ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

ম্যাচ বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৭:৪০, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
ম্যাচ বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশ

সকালের সেশনে প্রথম ইনিংসের বাকি তিন উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মনে হচ্ছিল লাঞ্চের পরেই অসহায় আত্মসমর্পণ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু লড়াই করেছে তারা লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে। সবশেষ দশম উইকেটে তাইজুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনের দারুণ প্রতিরোধে শেষ আশাটুকু বেঁচে ছিল। কিন্তু ৩৪ বলে ১ রানের এই জুটিটি ভেঙে যায় দিনের খেলার ৫.২ ওভার বাকি থাকতে। সাজিদ খানের বলে ৫ রান করা তাইজুল এলবিডাব্লিউ হন, রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি।

১৩ উইকেট হাতে নিয়েও সারাদিন পার করতে পারল না বাংলাদেশ। তাতে ইনিংস ও ৮ রানে হার মানে তারা। টি-টোয়েন্টির পর হোয়াইটওয়াশ হলো টেস্ট সিরিজেও। পাকিস্তান টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে পঞ্চম দিন ১৩ উইকেট তুলে নিয়ে জিতে গেল।

প্রথম ইনিংসে ৮টিসহ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাজিদ। ২৬৩ রান করে সিরিজ সেরা হয়েছেন সফরকারী দলের ওপেনার আবিদ আলী।

আরো পড়ুন:

স্কোর: ৮৩ ওভারে বাংলাদেশ ২০৫ 

প্রথম ইনিংস: পাকিস্তান ৩০০/৪ (ডিক্লেয়ার), বাংলাদেশ ৮৭

 তাইজুল-ইবাদতের দুর্দান্ত প্রতিরোধ

লেজের দুই ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ সুবিধা করতে পারলেন না। দুজনের ৪ রানের জুটি ভাঙল সাজিদ খানের বলে। খালেদ ৭ বল খেলে শূন্য রানে কট বিহাইন্ড হন। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে ২১৩ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। ৯ রান দূরে থাকতে নবম ব্যাটসম্যানের পতন হলো। তবে তাইজুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন টুকটাক ব্যাটিংয়ে শেষ জুটি ধরে রেখেছেন। কোনো রান নেননি তারা ২৪ বল খেলে। দিন শেষ করতে অন্তত আরো ৭ ওভার খেলতে হবে।

দারুণ জুটি গড়ে ফিরে গেলেন মিরাজ-সাকিব

মুশফিকুর রহিম ফিরে যাওয়ার পর মেহেদী হাসান মিরাজ ক্রিজে আসেন। অন্য প্রান্তের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বাংলাদেশকে আশার আলো দেখাতে থাকেন তিনি। কিন্তু অধিনায়ক বাবর আজম বল হাতে নিতেই সেই আলো নিভে গেল। ১৩৯ বলে ৫১ রানের জুটি ভেঙে গেল। ডিফেন্সিভ খেলতে থাকা মিরাজ এলবিডাব্লিউ হন। বাবরের আপিলে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় পাকিস্তান এবং তা কাজে লেগে যায়। ৭০ বলে ১৪ রান করেছিলেন মিরাজ। ১০ বলের ব্যবধানে সাকিবও ফিরে গেছেন। সাজিদ খান তাকে ৬৩ রানে বোল্ড করেন। ১৩০ বলের ইনিংসে ছিল ৯ চার।

সাকিব-মিরাজে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ

অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ গড়েছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০ ওভারের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তারা তুলেছে ৪৮ রান। সাকিব ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি করে ক্রিজে থিতু হয়ে আছেন। মিরাজও তাকে উপযুক্ত সঙ্গ দিচ্ছেন।

সাকিবের হাফ সেঞ্চুরিতে ব্যবধান কমে পঞ্চাশের নিচে

২৫ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দারুণ লড়াই করছে। লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটির পর দুজনই হাফ সেঞ্চুরি করতে ব্যর্থ হয়। তবে সাকিব আল হাসান হাল ধরেছেন। ৮৯ বলে ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, এর আগে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে চার হাজার রানের মাইলফলক ছোঁন। তাতে ব্যবধান কমে এসেছে পঞ্চাশেরও নিচে। ইনিংস হার এড়াতে ২১৩ রান করতে হতো বাংলাদেশকে।

