখ টাকা। তবে বিশেষজ্ঞের ক্ষেত্রে এই পারিশ্রমিক আরো বেশি বলে জানান তিনি।

এ পরিস্থিতিতে চিন্তা করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মেয়াদ ১ বছর থেকে কমিয়ে ছয়মাস করা যায় কি না। এভাবে বাংলাদেশ নির্ধারিত টাকায় সমন্বয় সাধন করে বিদেশি কারিগর ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে চাইছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ মুক্তা চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিএফআরআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গবেষণায় ইমেজ মুক্তা তৈরিতে সফলতা অর্জিত হয়েছে ৮ মাসে সর্বোচ্চ ১০০ মিলিমিটার (মি.মি.) এবং গড়ে ৪০ ১০০ মি.মি. ওজনের রাইস পার্ল ও ৬ মাসে পূর্ণাঙ্গ ইমেজ মুক্তা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক চিহ্নিত করণের দেশব্যাপী জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৪ ধরণের মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- Lamellidens marginalis (লামিলিডেন্স মার্জিনালিস), Lamellidens corrianus (লামিলিডেন্স করিয়েনাস), Lamellidens Phenchooganjensis (লামিলিডেন্স প্যানচ্যুগ্যাজিনিস) এবং Lamellidenj jenkinsianus (লামিলিডেন্স জেনকিনসিনিয়াস)। এর মধ্যে Lamellidens marginalis ও  Lamellidens corrianus জাতের ঝিনুকের মুক্তা উৎপাদন হার বেশি।

বিএফআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মুক্তা উৎপাদনের জন্য অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৭৬ শতাংশ এবং মুক্তা তৈরির হার ৮২ শতাংশ, একটি ঝিনুক থেকে সব্বোর্চ ১২টি মুক্তা তৈরি হয়। পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ ৫ মি. মি. এবং গড়ে ৩ মি.মি. আকারে মুক্তা তৈরি হয়।
 
হারুনুর রশীদ বলেন, কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুকে পাঁচ মাসে দুই থেকে তিন মি. মি. আকারের মুক্তা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেছে বিএফআরআইয়ের গবেষকরা। আগে একই আকারের মুক্তা উৎপাদন করতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগত।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ ও ফুলবাড়ীয়ায় প্রর্দশনী খামারে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০০ জন আগ্রহী নারী ও পুরুষকে মুক্তাচাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে নারীরা ঝিনুক অপারেশনে বেশি দক্ষ।

 

রাইজিংবিডি/তরিকুল/কে. শাহীন/৩ মে

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়