টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা কিছু মুহূর্ত
নিউ জিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে রোববার (১৪ নভেম্বর) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের ছোট্ট ফরম্যাটে এটি তাদের প্রথম বিশ্ব শিরোপা। এছাড়া পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও দুটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে অজিরা। চলুন, লম্বা সময় ধরে চলা এই টুর্নামেন্টের সেরা কিছু মুহূর্ত আর ঘটনা দেখে আসা যাক-
ডাবল হ্যাটট্রিক
আয়ারল্যান্ড নেদারল্যান্ডসকে ব্যাটিংয়ে দাঁড়াতেই দেয়নি। চার বলে ৪ উইকেট মানে ডাবল হ্যাটট্রিক করেন কুর্টিস ক্যাম্ফার। তার এই অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডস ১০৬ রানে গুটিয়ে যায়। আইরিশ বোলারের বোলিং ফিগার ছিল ৪-২৬।
আফগানিস্তানের রশিদ খান ও শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গার পর তৃতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে চার বলে ৪ উইকেট নেন ক্যাম্ফার।
ভারত গেরো কাটাল পাকিস্তান
বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান প্রথমবার বিশ্বকাপের যে কোনো ফরম্যাটে ভারতকে হারায়। ১০ উইকেটের এই জয়ে বাবর ৬৮ ও রিজওয়ান ৭৯ রানে অফরাজিত থাকেন। ১৩ বল হাতে রেখে জয়ে শুরু করে পাকিস্তান।
বাঁহাতি পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি ৩১ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে ভারতকে ৭ উইকেটে ১৫১ রানে থামান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছয়বারের দেখায় প্রথমবার ভারতকে হারায় পাকিস্তান।
ডি ককের বিরোধিতা
হাঁটু গেড়ে বসার নির্দেশের প্রতিবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেননি দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। আগের রাতে বোর্ড সিদ্ধান্ত জানায়, বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোর আগে দলের প্রত্যেককে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হাঁটু গেড়ে সংহতি জানাতে হবে। কিন্তু তা মানেননি ডি কক।
অবশ্য দুই দিন পর ক্ষমা চান তিনি এবং রাজি হন বোর্ডের সিদ্ধান্তে, ‘অন্যকে শিক্ষিত করতে ও জীবন সহজ করে দিতে যদি আমার হাঁটু গেড়ে বসা সহায়তা করে তাহলে আমি তা হাসিমুখে করব।’
শামিকে নিয়ে ট্রল, ‘মেরুদণ্ডহীন’ ভক্তদের একহাত কোহলির
পাকিস্তানের কাছে ভারতের হারের পর দলের মুসলমান খেলোয়াড় মোহাম্মদ শামিকে দায়ী করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলে ঝড় ওঠে। তাতে ক্ষোভ জানান ভারত দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
শামিকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা এই ভক্তদের ‘মেরুদণ্ডহীন’ আখ্যা দেন কোহলি। আর কারো ধর্ম নিয়ে কাউকে কটাক্ষ করাকে শোচনীয় ব্যাপার বলেন তিনি।
বাটলার মাস্টারক্লাস
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জস বাটলারের মাস্টারক্লাস ব্যাটিংয়ে বিশ্বকাপে চারে চার মার্ক পায় ইংল্যান্ড। মানে টানা চতুর্থ জয় তুলে নেয় তারা। বাটলারের অপরাজিত ১০১ রানের সৌজন্যে ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে ১৬৩ রান করে।
বাটলারের ৬৭ বলের ইনিংসে ছিল ছয় চার ও ছয় ছক্কা। তাতে করে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরির বিরল কীর্তি গড়েন ইংলিশ ওপেনার।
হাসারাঙ্গা- একটি তারকার জন্ম হলো?
শ্রীলঙ্কা সুপার টুয়েলভ থেকে বাদ পড়লেও তাদের তারুণ্য দল আশার আলো দেখিয়েছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে প্রত্যাশা বেড়ে গেছে তাদের। তা বাড়িয়ে দিয়েছেন ১৬ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডারের গড় ১০-এর নিচে।
কোচ মিকি আর্থার বলেছেন, ‘হাসারাঙ্গা একজন বিশেষ ক্রিকেটার।’
উইন্ডিজ প্রজন্মের সমাপ্তি
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। কেবল বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা জিতেছে। আর এই বিশ্বকাপ দিয়েই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ডোয়াইন ব্রাভো। ক্রিস গেইলও বলতে গেলে অবসর নিয়ে ফেলেছেন।
ব্রাভোর অবসরের ঘোষণায় অধিনায়ক কিয়েরন পোলার্ড বলেছেন, ‘প্রজন্মের শেষ।’ দুটি বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাভো ও গেইলকে সুপার টুয়েলভের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার পর গার্ড অব অনার দেন উইন্ডিজ খেলোয়াড়রা।
রিজওয়ান, হাসপাতাল বেড থেকে সেমিফাইনালে
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৬৭ রানের সেরা ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাকিস্তানের এই ওপেনারের ম্যাচটি খেলারই কথা ছিল না। অলৌকিকভাবে একাদশে ঢোকেন, কারণ আগের দুই দিন বুকের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন তিনি। তার চিকিৎসা করা ভারতীয় চিকিৎসক বিস্মিত এত দ্রুত তিনি সেরে ওঠায়।
ব্যাটে ঘুষি মেরে নিজের সর্বনাশ কনওয়ের
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬ রান করার পর আউট হন ডেভন কনওয়ে। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় হতাশায় ব্যাটে ঘুষি মারেন, তাতে ফাইনাল থেকে ছিটকে যান নিউ জিল্যান্ড ব্যাটসম্যান। কোচ গ্যারি স্টিড বলেন, ‘সে যা করেছে তা খুবই বোকামি।’
অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান
মিচেল মার্শ অপরাজিত ৭৭ রানে। তার আগে ডেভিড ওয়ার্নার করেন ৫৩ রান। দুজনের দারুণ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া সপ্তম আসরে এসে এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ জেতে। ২০১০ সালের ফাইনালে হারের আক্ষেপ কেটে গেছে তাদের, এই অর্জনকে ‘বিশাল’ বললেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল অস্ট্রেলিয়া।
ঢাকা/ফাহিম