নিউ জিল্যান্ড দুর্গে বাঘের থাবা, বিজয় দেখলো বিশ্ব
কাক ডাকা ভোরে শত রঙের ছড়াছড়ি; হাজার প্রজাপতির ওড়াউড়ি! শহর জেগে না ওঠায় ফেসবুকেই অভিনন্দনের জোয়ার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়, আনন্দের দিন আসল চুপিসারে। দিনের আলো ফোটার আগেই। টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সফলতম দল নিউ জিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। যে আনন্দ আগুনের স্ফূলিঙ্গ হয়ে ভেসে বেড়ায় ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রাণের মনের আয়নায়।
নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান এতোটাই বিব্রত যে, নূন্যতম লড়াইয়ের আশা ভেলা ভাসাতেও সাহস করতেন না কেউ। তবুও মুমিনুল হক গত বছরের শেষ দিন বার্তা দিয়েছিলেন, ‘নতুন বছর নিয়ে রোমাঞ্চিত। শুরু ভালো হলে বাকিটাও ভালো যাবে।’
মাউন্ট মঙ্গানুইতে নামার আগে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ৯ টেস্টের ৫টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার বাংলাদেশের। বাকি ৪টিতে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটা থাকলেও আশা দেখানোর মতো কিছু নয়। অথচ সেই দলটাই নিউ জিল্যান্ডের ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অপারজিত থাকা রেকর্ডে বাধ সাধলো।
নিউ জিল্যান্ড দুর্গে বাঘের থাবা। যেনতেন বাঘ নয়, এ যেন হিংস্র এক বাঘ। তারুণ্যের শক্তিতে দাপিয়ে বেড়ানো বাঘ। যারা লড়তে জানে। যারা জিততে জানে। প্রতিপক্ষের ডেরায় ঢুকে আক্রমণ করতে জানে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার দলের সঙ্গে নেই। নেই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। অভিজ্ঞদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম থাকলেও আড়াল হয়ে ছিলেন।
টেস্টের রাজা নিউ জিল্যান্ড দুর্গে মুমিনুলের সঙ্গী অনভিজ্ঞ এক দল। যারা একেবারেই নতুন, একেবারেই অনভিজ্ঞ। অথচ পাঁচদিনের তীব্র লড়াই শেষে তারা বুঝিয়ে দিলো, ভেতরে জয়ের তাড়ণা, সেরা হওয়ার প্রচণ্ড জেদ থাকলে বাঁধা হতে পারবে না কেউ।
জয়ের কাজ বাংলাদেশ করে রেখেছিল চতুর্থ দিনই। ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে বুধবার মাঠে নেমেছিল নিউ জিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানে পিছিয়ে থাকায় কার্যত তাদের স্কোর ৫ উইকেটে ১৭! সেই রানের সঙ্গে আজ যোগ করতে পারে মাত্র ২২ রান। তাতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০।
সাদমান ও শান্তর উইকেট হারালেও বাংলাদেশ কক্ষপথ থেকে ছিটকে যায়নি। ইতিহাস গড়েই ২২ গজ ছাড়ে বাংলাদেশ।
গতকালের ৪ উইকেটের সঙ্গে ইবাদতের আজকের শিকার আরও ২টি। দিনের দ্বিতীয় ওভারে রস টেইলরকে যেভাবে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলিয়ে বল নিয়ে বোল্ড করেছেন তা ট্রেডমার্ক হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। ওই উইকেটে বাংলাদেশের কোনো পেসার ৯ বছর পর টেস্টে ৫ উইকেটের স্বাদ পান। এরপর জেমিনসনের উইকেট নিয়ে সাফল্যভাণ্ডার ভারী করেন।
তাসকিন থেমে থাকেননি। তারও শিকার ২ উইকেট। শেষ উইকেটটি নেন মিরাজ। ৪০ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় অনায়েসে। সাদমান ও শান্ত সাজঘরে ফিরলেও মুমিনুল সতীর্থ মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাস গড়েই মাঠ ছাড়েন।
টেস্টের শীর্ষ ৫ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় কিংবা ড্র শুধুই দেশের মাটিতে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ হারিয়েছে আতিথেয়তা দিয়ে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করেছে ঘরের মাটিতেই। এবার শীর্ষ ৫ দলের একটির বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলো দেশের বাইরে। অনবদ্য এক অর্জনে নিজেদের একধাপ উঠিয়ে নিলো বাংলাদেশ।
সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা। গত আসরে বাংলাদেশ একটি ম্যাচ ড্র করেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এবার দ্বিতীয় সিরিজে বাংলাদেশ হারালো টেস্ট রাজা নিউ জিল্যান্ডকে। এছাড়া দেশের বাইরে এটি বাংলাদেশের ৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়।
যে জয় দেখলো গোটা বিশ্ব। মাঠে ব্যাট-বলে নির্দয় শাসনে বাংলাদেশ ভাঙল নিউ জিল্যান্ড দুর্গ।
ঢাকা/আমিনুল