সিরিজ জয়ে অভিনন্দন, তবে পুলকিত নই
শেষ ম্যাচ হারলেও সিরিজ ট্রফি বাংলাদেশের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজ্ঞ চার খেলোয়াড়- তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ; সঙ্গে ফর্মে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত নিচের র্যাংঙ্কিংয়ে থাকা আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করবে এটাই প্রত্যাশিত ছিল। তিন ম্যাচের সিরিজ জিতল ২-১ এ।
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মামুলি সংগ্রহ তাড়া করার চেষ্টায় ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লেজে-গোবরে অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। ৭ ও ৮ নম্বরে ব্যাটিং করতে আসা আফিফ হোসেন ও মিরাজের অতিমানবীয় মাইলফলক স্থাপন করা ব্যাটিং বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে জয় এনে দেয়। দ্বিতীয় ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে উঁচু মানের ব্যাটিং-বোলিং করেই। সিরিজ জয় ও ২০ পয়েন্ট অর্জন চলমান আইসিসি ওয়ানডে লিগে বাংলাদেশকে চূড়ায় তুলে দিলো। শেষ ম্যাচটিতে জয় পেলে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত হতো, ওয়ানডে র্যাংঙ্কিং ৬ হতো। কিন্তু হলো না।
বিশ্ব অঙ্গনে এখনো নবীন আফগানিস্তান ওয়ানডে খেলে কালেভদ্রে। দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। ভারত সরকার দেরাদুনে ওদের প্রশিক্ষণ অনুশীলনের সুবিধা দিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো খেলে ভারতে বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সুন্দর পরিকল্পনার কারণে আফগানিস্তান থেকে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার ক্রমাগত উঠে আসছে। কিছু খেলোয়াড় বিশ্বমানের। টি-২০ লিগে ওদের বিশাল কদর। বাংলাদেশ কিন্তু অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েও এখন টেস্ট ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টিতে তাদের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
শেষ ম্যাচের কথায় আসি। কেন বাংলাদেশ সবুজ ঘাসের প্রলেপ দেওয়া স্বয়ং সহায়ক উইকেটে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলো? প্রথমে বোলিং করলেই তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল সুবিধা নিতে পারতেন। এমনিতেই আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল ওদের। আগে ব্যাটিং করার ঝুঁকি নিয়ে ধসে পড়ল বাংলাদেশ। রশিদ-নবী আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন। মামুলি টার্গেট হেসে খেলে অর্জন করে উজ্জীবিত আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য চাঙ্গা হয়ে গেল।
সচরাচর দেশের মাটিতে এই ধরনের উইকেটে বাংলাদেশ খেলতে অভ্যস্থ নয়। অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের টেকনিকে গলদ। আমি তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহকে দায়ী করব। একই উইকেটে লিটন স্বভাবসুলভ স্বাচ্ছন্দে ব্যাটিং করতে পারলে কেন তারা এমন ব্যাটিং করলেন? মাহমুদউল্লার উপস্থিতিতে কেন নবীনরা অস্থির হয়ে তিন তিনটি রান আউটের শিকার হলেন? ১৯২ রান করেই বাংলাদেশ যেন হেরে গেল। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে গাছাড়া ভাব। শরীরি ভাষায় আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত।
আফগানিস্তান অনেকটা হেসে খেলেই ম্যাচটি ৭ উইকেটে জিতে নিলো। রশিদ ও নবী যে উইকেটে সুবিধা নিলেন, সাকিব-মিরাজ কেন পারলেন না? কেন মিরাজকে এত পরে আক্রমণে আনা হলো? কেন মাহমুদউল্লাকে বোলিংয়ে আনা হলো না? এগুলো কি কৌশলে ভুল? গোটা সিরিজে তামিমকে নড়বড়ে দেখা গেছে। সাকিব চেনারূপে ক্রিকেট খেলতে পারেননি। মুশফিক প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচে ব্যর্থ। তাহলে কি বাংলাদেশ ক্রিকেটে সিনিয়রদের যুগের অবসান হতে চলেছে?
সিরিজ জয়ে অভিনন্দন। তবে আমি পুলকিত নই। বাংলাদেশের মতো পর্যাপ্ত ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেলে আফগানিস্তান অনেক এগিয়ে যাবে। তরুণ বোলার ফজলহক ফারুকি, ব্যাটসম্যান রহমানুল্লাহ গুরবাজ অনেক প্রতিশ্রুতিপূর্ণ। দলটির আগামী দিন অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ক্রিকেট বিশ্লেষক।
ঢাকা/ফাহিম