আক্ষেপে শুরু, জয়োচ্ছ্বাসে শেষ
করোনাভাইরাসের কারণে ২০২১ সালে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত দফায় দফায় ছিল লকডাউন। সে কারণে অন্যান্য অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনও ছিল স্থবির। তারপরও ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে পড়তে যাওয়া ২০২১ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অনেক ঘটনা রয়েছে। বিশেষ করে দেশের ফুটবলে। সেখানে যেমন সাফল্যের গল্প আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতার গল্পও। কোনো বিচার-বিশ্লেষণের নিরিখে নয়, চলুন আরো একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক দেশের ফুটবলের উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহে:
নেপালে ত্রিদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার্স-আপ বাংলাদেশ
মার্চে নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। যেখানে স্বাগতিক নেপাল ছাড়াও অংশ নেয় কিরগিজস্তান ও বাংলাদেশ। ২৩ মার্চ উদ্বোধনী ম্যাচে কিরগিজস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। কুরবারবাজ উলুলু বাইয়ামানের আত্মঘাতী গোলে বাংলাদেশ জয় পায়। ২৭ মার্চ পরের ম্যাচে নেপালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ফাইনালে উঠে। ফাইনালে নেপালের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে রানার্স-আপ হয় জামাল-সুফিলরা।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
অক্টোবরে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত হয় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। যেখানে বাংলাদেশসহ অংশ নেয় ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। ১৬ বছর পর ফাইনালে ওঠার প্রত্যয় নিয়ে এই টুর্নামেন্টের শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে জামাল ভূঁইয়ারা হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে। এরপর ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ১০ জন নিয়েও করে ড্র। তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে পাত্তা না পেলেও বাংলাদেশের ফাইনাল খেলার রাস্তা খোলাই ছিল। সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে হারাতে হতো নেপালকে। ওই ম্যাচে সবকিছু প্রত্যাশামাফিক এগোচ্ছিল। ৯ মিনিটে সুমন রেজার গোলে নেপালের বিপক্ষে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই লিড তারা ধরে রাখে ৮৮ মিনিট পর্যন্ত। এরপর পরিকল্পিত এক সর্বনাশা পেনাল্টি ও তার আগে এক ব্যাক পাস ভুলে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ হয়। নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২১ আসর থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। তাতে ১৬ বছর পর ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।
এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের ভরাডুবি
অক্টোবরে উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব। বাছাইপর্বের ‘ডি’ গ্রুপে উজবেকিস্তান, সৌদি আরব ও কুয়েতের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হার মানে কুয়েতের কাছে। পরের ম্যাচে স্বাগতিক উজবেকিস্তান ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ দলকে। আর শেষ ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরে দেশে ফেরার বিমান ধরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল।
বাফুফের ‘এলিট ফুটবল একাডেমি’
ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে বাছাই করা অনূর্ধ্ব-১৫ বছর বয়সী ৫১ জন ফুটবলারকে নিয়ে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ যাত্রা শুরু করে ‘এলিট ফুটবল একাডেমি’। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি এটির উদ্বোধন করেন। এখান থেকে ভালো মানের ফুটবলার উঠে আসার প্রত্যাশা কথা জানান অতিথিরা। অবশ্য একাডেমির ক্ষেত্রে বাফুফের এটিই প্রথম উদ্যোগ ছিল না। ২০১৪ সালে ঘটা করে সিলেট বিকেএসপিতে একাডেমির কার্যক্রম শুরু করেছিল বাফুফে। কিন্তু ফিফা টাকা দেয়া বন্ধ করে দেওয়ায় সেটি আর চলেনি।
এরপর ২০১৯ সালে বেরাইদেতে ফর্টিস গ্রুপের সঙ্গে একাডেমি করেছিল বাফুফে। অনেক প্রত্যাশা ছিল এই একাডেমি নিয়েও। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা দেয় এবং সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল ২০২১, বসুন্ধরা চ্যাম্পিয়ন
করোনার কারণে ২০২০ সালে প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ায়নি। তবে ২০২১ সালে ১৩টি দল নিয়ে মাঠে গড়ায় এই লিগ। আগস্টে চার ম্যাচ হাতে রেখে চ্যাম্পিয়ন হয় বসুন্ধরা কিংস। শেষ পর্যন্ত ২৪ ম্যাচ থেকে ৬৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সমান ম্যাচ থেকে ৫২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে রানার্স-আপ হয় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। আর ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয় ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।
স্বাধীনতা কাপ
ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপে শক্তিশালী বসুন্ধরা কিংসকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী লিমিটেড। তাও ৩১ বছর পর। সবশেষ ১৯৯০ সালে তারা স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতেছিল। এরপর আর জিততে পারেনি। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করে ৮ ডিসেম্বর।
মতিঝিলের বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না, অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুসহ মোট ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তবে বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তাদের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরা এনায়েতুর রহমান খান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতারুজ্জামানসহ আরো অনেকে।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ
বাংলাদেশের ফুটবলে ২০২১ সালে সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ২২ ডিসেম্বর। এদিন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ৮০ মিনিটে বাংলাদেশ দলের আনাই মোগিনি গোল করে বাংলাদেশকে শিরোপা উপহার দেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হন শাহেদা আক্তার রিপা।
ফেডারেশন কাপ
বাংলাদেশের ফুটবলের ২০২১ সাল শেষ হবে ফেডারেশন কাপ দিয়ে। ২৫ ডিসেম্বর ১২টি দল নিয়ে এই টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াবে। আর শেষ হবে ৮ জানুয়ারি।
এ ছাড়াও ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু হয়। যে কারণে আগস্টের পর এই স্টেডিয়ামে কোনো ফুটবল ম্যাচ হয়নি।
ঢাকা/রিয়াদ