আজহারউদ্দিনের সঙ্গে ‘অনলি ফাইভ মিনিটস’
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, দুবাই থেকে || রাইজিংবিডি.কম
ডিনার টেবিলে কথা বলার আবদার ফিরিয়ে বললেন, ‘বাদ মে।’ খাওয়া দাওয়া শেষ করতেই ফটোশিকারিদের ভিড়। ভিড়ের মধ্যেই আবার বললাম, 'অনলি ফর ফাইভ মিনিটস।’ ৫ মিনিট শুনে আকাশ থেকে পড়লেন! টপাটপ উত্তর, ‘জানো ভাই, ৫ মিনিটে তো একটা সেঞ্চুরি হয়ে যায়।’ এমন কথা শুধু তার মুখেই মানায়।
তার বিষয়ে বলতে গেলে দুইটি কথা বলতেই হবে, এক, ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কোনোদিন জার্সির কলার নিচে নামাননি। দুই, ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরি! ক্রিকেট নিয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন তাদের চোখের সামনে নিশ্চয়ই মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ছবিটাই ভেসে আসছে।
আবুধাবি টি-টেন লিগের দল বাংলা টাইগার্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর আজহারউদ্দিন। জার্সি উন্মোচনের জন্য এসেছেন দুবাইয়ে। ক্রিকেটের এই গ্রেটের সান্নিধ্য পেতে সেখানে ছুটে যাওয়া। ব্যস্ত আজহারউদ্দিনের দেখা পাওয়াই যেন কঠিন হয়ে উঠছে। অগত্যা না পেরে ডিনার টেবিলে প্রথম আলাপ। কিছুক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বললাম, সাক্ষাৎকারের কথা। সময় চাইলাম। ৫ মিনিটের কথা শুনে আশ্চর্য হওয়া সাবেক এই ক্রিকেটার সময় দিলেন একটু বেশি...।
রাইজিংবিডি: টি-টেনের মতো ক্রিকেটের ফরম্যাটে কেন জড়িয়েছেন? এর ভবিষ্যৎ কি?
আজহারউদ্দিন: টি-টেনের ভবিষ্যৎ ভালোই মনে হচ্ছে। তবে তার জন্য অনেক দেশের এই সংস্করণ চালু করতে হবে। যদি অন্য দেশগুলো এই সংস্করণকে গ্রহণ করে তাহলে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আবু ধাবিতে এটা পঞ্চম বছরের মতো হতে যাচ্ছে। এখন অন্য দেশগুলোরও এই সংস্করণকে গ্রহণ করতে হবে। এরপর টি-টেন ক্রিকেটও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। একটি টুর্নামেন্ট কোথাও পাঁচ বছর চলার অর্থ, এটা ভালো হচ্ছে। এমন টুর্নামেন্ট চালানোর কাজটা সহজ নয়।
রাইজিংবিডি: বাংলাদেশে আপনার খেলার কোন স্মৃতি এখনো মনে পড়ে?
আজহারউদ্দিন: অবশ্যই। বাংলাদেশে ইন্ডিপেন্ডন্ট কাপে খেলেছিলাম ১৯৯৮ সালে। যতটুক মনে পড়ে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম খেলি। এশিয়া কাপে, সঙ্গে শ্রীলঙ্কাও ছিল। আমার যেটা সবচেয়ে ভালো মনে আছে, বাংলাদেশের মানুষ পাগলের মতো দলকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট-পাগল। যেখানেই বাংলাদেশ খেলে, দেখেছি গ্যালারি দর্শকে পূর্ণ থাকে। দেশের বাইরেও এখন ওদের প্রচুর সমর্থক রয়েছে।
রাইজিংবিডি: চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভরাডুবি করেছে। নিশ্চয় দেখেছেন আপনি। কোন কারণটি মনে হয়েছে আপনার?
আজহারউদ্দিন: সবার আগে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের ক্রিকেটটা খেলতে হবে ভালো উইকেট। যেখানে ব্যাটসম্যান-বোলার সবার জন্য সুবিধা থাকবে। আমি যতদূর দেখেছি, ওরা দেশের মাটিতে মন্থর, টার্নিং উইকেটে খেলে সেখানে বোলাররা খুব ভালো করে। কিন্তু যখন ওরা দেশের বাইরে খেলে তখনই সমস্যায় পড়তে হয়। বল সেখানে টার্ন করে না, ওরা উইকেট থেকে সহায়তা পায় না, সমস্যা হয়ে যায়। আমার মনে হয়েছে, এটা এমন একটা ব্যাপার যেখানে বাংলাদেশের মনোযোগ দেওয়া দরকার।
রাইজিংবিডি: টেস্ট ক্রিকেটসহ দেশের বাইরে উন্নতি করার জন্য কী উপদেশ দিতে চান?
আজহারউদ্দিন: ভালো উইকেটই সব ধরনের ক্রিকেটে উন্নতির মূল ব্যাপার। বাংলাদেশের উইকেটে উন্নতি করতে হবে, কন্ডিশনে উন্নতি করতে হবে। ওদের ভালো উইকেটে খেলতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পেসারদের কিছু করার সুযোগ না দেওয়া হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা ততক্ষণ পর্যন্ত উন্নতি তো হবে না। উইকেট যদি টার্নিং হয়, স্পিনাররা তো ভালো বল করবেই। উইকেট তো তৈরিই সে জন্য। কিন্তু যে মুহূর্তে ওরা বাইরে যাবে এবং খেলবে, সব কিছু ওদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
রাইজিংবিডি: ক্রিকেটারদের চাপের মুখে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। আপনি কিভাবে চাপ সামলাতেন?
আজহারউদ্দিন: চাপ না নেওয়া সামলানোর সবচেয়ে ভালো উপায়। দেশের জন্য খেলা, সমর্থকদের জন্য খেলা, এখানে আবার চাপ কি। চাপ মনে করলেই চাপ, না মনে করছে কিছুই না। প্রত্যেকেই আসলে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভাবে। একেক জন্য ভেতর একেকভাবে কাজ করে। সব সময়ই ইতিবাচক থাকতে হবে। ব্যর্থতা খেলার অংশ। কখনও জিতবে, কখনও হারবে। শুধু ক্রিকেটে না জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেও কিন্তু উত্থান-পতন থাকে। কিন্তু কখনও হাল ছাড়তে হয় না। কঠোর পরিশ্রম করে যাও। তুমি নিজেই জানো কি ভুল হয়েছে, কেন ব্যর্থ হয়েছো। উন্নতি করো।
রাইজিংবিডি: ভারত অন্যতম সেরা দল। উন্নতির জন্য ভারতসহ সেরা দলগুলোর বিপক্ষে বেশি খেলা উচিৎ কী না?
আজহারউদ্দিন: সবার সঙ্গেই খেলতে হবে। সব সময় বেশি ম্যাচ খেলাও জরুরি নয় বলে আমি মনে করি। উন্নতি করতে চাইলে সেটা যে কোনো ভাবেই করা যায়। যখন ঘরোয়া ক্রিকেট হয়, সেটা হতে পারে ভালো উইকেটে। কেবল স্পিনারদের জন্য সহায়ক উইকেটে না খেলে সেখানে ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক উইকেট, পেস বোলারদের জন্য সহায়ক উইকেট রাখা যেতে পারে।
ঢাকা/ইয়াসিন