মুশফিকের ২ রানের আক্ষেপে শেষ দ্বিতীয় সেশন

২ রান হলেই হতো হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু সূক্ষ্ম রান আউটে বিদায় নিতে হলো মুশফিকুর রহিমকে। নওমান আলীর বলে সাকিব আল হাসান সিঙ্গেল নিতে গেলে মুশফিক স্ট্রাইক এন্ডে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। আব্দুল্লাহ শফিকের থ্রো থেকে বল পেয়ে স্টাম্পে লাগান উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ান। মুশফিকের ব্যাট ক্রিজ পেরোলেও কোনো প্রান্ত মাটি স্পর্শ করেনি ততক্ষণে। বেশ কয়েকবার টিভি রিপ্লে দেখে তাকে আউটের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ১৩৬ বলে ৩ চারে ৪৮ রানে থামে মুশফিকের ইনিংস। শেষ হয় দ্বিতীয় সেশন। ৫২.১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৭ রানে চা বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ।

সাকিব-মুশফিকের প্রতিরোধ

ইনিংসে ব্যবধান কমানোর পথে বাংলাদেশ। ৯৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েছেন সাকিব আল হাসান। তাদের ত্রিশ ছাড়ানো জুটিতে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টায় বাংলাদেশ।

হাফ সেঞ্চুরি হলো না লিটনের

হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৫টি রান দূরে ছিলেন লিটন দাস। সাজিদ খানের বলে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সরাসরি ফাওয়াদ আলমের ক্যাচ হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৮১ বলে ৭ চারে সাজানো ছিল তার ৪৫ রানের ইনিংস। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি ছিল তার। দলীয় ৯৮ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন বাংলাদেশের।

মুশফিক-লিটনের জুটি পঞ্চাশ ছাড়াল

২৫ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়েছে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ব্যাটে। দুজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে স্বাগতিকরা।

মুশফিক-লিটনের জুটিতে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা

প্রথম ইনিংসের সেরা পাকিস্তানি বোলার সাজিদ খানকে টানা দুই ওভারে দুটি করে বাউন্ডারি মেরেছেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ জুটিও গড়েছেন তারা। মুশফিক-লিটনের অপরাজিত জুটি ৪৭ রানের। প্রথম সেশন শেষে ৪ উইকেটে ৭২ রান বাংলাদেশের।

৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করছে বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। 

দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম আবারও হতাশ করলেন। তাদের সঙ্গী হলেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও। পাকিস্তানের দুই পেসারের আগুনে বোলিংয়ে স্রেফ এলোমেলো তারা।

অভিষিক্ত জয় প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরেছিলেন। আজ হাসান আলীর করা প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খুলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এক ওভার পর হাসানের ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড জয়। তার ব্যাট ও প্যাডের বিশাল ফাঁক দিয়ে বল আঘাত করে স্টাম্পে।

রান খরায় ভোগা সাদমান আরো একবার হতাশ করলেন। আফ্রিদির ইনসুইং ডেলিভারীতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ওপেনার। ১২ রানেই সাজঘরে বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। 

উইকেটের ক্ষুধায় মগ্ন থাকা হাসান অলীর দ্বিতীয় শিকার মুমিনুল হক। বাংলাদেশের অধিনায়ক ডানহাতি পেসারের বলে দারুণ এক কভার ড্রাইভে চার পেয়েছিলেন। পরের বলে আদায় করেন ২ রান। কিন্তু তৃতীয় বলে প্রতিশোধ নেন পাকিস্তানের পেসার। তার সোজা বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন মুমিনুল। এর পরপরই শান্ত আফ্রিদির বলে দ্বিতীয় গালিতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৬ রানে। 

