আশিকের ক্রিকেট পাঠশালা (প্রথম পর্ব)
ব্যাটিংয়ে শারীরিক, মানসিক কৌশল ও বোধশক্তি
ব্যাটিংয়ের কিছু যাজক তন্ত্র বা পদ্ধতির শ্রেণি বিভাগ আছে, যেমন: গ্রিপ, স্টান্স, ব্যাকলিফট, ব্যাক সুইং, ডাউন সুইং, ইমপ্যাক্ট, ফলো থ্রু ও মেন্টাল-টেকটিক্যাল স্কিল।
শুরুতেই বলি ক্রিকেট একটি প্রাকৃতিক খেলা, যেমন: অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান মাইকেল বেভান ব্যাটিং বিষয়ে বলেছিলেন যে, ব্যাটিং একটি স্বভাবজাত অংশ। যদি তুমি বলটিকে গভীরভাবে কাছ থেকে দেখ তাহলে মন ও শরীর বলের দিকেই অগ্রসর হবে। স্কিল ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি আমাদের এমন এক সুন্দর ম্যাচের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের বিকশিত করবে নিজের ভাবনার অনুভবের শক্তিতে। যত বেশি ম্যাচের মধ্যে খেলোয়াড়দের নিযুক্ত রাখা যায় তত বেশি আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরশীল, নিয়ন্ত্রণ, চাপ, আবেগ এবং নার্ভ সিস্টেমের উন্নতি হবে। তাই আমরা শারীরিক, মানসিক এবং কলা কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।
১) ব্যাটিং ওয়ার্মআপ
ব্যাটিং ওয়ার্মআপ আমরা কিছু ক্রিয়াকলাপ নিয়ে আলোচনা করতে পারি। সংক্ষিপ্তভাবে, আমরা বল মাটিতে রেখে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে হকি স্টাইলে হিট এবং রান করতে পারি। ক্রমাগত হাতের ও চোখের সমন্বয় ঠিক রাখার জন্য ব্যাটের প্রতিটি পৃষ্ঠের উপর বল হিট করতে পারি। প্রথমে ব্যাটের পেটে, তারপর সাইডে। তারপর ব্যাটের মেরুদণ্ডে। হাতের চলাচল এবং দ্রুত বলকে মারার জন্য শরীরের সমন্বয় ঠিক রাখতে হবে। এজন্য বক্সিং প্যাড ব্যবহার করতে পারি। আবার স্কিপিং কার্যকর হতে পারে। যেন হৃদপিণ্ড ও পা দ্রুত চলাচল করতে পারে। সামনে, পেছনে, হাই নি সংযোগে যেন মেলবন্ধন থাকে। যে খেলাটি খেলবো সেই খেলার সঙ্গে যদি ওয়ার্মআপে মিল থাকে তাহলে বাস্তবসম্মত হয়।
*পূর্ব পরিকল্পনা খেলায় ভালো করতে সহায়তা করে।
২) ব্যাটিং প্রক্রিয়া
সব কাজেরই প্রণালী থাকে। ঠিক ব্যাটিংয়েরও প্রণালী আছে। যেমন:
ক) মানসিক এবং কলাকৌশল সমন্ধে পরিকল্পনা: পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষ দলের সম্পর্কে ধারণা, মাঠের সীমানা সম্পর্কে ধারণা, আউটফিল্ড, বোলার সম্পর্কে ধারণা, ব্যাটিং পার্টনারের সঙ্গে বোঝাপড়া।
বল করার আগে গ্রিপ স্টান্স যেমন, মাথার পজিশন, বোলারের রান আপ দেখা, বল রিলিজ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
খ) বোলার যখন বল করবে: তখন বলের দিকে কেন্দ্রবিন্দুতে নজর থাকতে হবে। শান্ত ও নির্ভয় থাকতে হবে।
গ) ডেলিভারি: বোলার বল করবে প্রতিক্রিয়া এবং সিদ্ধান্ত সময়।
ঘ) শারীরিক কাজ- আক্রমণাত্মক, রক্ষণাত্মক, বল ছাড়া, সামনে বা পেছনে।
ঙ) ফলাফল এবং প্রভাব- ক) রান খ) ডট বল গ) উইকেট
কিছু কথা ও উপাদান:
যে কাজই করবো শতভাগ মনোনিবেশের সঙ্গে করতে হবে। যেমন: শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারার মনোসংযোগ এবং কৌশল ছিল অসাধারণ। বাজে বলকে রানে পরিণত করা এবং গ্যাপ দিয়ে বল বের করা, ভারসাম্য ও মাথার পজিশন ছিল উল্লেখযোগ্য। একজন ব্যাটসম্যানের রুটিন সম্বন্ধে সচেতন থাকাটা জরুরি। এই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় যাচ্ছি, ব্যাটিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও উপভোগ্য করে তোলাই হতে পারে একজন ব্যাটসম্যানের সার্থকতা। ট্রেনিংটা উপভোগ করা, নিজের প্রতি, দলের সতীর্থদের প্রতি ও প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা, আম্পায়ার এবং দর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং খেলাটার প্রতি ভালোবাসা থাকাটা জরুরি। নিজে যা পারো তাই করো। নিজেই নিজের উন্নতির দায়িত্ব নিলে ভালো। নিজেই নিজেকে নিয়ে গবেষণা করা, নিজের ভুলের উত্তর খুঁজে বের করতে পারলে (কী করেছি, কী করা উচিত ছিল, কী করলে ভালো হবে) উন্নতি ও দক্ষতা অর্জনের পরিমাণ বেশি থাকে। পাশাপাশি দক্ষ কোচের সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হয়। গবেষণা বলছে, কোচ ও ম্যানেজার দশটি কথা বললে হয়তো তিনটি বা চারটি কাজে দেয়, কিন্তু খেলোয়াড় যখন নিজের খেলা নিয়ে ভাবে তখন দশটির মধ্যে আটটি ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
নিজেই নিজের সেরা কোচ, নিজের ভেতরে সব ক্ষমতা আছে, নিজের ধারা নিজেই বজায় রাখা আবশ্যক। জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে যেন কোনও প্রকার ভয় না থাকে। পর্যবেক্ষণ, তারপর নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করলে জ্ঞান অর্জন হয়। কোনও পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজের কাছে কিছু জায়গায় উন্নতি করা যায়। যেমন একটি গাছ বড় হয়, শক্তিশালী হয় তার নিজের বীজের শক্তিতে। কিন্তু জলবায়ু তাকে সহযোগিতা করে। ঠিক একজন কোচও তেমনি জলবায়ুর মতো একজন খেলোয়াড়কে সহযোগীতা করবে কিন্তু একজন খেলোয়াড় যদি তার নিজের শক্তি এবং কোথায় শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে তা নিয়ে ভাবে তাহলে সে আত্মনির্ভরশীল হয়। ফলাফলটাও ভালো হয়।
একটি স্বপ্ন তৈরি করে সেই স্বপ্নের দিকে এগোলে, যে লক্ষ্য থাকে সেটির শক্তি, গভীর প্রণয় এবং চেষ্টার দিক নির্দেশনা মেলে। প্রতিযোগিতা করার মনোভাব ব্যাট এবং বলের সঙ্গে, শরীর ও মনের সঙ্গে ব্যাটসম্যানকে জয়ী করে তোলে। সঙ্গে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ও ধৈর্য থাকা দরকার। কিছু উপাদান ব্যাটসম্যানকে সফল করে তোলে। এগুলো যদি ব্যাটসম্যান খাতায় লিখে মস্তিষ্কে ছবি তৈরি করে তাহলে পারফরম্যান্স ভালো করা সম্ভব। যেমন: পেস, স্পিন, গতির পরিবর্তন, গঠন, বাউন্স। এগুলো বেসিক এবং পরিকল্পনার পথ হিসেবে কাজ করে। একটি একটি বল নিয়ে ভাবনা, মনোসংযোগ, বল রিলিজ এবং খেলা, ভালো বল কী বাজে বল, মনের ভেতরে যাই আসুক তা গ্রহণ করা উচিত নয়। স্থির থাকতে হবে, নিজের আত্মবিশ্বাস এবং নিজের নিয়ন্ত্রণ যা তুমি তাই করা এবং শুধু গভীরভাবে বল দেখা আর খেলা। ইতিবাচক মনোভাব, আবেগকে সামলানো, নিজের ওপর বিশ্বাস, শরীর ও মনের ক্রিয়া এবং নিজের স্বাভাবিক ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস ব্যাটিংয়ে ভালো করার কাজে সাহায্য করে। তৈরি থাকতে হবে- শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে এবং বোধশক্তিতে। একজন অধ্যবসায়ীর জন্য ৬টি উপাদান জরুরি- ধৈর্য, অংশীদারিত্ব, চাপ, প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও শিথিল থাকা।
এখানে অংশীদারিত্ব বলতে বুঝাচ্ছি, নিজের পার্টনার বা টিম মেট যারা আছে তাদের সঙ্গে নিজের খেলা নিয়ে আলোচনা করা। তাতে খেলার উপকার যেমন হবে তেমনই আস্থা তৈরি হবে। যেমন: শচীন টেন্ডুলকার নিজের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতেন রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে। আবার রাহুল দ্রাবিড় আলোচনা করতেন ভিভিএস লক্ষ্ণণের সঙ্গে।
অনুলিখন: ইয়াসিন হাসান
ঢাকা/ফাহিম