বিশ্বকাপ সুপার লিগের আদ্যোপান্ত ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা
২০২৩ বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে ‘ভিশন ২০২৩’ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। হাতে আছে অন্তত আড়াই বছর। এ সময়ে ওয়ানডের সেরা দল তৈরি করে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত রাখতে চায় দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
যার শুরুটা হচ্ছে আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে। পাশাপাশি এ সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ শুরু করতে যাচ্ছে ‘আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগ’। সোজা ভাষায়, ২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণ করার লড়াই। আগামী দুই বছরে ২৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ, সরাসরি খেলতে হলে জিততে হবে অন্তত ১৭ ম্যাচ। তাহলে র্যাংকিংয়ে সেরা আটে থাকার সুযোগ হবে। নয়তো বাছাই পর্ব পেরিয়ে নাম লেখাতে হবে বিশ্বকাপে।
সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার আদ্যোপান্ত ও বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছে রাইজিংবিডি:
আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগ কী?
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আগে শুরু করেছে আইসিসি। যার ফলে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের উন্মাদনা বাড়াতে আইসিসি চালু করেছে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগ। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার সিদ্ধান্ত, টেস্টের ধাঁচেই ১৩ দলের ওয়ানডে সুপার লিগ শুরু করা হবে। গত বছর ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের ওয়ানডে দিয়ে প্রতিযোগিতা শুরুও হয়েছে। পাশাপাশি ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও ভারতও।
সুপার লিগের উদ্দেশ্য?
ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে ও সবগুলো দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আইসিসি চালু করেছে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগ। ভারতে হতে যাওয়া ২০২৩ বিশ্বকাপে ১০ দল অংশ নেবে। আয়োজক দেশ হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলবে ভারত। ৭ দল বেছে নেওয়া হবে সুপার লিগ থেকে। সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের প্রথম ৭ দল সরাসরি বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পাবে। সেই ৭ দলের মধ্যে ভারত থাকলে আট নম্বর দল বিশ্বকাপের টিকিট পাবে। বাকি দুই জায়গার জন্য সুপার লিগের শেষে থাকা দলগুলো কোয়ালিফায়ার টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হবে সহযোগী দেশগুলোর।
কারা অংশ নেবে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগে?
আইসিসির ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়া ১২টি দলের সঙ্গে থাকবে নেদারল্যান্ডস। মোট ১৩ দল খেলবে সুপার লিগে।
বাছাই পর্বে কারা থাকবে?
আইসিসির সহযোগী সাতটি দেশ- স্কটল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল, নামিবিয়া, ওমান, পাপুয়া নিউ গিনি ও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে শুরু করেছে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টুর খেলা। এই সাতটি দেশ ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৩৬টি করে ম্যাচ খেলবে। র্যাংকিংয়ে সেরা তিন দল সুপার লিগের শেষ পাঁচটি দলের সঙ্গে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশ নেবে। সেখান থেকেই দুইটি দল খেলবে ভারতের বিশ্বকাপ।
যেভাবে চলবে সুপার লিগের প্রক্রিয়া
অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে মোট আটটি সিরিজ খেলতে হবে। চারটি করে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচ। সিরিজে কমপক্ষে তিনটি ওয়ানডে থাকতে হবে। আয়োজক ও সফরকারী দেশ চাইলে ম্যাচের সংখ্যা বাড়াতে পারে। কিন্তু সেগুলো বিশ্বকাপ সুপার লিগের খেলা হিসেবে আসবে না। প্রত্যেক সিরিজে থাকবে ৩০ পয়েন্ট। প্রতিটি ওয়ানডের জন্য বরাদ্দ ১০ পয়েন্ট। ম্যাচ জিতলে বিজয়ী দল পাবে ১০ পয়েন্ট। ম্যাচ টাই বা পণ্ড হলে সমান ৫ পয়েন্ট করে পাবে দুই দল। এভাবে পয়েন্ট প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে বিশ্বকাপ সুপার লিগ।
বাংলাদেশ খেলবে কাদের বিপক্ষে?
বাংলাদেশ সুপার লিগের লড়াইয়ে চারটি করে হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজ খেলবে। প্রতি সিরিজে ৩টি করে ওয়ানডে। হোমে খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অ্যাওয়ে সিরিজ নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে।
কবে বাংলাদেশ খেলবে ২৪ ওয়ানডে?
২০২১ সালে সুপার লিগের চারটি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জানুয়ারিতেই আতিথেয়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ খেলবে ২০, ২২ ও ২৫ জানুয়ারি। তিনটি ম্যাচই বিশ্বকাপের সুপার লিগের অন্তর্ভুক্ত। মার্চে বাংলাদেশ যাবে নিউ জিল্যান্ড। সেখানে খেলবে তিন ওয়ানডে। প্রতিটি ম্যাচই বিশ্বকাপের সুপার লিগের ম্যাচ। এ বছরের জুলাইয়ের জিম্বাবুয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ। সেখানেও খেলতে ৩ ওয়ানডে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশে আসার সূচি রয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। এই সিরিজেও হবে তিনটি ম্যাচ।
২০২২ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে তিন ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডে সিরিজ বিশ্বকাপের সুপার লিগের অন্তর্ভুক্ত। মার্চ-এপ্রিলে বাংলাদেশ যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সেখানে খেলবে তিন ওয়ানডে, দুই টেস্ট। মে মাসে বাংলাদেশ সফর করবে শ্রীলঙ্কা। সেখানেও ম্যাচ হবে তিনটি এবং বছরের যে কোনও সময়ে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ খেলবে। ম্যাচগুলো ইংল্যান্ডে হওয়ার কথা।
সরাসরি খেলতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ
জাতীয় নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু মনে করেন, বাংলাদেশ খুব সহজেই সেরা সাতে থাকতে পারবে। ভারতে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলতে হলে বাছাই পর্বে খেলার প্রয়োজন হবে না। বৃহস্পতিবার রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগগুলো আসবে, সবগুলো কাজে লাগাতে হবে। ছোট-বড় দল বা সিরিজ বলে কোনও কথা নেই। আমাদেরকে প্রত্যেকের সঙ্গে ভালো খেলতে হবে। নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে আমরা খুব সহজেই সাতে থাকতে পারবো।’
বর্তমানে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ সাত নম্বরে থাকলেও বিশ্বকাপের জন্য এ র্যাংকিং কাজে আসবে না। সেজন্য বিশ্বকাপ সুপার লিগের ম্যাচে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার ভাবনা নান্নুর, ‘আমরা যদি বিশ্বকাপ সুপার লিগ লক্ষ্য করে এগিয়ে যাই তাহলে আমাদের ওয়ানডে র্যাংকিংয়েরও উন্নতি হবে। আমাদেরকে সেভাবেই নিজেদেরকে প্রস্তুত হতে হবে। বিশ্বকাপের চিন্তা করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’
ঢাকা/ফাহিম