ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সুপারনোভার আদ্যোপান্ত

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুপারনোভার আদ্যোপান্ত

অহ নওরোজ : মেঘমুক্ত রাতের আকাশে তারাদের আমরা নিয়মিতই দেখি। রাতের আকাশে অসংখ্য তারা নিয়মিত উঠতে দেখলেও এই আকাশেই অনিয়মিতভাবে দেখা মেলে সুপারনোভার। একটি তারা ধীরে ধীরে বড় এবং উজ্জ্বল হয়ে তারপর চিরতরে নিভে যাওয়ার ঘটনাকে সুপারনোভা বলে।

আকাশের দিকে তাকালে মহাবিশ্বের খুবই ক্ষুদ্রতম একটা অংশ আমাদের চোখে পড়ে। রাতে মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে খোলা চোখে ধরা দেবে মাত্র ৬ হাজারের মতো নক্ষত্র। কিন্তু একটু মাঝারি মানের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে প্রায় ৫০ হাজার মতো নক্ষত্র দেখা সম্ভব। এছাড়া আরো ভালো লেন্সের টেলিস্কোপের সাহায্যে মেঘমুক্ত আকাশে প্রায় ৩ লাখ নক্ষত্র এমনকি কয়েকহাজার ছায়াপথ একসঙ্গে দেখা সম্ভব। কিন্তু এর মধ্যে একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য একটি সুপারনোভা খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টকর। কারণ আমাদের কাছের ছায়াপথগুলোতে এই ঘটনাটি এতই বিরল যে আধুনিক যুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও জীবনে একটি সুপারনোভাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারাকে বিশাল প্রাপ্তি বলে মনে করেন।

সুপারনোভা শব্দটির বাংলা করলে দাড়ায় ‘অতিনবতারা’। জ্যোতিষী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ বহুকাল ধরেই সুপারনোভার রহস্য খুঁজেছেন। তবে তারাদের এই রহস্যের তল ধরতে তাদের বেশ সময় লেগেছে।

সুপারনোভা হল এক ধরনের নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ প্রক্রিয়া, যার কারণে একটি নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় এবং অবশেষরূপে থাকে শীতল নীহারিকা এবং কৃষ্ণবিবর। সকল নক্ষত্রের মতো আমাদের সূর্যেরও একদিন এই পরিণতি ঘটবে।

যা হোক, আমরা জানি একটি মাঝারি মানের নক্ষত্র নিউক্লিয় ফিশন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়ামে রুপান্তিত হওয়ার মাধ্যমে জ্বলে থাকে। কোটি কোটি বছর ধরে জ্বলতে থাকা এই তারকায় যখন জ্বালানি সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায় তখন নক্ষত্রটি তার পরিণতিতে পৌঁছে যাওয়ার আগে স্ফিত এবং উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং বিস্ফোরিত হয়। তারপর আস্তে আস্তে নিস্প্রভ হয়ে যায়। ভরের তারতম্যের ওপর এই বিস্ফোরণ এবং উজ্জ্বল হয়ে ওঠা নির্ভর করে।

যখন কোন নক্ষত্রে ফিশন বিক্রিয়াসমূহের পরিসমাপ্তি ঘটে তখন এক সময়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যায় এবং ফলে নক্ষত্রটির বেশিরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে চলে যায় এবং ভেতরের অঞ্চল সংকুচিত হয়ে পড়ে। এদিকে এর বাইরে থাকা গ্যাসীয় অঞ্চলটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ও স্ফিত হয়ে যায়। দূর হতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তারকাটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। উজ্জ্বল হয়ে ওঠা এই ঘটনাটাই সুপারনোভা হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সে সময়ে সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে কখনো কখনো পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আর এই সুপারনোভা ঘটনার মাধ্যমেই একটি নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রতি সেকেন্ডেই মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আমরা সবগুলোকে দেখতে পারিনা। খালি চোখে আমরা শুধু আমাদের ছায়াপথের কাছাকাছি যে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে সেগুলোকেই দেখতে পারি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের আকাশগঙ্গার মতো ছায়াপথে ৫০ বছরে একটি সুপারনোভার বিস্ফোরণ ঘটে থাকে।

তাই এক জীবনে খালি চোখে রাতের আকাশে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা তারাকে নিভে যাওয়া দেখা সম্ভব। তবে তার জন্য ধৈর্য এবং নিয়মিত অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়ে।

তথ্য সহায়তা :

 

*এ শর্ট স্টোরি অফ নিয়ারলি এভরিথিংস : বিল ব্রাইসন

 

*মহাবিশ্বের উৎস সন্ধানে : শঙ্কর মুখোপাধ্যায়

*লাইফ অ্যান্ড ডেথ অফ এ স্টার : কেনেথ আর ল্যাঙ

প্রভৃতি

রাইজিংবিডি নিয়ে মহাকাশ সিরিজের আগামী পর্বে থাকছে- ‘বিজ্ঞানীরা যেভাবে তারার দূরত্ব মাপেন’

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়