ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

আবিষ্কৃত হলো সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি

প্রকাশিত: ১৮:২২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২০:৩২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আবিষ্কৃত হলো সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি

মহাকাশ গবেষণায় নতুন চমক। খোঁজ মিলল সবচেয়ে বড় ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত যতগুলো গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেছেন, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। 

নেদারল্যান্ডের লেইডেন অবজারভেটরির গবেষকরা খোঁজ পেয়েছেন নতুন এই রেডিও গ্যালাক্সির। নাম দেওয়া হয়েছে অ্যালকিয়োনেস। 

প্রায় ১৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দৈর্ঘ্য এই গ্যালাক্সির। অর্থাৎ অ্যালকিয়োনেস গ্যালাক্সির একপ্রান্ত থেকে অন্যত্র যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ আলোকবর্ষ। যার তুলনায় আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি একেবারেই বামন। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৬ হাজার আলোকবর্ষ।

আরো পড়ুন:

নতুন এই গ্যালাক্সির আয়তন এত বেশি যে, এর মধ্যে এঁটে যেতে পারবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আয়তনের একশোটিরও বেশি গ্যালাক্সি। মিল্কিওয় গ্যালাক্সির তুলনায় ১৫৩ গুণ বড় অ্যালকিয়োনেস গ্যালাক্সি।

নতুন আবিষ্কৃত এই দৈত্যাকৃতি গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। অর্থাৎ ওই গ্যালাক্সি থেকে যে আলো এই মুহূর্তে পৃথিবীতে এসে পৌঁছবে, তা ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ আগে তার যাত্রা শুরু করেছিল।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অ্যালকিয়োনেস গ্যালাক্সির মোট ভর আমাদের সূর্যের ভরের তুলনায় প্রায় ২৪০ বিলিয়ন বা ২৪ হাজার কোটি গুণ বেশি। 

নতুন এই রেডিও গ্যালাক্সির সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু এখনও জানা যায়নি। তবে আপাতভাবে এর যা গঠন লক্ষ্য করা গেছে, তাতে বেশ কিছু ধারণা তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এই গ্যালাক্সির মধ্যে যে জেট এবং লোব দেখা গেছে, যার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, গ্যালাক্সির ঠিক মাঝে বিশাল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর থাকতে পারে। আর এই ব্ল্যাকহোল থেকেই শক্তি পায় গ্যালাক্সিটি। 

গ্যালাক্সিটির আয়তন ও আকার নিয়েও একাধিক প্রশ্ন ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। কীভাবে এত বড় হলো এই গ্যালাক্সি? উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। অ্যালকিয়োনেসের আবিষ্কারের ফলে রেডিও গ্যালাক্সি সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রেডিও গ্যালাক্সির গঠনপ্রক্রিয়া এবং কীভাবে সেগুলো এত বড় আকারের হয়, সেই সংক্রান্ত আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেছেন বিজ্ঞানীরা।

নতুন এই আবিষ্কারের বিস্তারিত তথ্য আর্ক্সিভ-এ প্রিপ্রিন্টে প্রকাশিত হয়েছে।

গ্যালাক্সি কী

আমরা পৃথিবী নামক একটি গ্রহে বসবাস করছি। আমাদের পৃথিবী, আরো ৭টি গ্রহ ও তাদের শতাধিক উপগ্রহ, সূর্য নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই ৮টি গ্রহ, উপগ্রহসমূহ ও সূর্যকে নিয়েই সৌরজগৎ। কতগুলো গ্রহ-উপগ্রহ ও সূর্যকে নিয়ে যেমন একটি নক্ষত্রব্যবস্থা বা সৌরজগৎ গঠিত হয়, তেমনি এরকম অসংখ্য নক্ষত্রব্যবস্থা, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাসমা এবং প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য বস্তু দ্বারা গঠিত হয় একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি। ছায়াপথ মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা আবদ্ধ থাকে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বে পর্যবেক্ষণিক সীমার মধ্যে অন্তত দুই ট্রিলিয়ন (২০ লাখ কোটি) গ্যালাক্সি রয়েছে। যার বেশিরভাগই এখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যেও দেখা যায় না।

আলোকবর্ষ কী

আলোকবর্ষ হলো দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক, যা দিয়ে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত দূরত্ব মাপা হয়। এক আলোকবর্ষ সমান ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার বা ৫.৮৮ ট্রিলিয়ন মাইল। শূণ্যস্থানে আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে এক আলোকবর্ষ বলে। আর আলো প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে।

সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সি

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে দূরের যে গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন, তার নাম জিএন-জেড১১। পৃথিবী থেকে ওই গ্যালাক্সিটির দূরত্ব ১৩.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ।

/ফিরোজ/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়