ইনিংস হার এড়াতে বাংলাদেশকে আরও ১৮৬ রান করতে হবে। 

ফলোঅনে বাংলাদেশ, দেশের মাটিতে সর্বনিম্ন রানে অলআউটের লজ্জা

ফলোঅন এড়াতে ২৫ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। হাতে উইকেট ছিল ৩টি। রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে পাকিস্তানের বোলাররা বাংলাদেশের জন্য কাজটা কঠিন করে তোলে। 

পাকিস্তান ৪ উইকেটে ৩০০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। বাংলাদেশের ফলোঅন এড়াতে দরকার ছিল ১০১ রান। চতুর্থ দিন ৭ উইকেটে ৭৬ রান তুলে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। আজ ১১ রান যোগ করতেই শেষ ৩ উইকেট। বাংলাদেশ অলআউট ৮৭ রানে।

দেশের মাটিতে এটি বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান। ২০০২ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ৩১.৫ ওভারেই ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। 

আজ মাত্র ২৮ মিনিট ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। আগের দিন ৭০ মিনিটে চূর্ণ বিচূর্ণ বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডার। তাইজুল ইসলাম দিনের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন। স্পিনার সাজিদের বলে এলবিডব্লিউ হন। সাকিব রিভিউ নিয়ে সঙ্গীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু রিভিউ বাংলাদেশের পক্ষে আসেনি। পরের ওভারে শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে উইকেট উড়ে যায় খালেদ আহমেদের। কোনো রানই যোগ করতে পারেননি লোয়ার অর্ডার এ ব্যাটসম্যান।

সাকিব উইকেটে একা হয়ে যান। সাজিদ খানকে এক চার, একটি ডাবল ও দুইটি এক রানে দলের পুঁজি বাড়ান। কিন্তু শেষমেশ সাজিদের শিকারে পরিণত হন সাকিব। আজকের ১১ রানের ১০ রানই আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৫৪ বলে ৩৩ রানে আউট হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। 

অফস্পিনার সাজিদের পকেটে গেছে ৮ উইকেট। পাকিস্তানের হয়ে টেস্টে চতুর্থ সেরা বোলিং এটি। এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো বোলারের এটি সেরা বোলিং। স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলও ৮ উইকেট পেয়েছিলেন। তবে রান দিয়েছিলেন ১০৮ রান। 

সাকিবের ব্যাটে তাকিয়ে বাংলাদেশ

ঢাকা টেস্টে ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ। বুধবার পঞ্চম দিনে বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে ফলোঅন এড়াতে করতে হবে আরো ২৫ রান। পাকিস্তান ৪ উইকেটে ৩০০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। মাত্র ২৬ ওভারের খেলায় ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ৭৬। ৭০ মিনিটে চূর্ণ বিচূর্ণ বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডার। 

শুধু ফলোঅন কেন, বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টটি এখন হাতছাড়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ। ২২৪ রানে এখনও পিছিয়ে স্বাগতিকরা। পাকিস্তানের বোলাররা যেভাবে দাপট দেখাচ্ছে তাতে তাদের পাল্লাই ভারি। মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা যেভাবে নিজেদের উইকেট আত্মাহুতি দিয়েছেন তাতে তাদের নিবেদন নিয়ে বিরাট প্রশ্ন উঠেছে। মিরপুরে টেস্ট খেলতে নেমেছেন নাকি টি-টোয়েন্টি, সেই গোলকধাঁধায় আটকে বাংলাদেশ। 

সাকিবই এখন বাংলাদেশের আশা ভরসা। ৩২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৩ রান নিয়ে দিন শুরু করবেন। তার সঙ্গী তাইজুল ইসলাম। এরপর ব্যাটিংয়ে আসবেন খালেদ ও ইবাদত। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর রেকর্ড নেই বললেই চলে। মিরপুরে আজ কি নতুন কিছুর দেখা মিলবে নাকি হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাবে বাংলাদেশ? উত্তরটা জানতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। 

চারদিন গুমোট আবহওয়ায় টেস্ট এগিয়েছে। আজ সকাল থেকেই রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া। ঝকঝকে দিনে বাংলাদেশের ইনিংসটাও ঝলমলে হয় কিনা দেখার।  

ঢাকা/ইয়াসিন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়