আশিকের ক্রিকেট পাঠশালা (তৃতীয় পর্ব)
প্রথম দুই পর্বে আমরা ব্যাটিং ওয়ার্মআপ, ব্যাটিং প্রক্রিয়া, ব্যাটিং পরিকল্পনা ও জুটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ শেষ পর্বে ব্যাটিংয়ের আরও কিছু কলা-কৌশল নিয়ে আলোচনা থাকছে।
** আশিকের ক্রিকেট পাঠশালা (প্রথম পর্ব)
** আশিকের ক্রিকেট পাঠশালা (দ্বিতীয় পর্ব)
কিছু কলা-কৌশল
পরিস্থিতি অনুযায়ী, কম, স্বল্প বা উচ্চ ঝুঁকি কখন নিতে হবে সেটির জন্য সজাগ থাকা জরুরী। সিঙ্গেল বের করা বা বাউন্ডারি/ওভার বাউন্ডারির মাধ্যমে স্কোরবোর্ড সচল রাখা, ধৈর্য ও খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করা, নিজের রুটিনের মধ্যে থাকা এবং জুটি গড়ে তোলাটা মৌলিক বিষয়। বিপক্ষ দলের বোলারের কৌশল, পিচের বাউন্স ও ফিল্ডারের দক্ষতা পর্যবেক্ষণ করলে নিজের পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। তৎক্ষণাক, বল সুইং বেশি করলে স্বাভাবিক স্টান্স থেকে একটু সামনে দাঁড়ানো যেন সুইং ছোট হয়ে আসে। বল শরীরের কাছ থেকে খেলা, দেরীতে খেলা, হালকা শক্তিতে খেলা। স্পিন পিচে সফট হ্যান্ডে খেলতে হবে। শক্ত হাতে খেললে বল ওপরে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টার্ণ পিচে, টার্ণের পক্ষে খেললে ফল ভালো পাওয়া যায়। বলে ফ্লাইট বেশি হলে ডাউন দ্য উইকেটে আসা জরুরী। সুইপ শট অনুশীলন করে ম্যাচে পরিণত করলে ভালো ফল আসে।
ব্যাটিং অনুশীলন ও বল নির্বাচন
বেসিক খেলা জরুরী। কিন্তু বেসিকটা কী? প্রয়াত কোচিং কিংবদন্তি বব উলমারের মতে, পাঁচটি স্তম্ভ হলো, ক) ভালোভাবে বল দেখা, খ) মাথা স্থির রাখা যখন বল ছোঁড়া হবে, শরীর ভারসাম্য থাকবে। গ) বল কোথায় পড়বে সেটা বুঝতে পারা ঘ) পায়ের পাতা ঠিক জায়গায় রাখা ঙ) সঠিক শট নির্বাচন করা।
সঠিক অনুশীলন মানুষকে সঠিক করে তোলে। বল নির্বাচন ব্যাটসম্যানের প্রধান কাজ। যে ব্যাটসম্যানের বল নির্বাচন যত ভালো সে তত ভালো ব্যাটসম্যান। ধারাবাহিকভাবে রান করতে হলে বল নির্বাচন থাকাটা মূল চাবি। অনুশীলন হলো ম্যাচের প্রস্তুতি। তাই ম্যাচের পরিবেশ বানিয়ে এবং মনোভাব তৈরি করে অনুশীলন করলে ফলাফল ভালো হয়।
একটি ড্রিলের বিষয়ে আলোচনা করতে পারি, অফস্টাম্প কোথায় সেটিকে জানার জন্য দাখ টানতে পারি এবং উইকেটের মাঝে সমতলভাবে দাগ টেনে ব্যাটসম্যান দুই পা ভারসাম্য অবস্থায় রেখে নিজের অবস্থান থেকে একটু দূরে আরেকটি দাগ টেনে থ্রো ডাউন (একটু সাইডে) খেলতে হবে। বল যদি হাফ পিচের দাগের পেছনে পরে তাহলে একটি শর্ট বল। আর দাগের সামনে পড়লে গুড লেন্থ/ হাফ ভলি। খেয়াল রাখতে হবে ব্যাটসম্যানের সামনের বল খেলার পর যদি সামনের কাছাকাছি দাগের ওপর দিয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে শরীরের দূর থেকে খেলা হয়েছে এবং অফস্টাম্পটি কোথায় সেটি ভেবে বল ছাড়ার মনে হলে বল ছাড়তে হবে। এভাবেই ডিফেন্স, বল ছাড়া, বল মারা অনুশীলন করলে শট নির্বাচনের উন্নতি হবে।
ব্যালেন্স
শট খেলার সময় ব্যালেন্স জরুরী। যখন পা মাটিতে থাকবে বিশেষ করে যে পায়ের ওপর ভর করে শট খেলবে সেই পা যেন মাটিতে থাকে (মাথা ওই পায়ের ওপর থাকবে, যেন মাথা ও পায়ের মধ্যে যেন কোনো ডিগ্রির সৃষ্টি না হয়) । পা মাটিতে পড়ার পরই ব্যাট সুইং হবে। এটি হলো ব্যালেন্স পজিশন।
নির্ভারভাবে ব্যাটিং
শচীন টেন্ডুলকার, স্টিভ ওয়াহ বা বর্তমান সময়ে বিরাট কোহলি ব্যাটিংয়ে লক্ষ্য করার বিষয় হলো উনারা পরিস্কার মন ও চাপমুক্ত ব্যাটিং করতেন/করেন। গভীরভাবে বলের ওপর ধ্যান দেন। শ্বাসক্রিয়ার কাজ করে থাকেন। এতে দুই নাসার মধ্যে দিয়ে মেরুদন্ড এবং মস্তিষ্কে পৌঁছায় তখন শরীর ও মন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর জন্য প্রতিদিন ১০ মিনিট করে হলেও মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসে যার প্রতিফলন হয় মাঠের কাছে। কখন কী করতে হবে সেই জ্ঞান এবং বোধশক্তির মাপকাঠি বৃদ্ধি পায়।
** Do whatever you doing with the fullest possible attention**
Dream-thought-action
All the best to your success.
অনুলিখন: ইয়াসিন হাসান
ঢাকা/ইয়াসিন