বাঙালির নিরানন্দের ঈদ এবারই প্রথম নয়: মোস্তাফা জব্বার
‘করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঈদ-উৎসব সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত।’ বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে লকডাউনকে ‘উভয় সংকট’ মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাঙালি সাহসী জাতি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো মানসিক শক্তি এ জাতির রয়েছে- স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থা যত খারাপ হোক না কেন, ধর্মীয় দায়িত্ব আমরা যেমন পালন করবো, তেমনি এ মহামারি থেকে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার, সেটুকুও জাতি পালন করবে।’
এবারের ঈদ একেবারেই অন্যরকম জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ঈদ মানে বরাবর যা হয়- শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের জন্য আনন্দ; আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা, তাদের বাড়ি যাওয়ার আনন্দ- সামগ্রিকভাবে ঈদের এ আনন্দটা এবার হচ্ছে না।’
বিষয়টিকে ‘নিঃসন্দেহে দুঃখজনক’ মনে করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও নমনীয় হয়ে দেশের মানুষকে ঈদ পালনের জন্য সরকার যতটুকু সুযোগ দিয়েছে, এর চেয়ে বেশি সুযোগ দেওয়া সম্ভব ছিল না। বিষয়টি তাহলে আত্মঘাতী হয়ে যেতে পারতো।’
বাঙালির জীবনে নিরানন্দের ঈদ এবারই প্রথম নয়। ১৯৭০ সালে ঈদের আগে ১২ নভেম্বর কাল-রাত্রিতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দশ লাখ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়েছিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে। পরের বছর বাঙালির ঈদ কেটেছে রণাঙ্গনে। সেই অবরুদ্ধ দিনে, মৃত্যুদীর্ণ বাংলায় ঈদ এসেছিল মুক্তির শপথ নিয়ে। ২০ নভেম্বর ঈদের দিন সকালে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে ভেসে এসেছিল সমবেত কণ্ঠে অজিত বিক্রমের সেই গান- ‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও ফিরে যাও...।’
এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মানুষ স্বেচ্ছা গৃহবন্দি। করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি জগতে বাংলা ভাষা প্রচলনের (বিজয়) এ পথিকৃৎ বলেন, ‘একাত্তরে মানুষ যে পরিস্থিতির মধ্যে ঈদ উদযাপন করেছে এবারের পরিস্থিতি তার চেয়ে ভয়ঙ্কর! কারণ একাত্তর সালে কিছু মুক্তাঞ্চল ছিল। সেখানে অন্তত ঈদ উদযাপনে সমস্যা ছিলো না। কিন্তু করোনার প্রভাবে এবারের ঈদে দেশজুড়ে স্থবির অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে থেকেই আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবো এবং নিশ্চয়ই জয়ী হবো।’
দেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে লকডাউন বৃদ্ধি কতটা প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি হচ্ছে উভয় সংকট! লকডাউন যদি বাড়ানো হয় তাহলে যারা দিন আনে দিন খায়, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য বিষয়টি সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকই প্রায় এরকম। আবার অন্যদিকে যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এ মহামারি কি পর্যায়ে যাবে সেটা এখনো চিন্তা করা যাচ্ছে না। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। আমরা এমনিতেই নানা দুর্যোগের মধ্যে, রোগ-শোকের মধ্যে বসবাস করে আসছি। ফলে আমি মনে করি, ইউরোপ-আমেরিকায় যে বিপর্যয় হয়েছে সেই বিপর্যয় আমাদের এখানে হবে না। আমাদের জনগণের নিজস্ব যে শক্তি আছে তা দিয়ে মানুষ করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকে বলে বেড়াচ্ছে- সরকার নাকি তথ্য গোপন করছে বা পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিচ্ছে না। বাংলাদেশের কথা বাদ দিলাম, ভারতের দিকে, নেপালের দিকে বা ভুটানের দিকে তাকালেও কিন্তু করোনার চিত্র একই দেখা যাচ্ছে। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর ইউরোপ আমেরিকার মানুষের জীবনযাপন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক নয়। আমাদের সক্ষমতা বেশি।’
এ সময় আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করোনা মোকাবিলা ‘চ্যালেঞ্জিং’ উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মহামারি মোকাবিলায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রাথমিক অবস্থা থেকে আমাদের উঠে আসা, সম্পূর্ণ নতুনভাবে পুরো ব্যবস্থাটি তৈরি করা; তারপরও আমরা মোটামুটি মোকাবিলা করতে পারছি। আমার মতে, পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউন কতটা সময় রাখতে হবে বা খুলতে হবে- সময়ই আমাদের বলে দেবে।’
আজ ঈদ। ব্যক্তিগত ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘আমার দুই ভাই ঢাকা থাকে, বোনের ছেলেমেয়েরা থাকে। কিন্তু ঈদের দিনে তাদের সঙ্গেও দেখা হবে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমার ক্ষেত্রে আরেকটা দুঃখজনক ঘটনা হলো, কিছুদিন আগে আমি নানা হয়েছি। কিন্তু করোনার কারণে নাতিকে এখনো দেখতে যেতে পারিনি। এর মধ্যে দিয়েই ঈদ কাটাতে হবে।’
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম