ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪ ||  চৈত্র ৩১ ১৪৩১

ফিলিপ হিউজের অপূরণীয় শূন্যতার পাঁচ বছর

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিলিপ হিউজের অপূরণীয় শূন্যতার পাঁচ বছর

সেদিনও পূবের আকাশ হতে একটু একটু করে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পরেছিল চারদিকে। সূর্যের রক্তিম আলোয় রাঙা প্রভাত নেমে এসেছিল পৃথিবীতে। কিন্তু সেই রাঙা প্রভাত রাঙাতে পারেনি ২৫ বছরের সেই যুবককে। সাড়ে পাঁচ আউন্সের বলের আঘাত নিয়ে দু’দুটো দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করলেও অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন সেই যুবক। আর সেই সাথে সুদূর অস্ট্রেলিয়া ছাপিয়ে সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বে নেমে আসে যেন এক ধরণের অদ্ভুত শূন্যতা। দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেল। কিন্তু সেই শূন্যতা আর পূরণ হয়নি। হবারও নয়। তার অকাল প্রয়াণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সতীর্থ ও ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে সেটা তো পূরণ হবারও নয়।

২৫ নভেম্বর ২০১৪ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তখন চলছিল সাউথ অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রিকেট ম্যাচ। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সেদিন মাঠে নেমেছিলেন ফিলিপ হিউজ। কিন্তু কখনো কি ভাবতে পেরেছিলেন এই ম্যাচই তার জীবনের শেষ ম্যাচ হতে চলেছে? ৬৩ রান নিয়ে তখন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ব্যাট করছেন ফিলিপ হিউজ। অন্যদিকে বোলিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে শন এবট। হুট করেই বোলার শন এবটের একটি বাউন্সারে হুক শট খেলতে গেলেন হিউজ। বল এসে হিউজের হেলমেটের ফাঁক গলে ঘাড়ে এসে লাগে। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হিউজ। প্রাথমিক শুশ্রূষা দিয়ে যখন হিউজকে জাগানো যাচ্ছিল না তখন নিয়ে যাওয়া হয় সিডনি ভিন্সেন্ট হাসপাতসালে। কিন্তু মৃত্যু তাকে ছেড়ে পালায়নি। অবশেষে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে এ পৃথিবীকে ছেড়ে চলে যেতে হয় ফিলিপ হিউজকে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল শূন্য দিয়ে। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়ান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ম্যাথু হেইডেনের পরিবর্তে মাত্র ২০ বছর বয়সেই দলে জায়গা মিলেছিল এই অজি ওপেনারের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা একেবারেই মনের মতো হয়নি। অভিষেক ম্যাচে ইনিংসের চতুর্থ বলেই ডেইল স্টেইনের পেসের কাছে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় হিউজকে। 

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে যার একচ্ছত্র বিচরণ সে কি এতো সহজে দমবার পাত্র। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেই নিজের জাত চেনালেন তিনি। ১১ চার ও এক ছয়ে ৭৫ রানের এক ইনিংস উপহার দিলেন সবাইকে। তবে এখনো  চমক শেষ হয়নি। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ১১৫ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের খাতায় নাম লেখান ফিলিপ হিউজ। তবে এতেই থামেনি হিউজের চমক। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেই ১৬০ রানের এক ইনিংস খেলে বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসান ২০ বছরের সেই হিউজ। এখন পর্যন্ত হিউজই বিশ্বের সবথেকে তরূণ ব্যাটসম্যান যে কি না একই টেস্টের দুই ইনিংসেই শতক হাঁকিয়েছেন।

টেস্টের দুর্দান্ত সূচনার চার বছর পর ওয়ানডে অভিষেকেও সেই চিরচেনা হিউজকেই দেখে ক্রিকেটবিশ্ব। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি শ্রীলংকার বিপক্ষেও শতক হাঁকিয়ে শুরু করেন তার ওয়ানডের পথচলা। এই শতকের ফলে হিউজ হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সর্বপ্রথম ব্যাটসম্যান যে কিনা ওয়ানডে অভিষেকে শতক দিয়ে ক্যারিয়ারের সূচনা করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পন খুব বেশিদিন হয়নি। তবে অল্প কদিনেই পুরো ক্রিকেট বিশ্বে বড় তারকা হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন। কত প্রিয়ই না ছিল ক্রিকেটের প্রতিটি সরঞ্জাম। অথচ কখনো কি ভেবেছিলেন সেই সাড়ে পাঁচ আউন্স বলটির নিষ্ঠুরতা তাকে একদিন এই অবাক পৃথিবীর আলো দেখতে দিবে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খেলেছেন ২৬টি টেস্ট এবং ২৫টি ওয়ানডে। আর এতেই টেস্টে হাঁকিয়েছেন ৩টি শতক এবং ৭টি অর্ধশতক। অপরদিকে ওয়ানডেতে রয়েছে ২টি শতক এবং ৪টি অর্ধশতক।

‘দ্য কিড’ নামেই ক্রিকেট মহলে পরিচিত ছিলেন হিউজ। তবে ডেভিড ওয়ার্নার আদর করে ডাকতেন ‘লিটল মেট’ । কিন্তু এতো আদর, এতো ভালোবাসা ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ভাগ্যে জোটেনি বেশিদিন। সারা বিশ্বের ভক্তদের কাঁদিয়ে পরপারে চলে গিয়েছেন ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর। আর তিনটি দিন বেঁচে থাকলে হয়তো নিজের ২৬তম জন্মদিন পালন করতে পারতেন। কিন্তু সাড়ে পাঁচ আউন্সের ক্রিকেট বলটি তা আর হতে দিল কই। ফিলিপ হিউজের সেই অকাল মৃত্যু আজও ক্রিকেটপ্রেমিদের মনে সৃষ্টি করে রেখেছে অসীম শুন্যতা।

 

ঢাকা/আমিনুল
 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়