ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

চাকরি হারিয়ে বিপাকে বিজেএমসির অ্যাথলেটরা

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২১, ১৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চাকরি হারিয়ে বিপাকে বিজেএমসির অ্যাথলেটরা

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলাকে অ্যাথলেট উৎপাদনের আঁতুড়ঘর বলা হয়। এখানেই বেড়ে ওঠেছেন দেশের সেরা অ্যাথলেটদের একজন রওশন আরা পুতুল। ৬ বছরেরও বেশী সময় ধরে খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত তিনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পতাকা বহন করে সুনাম কুড়িয়েছেন বহুবার।

দেশে এই অ্যাথলেটের বড় পরিচয় বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) গর্বিত ক্রীড়াবিদ তিনি। বিজেএমসির হয়ে তাঁর ঝুলিতে পুরেছেন ২০টিরও বেশী স্বর্ণপদক। এখানে চাকুরীও করছেন তিনি। আর এটি তাঁর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে। তবে হঠাৎ করে চাকরি হারালেন তিনি। জানলেন, একা নয় তাঁর মতো এমন বিপাকে পড়েছেন আরও অনেক অ্যাথলেট। আর করোনার এই প্রাদুর্ভাবের সময় চাকরির মতো সোনার হরিণ হারিয়ে ফেলে বেশ বিপাকেই পড়েছেন এসব অ্যাথলেট।

পুতুলের থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ছুটিতে নিজ বাড়ি যান তিনি। আর তখনই হুট করে ফোনে জানানো হয় চাকরিতে আর ফিরতে হবে না তাকে। যোগ দিতে হবে না খুলনা বিজেএমসিতে। পুতুলের মতো দুর্ভাগ্যের শিকার হোন খুলনা বিজেএমসির আরও ৭০-৮০ জন অ্যাথলেট। সবাইকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়, আর চাকরি নেই তাদের। পুতুল এ নিয়ে বেশ আক্ষেপের সুরেই বললেন, ‘আমাদের আয়ের পথটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি বাদেও খেলার সাথে যুক্ত অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে খুব বাজে অবস্থায় রয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জানুয়ারির শেষ নাগাদ অস্থায়ী পদে চাকরি করা মোট ২৬৯ জন খেলোয়াড় ও কোচকে ছাঁটাই করে দেয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি। করোনার এই সময় রীতিমতো অর্ধাহারেই দিন কাটছে তাঁদের। আর তাদের নিয়ে বেশি চিন্তা ৮০০, ১৫০০ ও ৩০০০ মিটারে বাংলাদেশের ‘দৌড়ের রানী’ পুতুলের।

সর্বশেষ জাতীয় অ্যাথলেট প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জেতা পুতুল সবার কথা টেনে বলেন, ‘আমি এখন শশুর বাড়িতে থাকি। আমাকে হয়তো খুব বেশী চিন্তা করতে হয় না, কিন্তু যেসব অ্যাথলেটরা চাকরি হারিয়েছেন তাদের অধিকাংশেরই এই বেতনে সংসার চলে। তারা এখন একেবারেই বেকার। তার উপর করোনাভাইরাসের কারণে এখন অন্য কাজও বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।’

ক্রীড়াবিদদের দাবি, নীতিমালা না মেনেই তাদেরকে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এসব ক্রীড়াবিদ অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতো। তাদের যে কোন সময় চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার অধিকার আছে।

বিজেএমসরি ম্যানেজার (প্রোডাকশন) ও সাবেক কৃতি অ্যাথলেট মিলজার হোসেন বলেন, ‘বিজেএমসি অর্থনৈতিকভাবে আগের মতো ভালো অবস্থানে নেই। উৎপাদন কম হওয়ায় সেভাবে লাভ হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ধীরে ধীরে সব ধরনের খেলাধুলা থেকে বের হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই অংশ হিসেবে খেলোয়াড় শ্রমিকদের বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’

যা করার নিয়মের মধ্যে থেকে করা হয়েছে জানিয়ে মিলজার আরও বলেন, ‘যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে তারা সবাই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। মিলের প্রয়োজন হলে তাদেরকে নেওয়া হবে, প্রয়োজন না হলে তাদেরকে বাদ দেওয়া হতে পারে।’

তবে পুরো বিষয়টি দেশের খেলাধুলার জন্য মঙ্গলজনক নয় বলেও স্বীকার করে নেন সাবেক এই কৃতি এ্যাথলেট। এদিকে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন থেকে বিজেএমসিকে চিঠি দিয়ে এসব অ্যাথলেটদের পুনরায় চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার জন্য একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে।

 

ঢাকা/রুবেল/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