১০ উইকেটের জয়ে সিরিজ শ্রীলঙ্কার
সংক্ষিপ্ত স্কোর: দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ২৯/০ (৩ ওভার)
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৬৯/১০ (৫৫.৩ ওভার)
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৫০৬/১০ (১৬৫.১ ওভার); লিড: ১৪১ রান
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ- ৩৬৫/১০ (১১৬.২ ওভার) মুশফিক ১৭৫*।
আবারো ব্যাটিং ধস, আবারো ব্রিবতকর হার
তৃতীয় বা চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর রেকর্ড খুব কম। হাতেগোনা দুয়েকটি সাফল্য যাই এসেছে সেগুলোতেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স উঠানামা ছিল। হতশ্রী পারফরম্যান্সে আরেকটি বিব্রতকর হারকে সঙ্গী করলো বাংলাদেশ।
পঞ্চম দিনে ম্যাচ বাঁচাতে মাটি কামড়ে উইকেটে টিকে থাকা লাগত। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব্যাটিং করা লাগত। দেখানো লাগত শতভাগ নিবেদন। কিন্তু সকালের দারুণ সেশন কাটানোর পর বিরতি থেকে ফিরে এলোমেলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং ধসে আবারো শেষ বাংলাদেশের লড়াই।
মাত্র ২০ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা। এর আগে ২৩ রানে হারিয়েছিল শুরুর ৪ উইকেট। বারবার এই ব্যাটিং ধসেই একের পর এক হারকে সঙ্গী করছে বাংলাদেশ।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রে এটি বাংলাদেশের অষ্টম ম্যাচে ষষ্ঠ হার। শ্রীলঙ্কা ষষ্ঠ ম্যাচে তৃতীয় জয় পেল। ৪০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে।
১০ উইকেটের জয়ে সিরিজ শ্রীলঙ্কার
সিরিজ জিততে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৯ রান। ৩ ওভারেই তা করে ফেলে শ্রীলঙ্কা, কোনো উইকেট না হারিয়ে। ১০ উইকেটের জয়ে দুই ম্যাচের পর টেস্ট সিরিজ ১-০ তে জিতল সফরকারীরা। ওশাডা ফার্নান্দো ২১ ও দিমুথ করুণারত্নে ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
শ্রীলঙ্কাকে ২৯ রানের টার্গেট দিলো বাংলাদেশ
ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৬৯ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। মধ্যাহ্ন বিরতির পর মাত্র ৫৩ মিনিটেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। ৫ উইকেট হাতে রেখে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বিরতির পর আশিথার তোপে স্রেফ এলোমেলো বাংলাদেশ।
লিটন ও সাকিবকে ফেরানোর পর ডানহাতি পেসার নেন তাইজুল ও খালেদের উইকেট। সব মিলিয়ে আশিথা পেলেন ৬ উইকেট। অপর উইকেটটি নেন রামেশ মেন্ডিস। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কাকে করতে হবে ২৯ রান। কাজটা তাদের জন্য মামুলি বলার অপেক্ষা রাখে না।
অবশেষে শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের উইকেট
ম্যাচে ৮৮ ওভার পর শ্রীলঙ্কার কোনো স্পিনার পেলেন উইকেট। রামেশ মেন্ডিস মোসাদ্দেককে এলবিডব্লিউ করে পেলেন সাফল্য। এর আগে শ্রীলঙ্কার কোনো স্পিনারদের উইকেটের জন্য এতোটা সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার নিয়মিত দুই স্পিনার প্রবীন জয়াবিক্রমা ৩৮ ও রামেশ মেন্ডিস ১৪ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। এছাড়া ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৬ ও দিমুথ করুণারত্নেন ৪ ওভার বোলিং করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে রামেশ ১১, জয়াবিক্রমা ১৩ ও ধনাঞ্জয়া ২ ওভার হাত ঘুরান। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যানভেরায় ৭১ ওভার উইকেট পাননি শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা।
রিভিউ নিয়েও ‘বাঁচলেন’ না মোসাদ্দেক
রামেশ মেন্ডিসের শর্ট বলে টার্ণ ছিল। মোসাদ্দেক পেছনের পায়ে ভর করে পুল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল মিস করেন। তার প্যাডে আঘাত করলে শ্রীলঙ্কার আবেদনে আম্পায়ার জো উইলসন সাড়া দেন। রিভিউ থাকায় সুযোগ নিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। কিন্তু তাতে উইকেট ‘বাঁচাতে’ পারেননি। ২২ বলে ৯ রান করে ফেরেন তিনি। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া এ ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো করতে পারলেন না।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ টিকলেন না সাকিব
লিটনের পর আশিথা ফার্নান্দোর শিকার সাকিব। ডানহাতি পেসারের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে টাইমিং মেলাতে পারেননি। বল তার ডানহাতের গ্লাভসে লেগে উইকেটের পেছনে যায়। ডিকাভেলা সহজ ক্যাচ ধরে সাকিবকে সাজঘরের পথ দেখান। ৭২ বলে ৫৮ রান করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফিরেছেন। ম্যাচ বাঁচাতে তিন ঘণ্টা ব্যাটিংয়ে থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। উইকেটের চারিপাশে দারুণ সব শটে ইনিংসটি মেরামত করলেও ১৪১ মিনিটেই শেষ তার ইনিংস। বাংলাদেশ এখন বিপদে। মোসাদ্দেকের নতুন সঙ্গী তাইজুল। লিটনের সঙ্গে সাকিবের জুটি ছিল ১০৩ রানের। এ জুটি ভাঙার ১৯ বলের ব্যবধানে সাকিব আউট হলেন।
বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে আউট লিটন
বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে সাজঘরে ফিরলেন লিটন দাস। আশিথা ফার্নান্দোকে ফিরতি শটে ক্যাচ দেন তিনি। ডানে ঝাঁপিয়ে পড়ে তালুবন্দি করেন আসিথা। ১৩৫ বলে ৩ চারে ৫২ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন। শুরুতে মুশফিকুর রহিম ফেরার পর সাকিব-লিটন জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। দুজনেই ফিফটি করে দারুণ কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের গড়া শতাধিক রান পার হয়ে যায়। লিটনের আউটে ভাঙে ১৬৪ বলে ১০৩ রানের জুটি। বাংলাদেশের শেষ ভরসা মোসাদ্দেক-জুটি। ম্যাচ বাঁচাতে হলে ক্রিজে টিকে থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
ইনফর্ম লিটনের আরেকটি ফিফটি, জুটির সেঞ্চুরি
দারুণ ধারাবাহিকতায় থাকা লিটন বিরতির পর তুলে নিয়েছেন আরেকটি ফিফটি। ২ রান দূরে থেকে বিরতিতে গিয়েছিলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে ফিফটি তুলে নেন। ক্যারিয়ারের এটি তার ১৩তম ফিফটি। এদিকে ওই ওভারেই তাদের জুটির রান একশ ছাড়িয়েছে। মুশফিক আউট হওয়ার পর দল যখন বিপদে ছিল তখন হাল ধরেন। প্রতি আক্রমণে গিয়ে দুজনই খুব সাবলীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের স্কোর বড় করছেন।
শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশের লিড, সাকিবের ফিফটি
প্রথম সেশনে কোনো উইকেট হারানোর পরিকল্পনা না থাকলেও মুশফিককে দিনের শুরুতে হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলকে আর বিপদে পড়তে দেয়নি লিটন ও সাকিব। তাদের জুটিতে ভর করে শ্রীলঙ্কার রান পেরিয়ে লিডও নিয়েছে বাংলাদেশ। মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৪৯। লিড ৮ রানের। ৩৩ ওভারের লম্বা সেশনে ১১৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। যা এই পাঁচদিনে এক সেশনে সর্বোচ্চ।
৪৪তম ওভারের শেষ বল। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বল ডিপ এক্সট্রা কভারে পাঠিয়ে ২ রান নিলেন লিটন। ওই ২ রানে শ্রীলঙ্কার রান পেরিয়ে লিড নেয় বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সাকিব ২৭তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন। ৬১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫২ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে থাকতে বিরতিতে গেছেন লিটন। ১২৭ বলে ৪৮ রান করেছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন ১৫৩ বলে ৯৬ রান করেছেন।
২ হাজার রান পেরিয়ে লিটন
৩৮তম ওভারের ঘটনা। স্পিনার জয়াবিক্রমার বল কভারে পাঠিয়ে প্রাণ্ত বদল লিটনের। এই ১ রানে লিটন ছুঁয়ে ফেলেন ২০০০ রানের মাইলফলক। ৫৬ ইনিংসে সাদা পোশাকে দুই হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন লিটন। তার থেকে কম ইনিংস খেলে এ মাইলফলক পেরিয়েছেন মুমিনুল ও তামিম। মুমিনুলের লেগেছিল ৪৭ ইনিংস। তামিমের ৫৩ ইনিংস।
সাকিব-লিটনের ব্যাটে প্রতিরোধ
পঞ্চম দিনের প্রথম ঘণ্টার খেলায় মুশফিকের উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে লিটনকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েছেন সাকিব। এরই মধ্যে তাদের জুটির রান পঞ্চাশ পেরিয়েছে। বাংলাদেশের দলীয় রানও তিন অঙ্ক ছাড়িয়েছে।
লিটন ২২ গজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিজের স্বভাবসুলভ শট খেলে চাপ সামলে নিচ্ছেন। সাকিবও তাই। ওয়ানডে মেজাবে ব্যাটিং করছেন তিনি। দুজনের ব্যাটিংয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকলেও তা কতক্ষণ টিকে থাকে সেটাই দেখার। এই জুটির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। জুটি বড় হলে বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
বলের লাইন মিস করে বোল্ড মুশফিক
মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত উইকেট না হারানোর কথা বলেছিলেন সাকিব। কিন্তু আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের জুটি টিকল ৩৭ মিনিট। মুশফিকের বিদায়ে সকালের সেশনেই উইকেট হারাল বাংলাদেশ। পেসার রাজিথার বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন প্রথম ইনিংসে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক। বল স্কিড করে ভেতরে ঢুকেছিল। শরীরী ভাষায় আলগা মনোভাবও ছিল। তাতেই বিপদ ডেকে আনেন। ৩৯ বলে ২৩ রানে ফেরেন মুশফিক। নতুন ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান।
রিভিউ নিয়ে টিকে রইলেন লিটন
১৯তম ওভারের শেষ বল। পেসার রাজিথার লেগ স্টাম্পের উপরের বল ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন লিটন। ব্যাট-বলের রসায়ন জমেনি। বল তার প্যাডে লেগে যায় উইকেটের পেছনে। শ্রীলঙ্কার কট বিহাইন্ডের আবেদনে আঙুল তোলেন জো উইলসন। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন লিটন। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল পেরিয়ে যাওয়ার পর ব্যাট চালিয়েছেন লিটন। তার প্যাডে লেগে বল যায় ডিকাভেলার হাতে।
সাকিবের তিন ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ
মুশফিক ও লিটন দিন শুরু করেছেন। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর প্রথম ইনিংসে মুশফিক ও লিটন ২৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন। আজ তাদের থেকে এমন কিছুর প্রত্যাশা করছেন সাকিব। তাদের পর স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন তিনি ও মোসাদ্দেক।
পঞ্চম দিন তিন সেশন কাটিয়ে দিতে এই চারজনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলকে। কাজটা কঠিন। তবে সাকিব হাল ছাড়বেন না। জানালেন, লিটন ও মুশফিক লাঞ্চ পর্যন্ত খেলতে পারলে পরবর্তী তিন ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেবেন। এজন্য চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব্যাটিং করতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পারবেন তো সাকিব?
কে হাসবে শেষ হাসি?
বাংলাদেশের ৬ উইকেট তুলে নিতে পারলেই মিরপুর শের-ই-বাংলায় শতভাগ জয়ের রেকর্ড অক্ষুন্ন রাখবে শ্রীলঙ্কা। এই মাঠে আগে তিনবার টেস্ট খেলে তিনবারই বাংলাদেশকে হারিয়েছে তারা। তাদের জন্য আজকের কাজটা সহজ। সারাদিনে ৯০ ওভারেরও বেশি খেলা হবে। ৬টি ম্যাজিকাল ডেলিভারিতেই জয় নিশ্চিত। তাতে দিমুথ করুণারত্নেরা জিতে নেবে টেস্ট সিরিজও।
বাংলাদেশের জন্য কাজটা খুব কঠিন। সারাদিন মাটি কামড়ে ২২ গজে পড়ে থাকতে হবে। ১০৭ রানে এখনও পিছিয়ে আছে। রানের জন্য নিশ্চিতভাবেই খেলবে না স্বাগতিকরা। উইকেট আগলে রাখার কাজটাই বাংলাদেশের আসল পরীক্ষা। অতীতে এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ বাঁচানোর খুব একটা রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। হাতেগোনা দুয়েকবার যা হয়েছে সেসব সুখস্মৃতিতে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে বাংলাদেশ।
ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম