ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনার উপসর্গহীন রোগীর ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে: গবেষণা

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনার উপসর্গহীন রোগীর ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে: গবেষণা

কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু তার কাশি, জ্বর, বিষণ্ণতাসহ করোনার অন্য কোনো সাধারণ উপসর্গ নেই। এর অর্থ এই নয় যে, করোনাভাইরাস তার কোনো ক্ষতি করছে না। ভাইরাসটি হালকা সংক্রমণ পর্যায়ে থাকলেও বিপরীতমুখী কাজ করে, উপসর্গহীন রোগীর ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। নতুন একটি গবেষণায় এমন দাবি করা হয়েছে।

নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত এই গবেষণায় করোনার উপসর্গহীন বা অ্যাসিম্পটোমেটিক (যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তবে অসুস্থবোধ করছেন না) সংক্রমণের ক্লিনিক্যাল প্রমাণাদি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, এ ধরনের রোগীদের করোনার কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও তাদের ফুসফুস সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, উপসর্গহীন হওয়ার মানে সর্বদা এই নয় যে, সংক্রমণে শরীরের কোনো ক্ষতি হয়নি। এক্ষেত্রে ফলোআপ গবেষণা গবেষকদের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে। তবে যেহেতু ফ্লু বা সাধারণ ঠান্ডার অন্যান্য ভাইরাসের প্রভাব এই গবেষণায় মূল্যায়ন করা হয়নি, তাই উপসর্গহীন রোগীর ফুসফুসের ক্ষতি ইমিউন রেসপন্সের প্রভাব নাকি করোনাভাইরাসের জন্যই হয় তা স্পষ্ট নয়।

করোনার উপসর্গহীন বাহক খুঁজে পাওয়া এবং গবেষণা করা কঠিন। কারণ সবাই যখন মনে করে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাধারণত তখন করোনা টেস্ট করে থাকে। কিছু মানুষ প্রথমে উপসর্গহীন থাকলেও পরবর্তী সময়ে তাদের তীব্র জ্বর, ক্লান্তি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অসুবিধাসহ অন্যান্য সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা যায়।

নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় ৩৭ জন উপসর্গহীন রোগীর কেস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মধ্য চীনের ওয়াঞ্জহু জেলার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং করোনা টেস্টের মাধ্যমে এই রোগীদের শনাক্ত করে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের শুরুর দিকে ২,০৮৮ জন করোনা রোগীর স্বজনদের করোনা টেস্ট করা হয়।

করোনার উপসর্গহীন এই রোগীদের পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের সিটি স্ক্যানে ফুসফুসে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকওয়ারি ইউনিভার্সিটির রেসপিরেটরি মেডিসিনের প্রফেসর ডা. অ্যালভিন ইন বলেন, ‘সিটি স্ক্যানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসহ এতগুলো উপসর্গহীন রোগী খুঁজে বের করা বেশ অবাক করার মতো বিষয়। এই গবেষণা দেখায় যে, সংক্রমণের বাহ্যিক লক্ষণ নেই এমন লোকদের ফুসফুসে কিছুটা অস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। যার মানে করোনাভাইরাস লক্ষণ প্রকাশ না করলেও আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ক্ষতি করতে পারে।’ , যদিও ডা. অ্যালভিন এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার শহরের ন্যাশনাল জুইস হেলথের পালমোনোলজিস্ট ডা. জেনিফার টেইলরও এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘চীনের উপসর্গহীন রোগীদের নিয়ে এই গবেষণা আরো বেশ কিছু গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেখানে দেখা গেছে, বাহ্যিক লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও ভাইরাসটি অনেকের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত করে। সম্ভবত কোভিড-১৯ রোগের ক্ষেত্রে এটি সাধারণ।’

নিউইয়র্কের চিকিত্সকরাও একই ধরন দেখেছেন। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নন যুক্তরাষ্ট্রের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হাসপাতাল-ব্রুকলিনের এমন একজন পালমোনোলজিস্ট ডা. জর্জ মার্কাডো জানান, তিনি এমন অনেকগুলো উদাহরণ দেখেছেন যেখানে একজন রোগী নন-কোভিড সমস্যার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন এবং করোনা টেস্ট পজেটিভ হয়েছিলেন। এসব রোগীর ফুসফুসে অস্বাভাবিকতা পাওয়া গিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

তবে ডা. টেইলর সতর্ক করে জানান, এই গবেষণায় গবেষকরা অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার চেয়ে নতুন করোনভাইরাসটি বেশি মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত যদি কেউ উপসর্গহীন হয় (সাধারণ সর্দি বা ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়) তাহলে আমরা সিটি স্ক্যান করার কথা চিন্তা করি না। সুতরাং ফুসফুসের অস্বাভাবিকতার সঙ্গে উপসর্গহীন করোনার যোগসূত্র বা শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মধ্যে ঘটনাটি সাধারণ কিনা, তা স্পষ্ট করে বলার জন্য তুলনামূলক কোনো ডেটা নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের পালমোনারি, অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের প্রধান ডা. নীল শ্লুগার বলেন, ‘সিটি স্ক্যানে পাওয়া ফুসফুসের রোগের প্যাটার্নগুলো বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। ফুসফুসে কিছুটা তরল জমা, কখনো কখনো ফুসফুসে সামান্য রক্ত কিংবা ফুসফুসে কিছু অংশে প্রদাহ হতে পারে। আমার মতে, সিটি স্ক্যানে দেখা সামান্য এসব ক্ষতিগ্রস্ততা ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের কারণেও হতে পারে।’

ফুসফুসে হালকা প্রদাহসহ করোনার উপসর্গহীন রোগী, যাদের অসুস্থতার আরো কোনো লক্ষণ নেই, পালমোনোলজিস্টদের মতে, এ ধরনের রোগী সংক্রমণ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারে এবং ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

ডা. টেইলর বলেন, ‘আমার সন্দেহ হলো, উপসর্গহীন এসব রোগীদের যদি কয়েক মাস পরে ফলোআপ করা হয় তাহলে তাদের বেশিরভাগের সিটি স্ক্যান পুরোপুরি স্বাভাবিক আসবে। যদি তাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ প্রকাশ না পেয়ে থাকে।’

কোনো ব্যক্তির ওপর সংক্রমণের প্রভাব কেমন হবে তা চিকিৎসকদের পক্ষে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। ডা. শ্লুগার বলেন, ‘উপসর্গহীন কার উপসর্গ প্রকাশ পাবে না, কে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে এবং কার গুরুতর সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে তা জানার কোনো উপায় নেই।’

ন্যাচার মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় আরো দেখা গেছে, করোনার উপসর্গহীন রোগীদের মধ্যে ভাইরাসটি ১৯ দিন পর্যন্ত থাকে, যা হালকা উপসর্গের রোগীদের তুলনায় পাঁচ দিন বেশি। ডা. শ্লুগারের মতে, এর মানে এটা বোঝায় না যে উপসর্গহীন লোকেরা পুরো সময়টি সংক্রামক হয়। বরং তারা সংক্রমণের কোনো এক পর্যায়ে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ কারণে লকডাউন তুলে নিলেও ফেস মাস্কের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।’

 

ঢাকা/ফিরোজ/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়