ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

উইকসের বিদায়ে থেমে গেলো ‘থ্রি ডব্লিউস’

কামরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ২ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
উইকসের বিদায়ে থেমে গেলো ‘থ্রি ডব্লিউস’

বাঁ থেকে ফ্র্যাংক ওরেল, এভারটন উইকস এবং ক্লাইড ওয়ালকোট

ফ্র্যাংক ওরেল, ক্লাইড ওয়ালকোট এবং এভারটন উইকস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই তিন মহারথীকে একসঙ্গে ‘থ্রি ডব্লিউস’ নামে ডাকা হতো। এই তিন কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ানের মধ্যে ওরেল ১৯৬৭ এবং ওয়ালকোট ২০০৬ সালে পরপারে পাড়ি জমান। 'থ্রি ডব্লিউস' এর মধ্যে একা হয়ে ছিলেন এভারটন উইকস। গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই জনক এবং ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানও ৯৫ বছর বয়সে বিদায় নিলেন।

এভারটন উইকস জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ সালে বার্বাডোজে। উইকসের বাবা ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল এভারটন ফুটবল ক্লাবের পাঁড়ভক্ত। আর তাই ছেলের নাম রাখেন এভারটন উইকস। পরবর্তীতে এই নাম নিয়ে কৌতুকও প্রচলিতও হয়েছিল ক্রিকেট মহলে।

ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার জিম লেকার (ম্যাচে ১৯ উইকেট নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটার) এই ক্যারিবিয়ানের নামের ইতিহাস জেনে বলেছিলেন, ‘ভাগ্যিস, উইকসের বাবা এভারটনের ভক্ত ছিলেন। যদি তিনি ভুলক্রমে ওয়েস্ট ব্রোমউইচ অ্যালবিওনের সমর্থক হতেন, তবে তাঁর নাম নিয়ে তো সকলে দ্বিধায় পড়ে যেত।’

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার পড়ালেখায় ছিলেন ভীষণ কাঁচা। কখনো কোনো পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। তবে পড়ালেখা না করলেও ক্রিকেট টেনেছিল এই ক্রিকেটারকে। পরিবারের অভাব ঘুচাতে কেনিংসটন ওভালে গ্রাউন্ডসম্যানের চাকরি করতেন এই ক্রিকেটার। আর সেখানে ১৩ বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। এরপর পড়ালেখা এবং কাজ না থাকায় তখন অনুশীলনে প্রচুর খাটতে থাকেন উইকস। আর সেটিই তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যায়।

১৯ বছর বয়সে বার্বাডোজের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শুরু উইকসের। শুরুতে নিজের ছায়া হয়ে থাকা উইকস সময়ের সঙ্গে দারুণ পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন বোর্ডের। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে প্রায় ৭০ গড়ে রান করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলে জায়গা করে নেন এই ক্রিকেটার।

তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সিরিজে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন উইকস। নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের আসল পরিচয় ঘটে ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টে। সেই টেস্টে ১৪১ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু। এরপর টানা পাঁচ টেস্টে করেন সেঞ্চুরি। সেসময় টানা ১৩ ইনিংসে উইকস মোট ছয় সেঞ্চুরির সঙ্গে আরও ৫টি অর্ধশতক পান। ফলে সবচেয়ে কম ইনিংসে (১২) হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে পেলেন তিনি। 

খেলোয়াড়ি জীবনের ৪৮ টেস্টে ঠিক এতটা দাপট বজায় রেখে খেলেছিলেন তিনি। ৪৮ টেস্টে ১৫ শতক এবং ১৯ অর্ধশতকে প্রায় ৫৯ গড়ে করেন ৪,৪৫৫ রান। ‘থ্রি ডব্লিউস’ এর মধ্যে বাকি দুইজনের ক্রিকেটীয় সামর্থ্য থাকলেও ব্যাটিংয়ে উইকসের কাছাকাছি ছিলেন না আর কেউ। ১৯৫১ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার হওয়া উইকসকে বলা হতো, ‘হার্ডেস্ট হিটারস’ ইন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট।

১৯৫৮ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে চোটে পড়ে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন উইকস। এরপর কোচিং পেশা ও কমেন্টেটর হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে কানাডার কোচ হিসেবে বিশ্বকাপেও গিয়েছিলেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ছিলেন আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে। ১৯৯৪ সালে এই পেশা থেকে অবসর নেন তিনি।

ক্যারিয়ারে অসংখ্যা সম্মানে ভূষিত হওয়া এভারটন উইকস ২০০৯ সালে আইসিসির হল অফ ফেইমে জায়গা করে নেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অন্যতম ‘থ্রি ডব্লিউস’ ওরেল, ওয়ালকোট এবং উইকস তিনজনের জন্মই ছিল বার্বাডোজে। তাও মাত্র ১৮ মাসের ব্যবধানে। এমনকি এই তিন ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেকও হয় বড্ড কাছাকাছি সময়ে। ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখেন তারা। শুরুতে উইকস এবং ওয়ালকোটের মধ্যে বয়সভিত্তিক দলে একত্রে থাকায় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে ওরেলের সঙ্গে পরিচয়ের পর তিনজনের মধ্যে দুর্দান্ত এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রতিভাবান এই তিন ক্রিকেটারের অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূন্যে মুগ্ধ হয়ে ইংল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যম প্রথম তাদের ‘থ্রি ডব্লিউস’ নামে আখ্যায়িত করেন।

দলীয় পারফরম্যান্সে এই তিনজনের অবদানের বাইরেও তারা বেশিরভাগ সময় থাকতেন একসঙ্গে। খেলা থাকুক আর নাই থাকুক প্রতি সপ্তাহের শনিবার এই তিন ক্রিকেটার একসাথে মিলিত হতেন। এই ধারা চলতে থাকে ১৯৬৭ সালে ওরেলের বিদায়ের আগে পর্যন্ত। ওরেল, ওয়ালকোট এবং উইকসের সম্মানে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাম্পাসে ক্যাভ হিলে ‘থ্রি ডব্লিউস ওভাল’ গড়ে তোলা হয়েছিল। আর সেখানে এতদিন ছিলেন ওরেল এবং ওয়ালকোট। তবে তাদের সঙ্গ দিতে এবার যোগ দিলেন এভারটন উইকসও। ইহলোকে থেমে গেলেও এবার ‘থ্রি ডব্লিউস’ নিশ্চয়ই প্রতি শনিবারে আবার একসঙ্গে মিলিত হবেন পরপারে।


ঢাকা/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়