ভুলে ভরা ব্যাটিং ও ২৪ মিনিটের দুঃস্মৃতিতে আশায় গুড়ে বালি
আর মাত্র ২৪ মিনিট টিকলেই হতো। তাহলে গোধূলিলগ্নে আশার সূর্য ডুবত না। আরেকটি টেস্ট হারের লজ্জাও পেতে হতো না বাংলাদেশকে। কিন্তু নিজেদের ভুলে ভরা ব্যাটিংয়ে শেষ দিন দুই ইনিংসে ১৩ উইকেট হারিয়ে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেন মুশফিক, সাকিব, মুমিনুলরা।
দিনের শুরু আর শেষটায় হুবুহু মিল। সাজিদ খান দিনের দ্বিতীয় ওভারে তাইজুলকে এলবিডব্লিউ করে ফেরালেন। সাকিব রিভিউ নিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হোন। দিনের শেষে আবার সেই সাজিদ আঘাত করলেন তাইজুলের প্যাডে। এবার তাইজুল রিভিউ নিলেন। কিন্তু এবারো বাঁচলেন না।
দিনের শুরুতে তাইজুলের আউটে ফলোঅনের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে খালেদ ও সাকিবের আউটে বাংলাদেশ ফলোঅনে। আর দিনের শেষে তাইজুলের আউটে শেষ ঢাকা টেস্ট! আরেকটি ইনিংস ব্যবধানে হার সঙ্গী হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে।
৪ উইকেটে ৩০০ রান করে পাকিস্তান ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানে অলআউটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেল ২০৫ রানে। ইনিংস ও ৮ রানের হারে টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপের দুই ম্যাচেই হারল বাংলাদেশ।
পাকিস্তান আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছিল আজ ১৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেবে। হুমকিটা দিয়েছিলেন স্পিনার সাজিদই। কথা মতো কাজ করলেন। আগের দিনের ৬ উইকেটের সঙ্গে আজ প্রথম ইনিংসে নিলেন আরো ২ উইকেট। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার আরো ৪টি। সব মিলিয়ে দুই দিনে ১২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে একাই হারালেন এই অফস্পিনার।
দিনের শুরুতে ফলোঅন এড়ানোর জন্য ২৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। ৭৬ রানে দিন শুরু করে বাংলাদেশ যোগ করতে পারে ১১ রান। যার ১০ রানই আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। তাইজুল ও খালেদ রানের খাতা খোলার আগে আউট হন। সাকিব একা লড়াই করে চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন।
২১৩ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে শুরু করে আবারো পিছিয়ে পড়ে। ২৫ রান তুলতেই নেই বাংলাদেশের ৪ উইকেট। জয়, সাদমান, মুমিনুল, সাদমানরা হতাশ করে ফেরেন সাজঘরে। এরপর খানিকটা প্রতিরোধ। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে-পরে মুশফিক ও লিটনের ব্যাটে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা শুরু। যে কোনো উপায়ে ম্যাচটা বাঁচানো যাবে! কিন্তু নিজেদের ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া ব্যাটসাম্যানরা কি সহজে অতীত ভুলতে পারে?
স্পিনার সাজিদকে পুল করতে গিয়ে লিটন মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৪৫ রানে। ভাঙে মুশফিক ও তার ৭৩ রানের জুটি। এরপর সাকিব ও মুশফিকের নির্ভরযোগ্য ব্যাটিং দেয়াল হয়ে দাঁড়াল। তাদের চোয়ালবদ্ধ ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বাঁচিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সাকিবের দ্যুতি ছড়ানো ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানও এলোমেলো হয়ে যায়। সঙ্গে মুশফিকের নিখুঁত, দৃঢ়চেতা ইনিংস ভুলিয়ে দেয় প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা।
কিন্তু এ ম্যাচে তো বাংলাদেশের ভুলে ভরা। ভুল ছাড়া কি ম্যাচ আগানো সম্ভব। ১৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার যাদের তাদের দিয়েও এমন ভুল কিভাবে সম্ভব। চা-বিরতির ৫ বল আগে সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট মুশফিক। ডাইভ দিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু তার ব্যাটের কোনো অংশ ক্রিজের ভেতরে ছিল না। সেখানে থেমে যায় ১১৪ বলে ৪৯ রানের জুটি।
মিরাজকে নিয়ে সাকিবের আবার লড়াই শুরু। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানের সঙ্গে এবারের ৩৪ রানে সাকিব ছাড়িয়ে গেলেন ৪ হাজার রানের মাইলফলক। সাদা পোশাকে দ্রুততম ৪০০০ রান ও ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। কিন্তু তার রেকর্ডের ম্যাচটা বিবর্ণ করলেন মিরাজ।
মুশফিকের আউটের পর সাকিব বেশ সতর্ক ছিলেন। প্রতি আক্রমণ করেছেন শতভাগ নিশ্চিত হয়েই। মিরাজ তাকে সঙ্গও দিচ্ছিলেন। কিন্তু বাবর আসার পর সব এলোমেলো। মিরাজ প্রথম ইনিংসে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। এবার বাবরকে একই শট খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার বল করতে এসে বাবরকে উইকেট উপহার দিলেন মিরাজ। সাকিব এক ওভার পরই সাজিদের শার্প টার্ন ডেলিভারিতে বোল্ড। সর্বোচ্চ ৬৩ রান করা সাকিব ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের আশার সূর্যও ডুবে যায়। ৪৭ বলে শেষ ২ উইকেট হারিয়ে ভুলে ভরা ব্যাটিংয়ের সমাপ্তি।
এ টেস্ট পুরোটাই ছিল বৃষ্টির পেটে। প্রথম দিন ৩৩ ওভার খেলা হয়নি। দ্বিতীয় দিনে খেলা গড়িয়েছে মাত্র ৩৮ বল। তৃতীয় দিন কাভারই তোলা হয়নি। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনেই যা খেলা হলো। পাকিস্তান পুরোপুরি ৩ সেশন ব্যাটিং করে হারিয়েছে ৪ উইকেট। বাংলাদেশ চার সেশনে দুবার অলআউট। বাংলাদেশ কি সত্যিই টেস্ট খেলতে পারে? সেই প্রশ্নটা তোলা হয়েছে প্রথম ইনিংসের পরপরই।
ঢাকা/ফাহিম