টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জনের হাতছানি
অস্থিরতা বললেও কম হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট যাচ্ছিল ব্যাক গিয়ারে। নেতিবাচক পারফরম্যান্সে ওলটপালট মনোবল। অযাচিত আলোচনায় চারপাশ জুড়ে বিতর্ক। আত্মবিশ্বাসের রেণু ছড়ায় না। ধ্বংসস্তুপে ঢাকা পড়ে থাকে পারফরম্যান্স। কেউ লড়াই করে, তো কেউ ডুবিয়ে দেয়। কেউ মাথা উচুঁ করে দাঁড়ায়, তো কেউ লড়াইয়ের আগেই সরে যায়।
টালমাটাল অবস্থায় থাকা ক্রিকেটাঙ্গন হঠাৎ পেল আলোর দেখা। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের নীল আকাশ যতটা স্বচ্ছ, যতটা পরিষ্কার, সাদা পোশাকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সও ততটা উজ্জ্বল। সেই শুরুর দিন থেকে সময় যত বেড়েছে, সেশন যত গেছে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ততটা ঔজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, ক্রিকেট পুরোটাই মানসিকতার খেলা, ছন্দের খেলা। দেশের মাটিতে পাকিস্তানের কাছে দুই টেস্টে বাজেভাবে হারের পর বিদেশে গিয়ে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে বাংলাদেশ এতটা যে ভালো করবে, কেউ প্রত্যাশা করেনি। বরং প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে যে লড়াই করেছে, তা অভাবনীয়।
প্রবাদ আছে, শেষ ভালো তো সব ভালো। বাংলাদেশ এখন শেষের মিশনেই দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডের লিড ১৭ রান। হাতে আছে ৫ উইকেট। স্বাগতিকদের অল্পরানে গুটিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইতে বিজয়ের পতাকা উড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে অতিথিদের। সেই পথেই এগোতে চায় বাংলাদেশ। দলের টিম ডিরেক্টর তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ড্রয়ের চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দিন ইবাদতের ছোট্ট এক স্পেলে বাংলাদেশের শারীরিক ভাষা পাল্টে গেছে। দলটা এখন নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকে হারানোর স্বপ্নে বিভোর।
যদি তা করতে পারে, দেশের টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ আগেও টেস্ট জিতেছে। জিম্বাবুয়ের মাটিতে কিছুদিন আগেই টেস্ট জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। আবার শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ জিতেছিল নিজেদের শততম টেস্ট।
এবার এশিয়ার বাইরে বাংলাদেশ প্রথমবার প্রথম ইনিংসে পরে ব্যাটিং করে লিড নিয়েছে। কিন্তু বোলিংয়ে লিড কিন্তু অনেক আগেই পেয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ রফিক যে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন সেই ম্যাচেই লিড পেয়েছিল। এছাড়া দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারানো এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করার কীর্তি তো রয়েছেই।
এসব ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় অর্জন অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। নিউ জিল্যান্ড বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটের রাজা। তাদেরকে তাদের মাটিতেই হারানো যে কোনো দলের জন্যই কঠিন। কঠিন এ কাজটা করতে পারলে মুমিনুল হক ও তার দল নিশ্চয়ই অমরত্বের স্বীকৃতি পাবেন। বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়। আরেকটি সোনালি দিন টালমাটাল ক্রিকেটাঙ্গনে আনন্দের পরশ নিয়ে আসতে পারে। মুমিনুলরা পারবেন তো দেশকে আনন্দে ভাসাতে?
ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম