এই ‘শিক্ষা সফরের’ শেষ কোথায়?
স্কুলের বনভোজনের প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘শিক্ষা সফর’ হিসেবে বহুল প্রচলিত। আদতে ছুটির মতো বার্ষিক এই উৎসবে কোনও ‘শিক্ষা’ আসলেও হয় কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটেও সেই ‘শিক্ষা সফর’ চলছে ২০ বছর ধরে। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেক। এরপর টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থ হলেই অধিনায়কদের মুখে একটাই বুলি, ‘এই টেস্ট থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, পরের টেস্টে কাজে লাগাবো।’
মুমিনুল হক এই মুখস্থবিদ্যার বাইরে যেতে পারেননি। সঙ্গে তিনি অনিচ্ছা করেই হোক কিংবা মুখ ফসকেই হোক, মন্তব্য করেছেন, ‘আসলেই ২০ বছর হয়ে গেছে... তবে আমার মনে হয় ওইভাবে কোনও উন্নতিই হয়নি। আর উন্নতির শেষ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (উন্নতির) সুযোগ থাকে। আমরা যতদিন খেলবো, যতদিন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবো, ততদিন উন্নতি করতে হবে।’
কিন্তু সেই উন্নতিরও তো শেষ আছে! দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। অনুশীলনে ব্যাট নিয়ে আগে নেমে পড়া কিংবা অনুশীলন শেষে তার জন্য অপেক্ষা করা হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু ক্রিকেটের সবচেয়ে নিবেদিত প্রাণ ছাত্র ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে যে দৃষ্টিকটু শটে আউট হয়েছেন তার ব্যাখ্যা কী?
ভুল করেছেন! হ্যাঁ, মুশফিক নিশ্চিত ভুল করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি কেমন ছিল সেটাও কী বিবেচনায় এসেছে? এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ভুলকেই প্রাধান্য দিতে হবে। সঙ্গে দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। কোথায় টেস্ট ক্রিকেটের ধৈর্য, কোথায় দৃঢ়তা!
২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেট শুরু করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ১২১টি। জয় মাত্র ১৪টিতে। পরাজয় ৯১টিতে। ১৬টি ড্র। ৮০ শতাংশ ম্যাচই হার! এটা স্রেফ পরিসংখ্যান। এর মাঝেও যে কত বাজে ক্রিকেট খেলেছে সেগুলো রেকর্ডবুকে লেখা থাকে না।
দুই বছর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের দুঃস্মৃতি এখনও তরতাজা। শেষ দিনের বিকেলে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মাঝে খেলা হলো ১০৪ বল। হাতে সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার ও তাইজুল ইসলামের উইকেট। অথচ সাকিব প্রথম বলেই নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন। যেমনটা ঢাকায় করেছেন মুশফিক, মুমিনুল, নাজমুল হোসেন শান্তরা। শুধু একবার করেননি। এক ম্যাচে দুইবার করেছেন। এটা কী অপরাধ নয়?
প্রশ্ন ওই একটাই, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে বাংলাদেশ যে ভুল করেছিল, সেই ভুল থেকে কী শিখলো? এই ‘শিক্ষা সফরের’ সমাপ্তি কোথায়? মুমিনুল আশাবাদীদের দলে। শেষমেশ মুখে হাসি নিয়ে বলেন, ‘আরেকটু ভাবতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। সামনেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ। আশা করি সেখানে ভালোভাবে ফিরতে পারব।’
ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম