‘নতুন বাঘ’ নাসুমকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তামিম-ডমিঙ্গো
খুব আক্ষেপ করেই তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘সাকিব একাদশে থাকলে নাসুমকে আমরা খেলাতে পারি না।’ সাকিব পুরোপুরি অলরাউন্ডার। নাসুম কেবল মাত্র স্পিনার। তাই বাড়তি একজন বাঁহাতি স্পিনারকে খেলিয়ে বিলাসিতা করতে পারে না টিম ম্যানেজমেন্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নাসুম সেই সুযোগটি পেয়েছেন।
সাকিব ছুটিতে থাকায় নাসুমের মাথায় ওঠে ওয়ানডে ক্যাপ। ২২ টি-টোয়েন্টি খেলার পর তিনি পান ওয়ানডে ম্যাচের স্বাদ। কী দুর্দান্তই না ছিল প্রথম ম্যাচ। ৮ ওভার বোলিং করে ১৬ রানে ছিলেন উইকেটশূন্য। মেডেন ওভার ছিল ৩টি। নামের পাশে উইকেট থাকতেও পারতো। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যান শামারাহ ব্রুকস তার বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। দ্বিতীয় ম্যাচে একই পুনরাবৃত্তি। এবারও ধ্রুপদী বোলিংয়ে বাঁহাতি স্পিনার ছড়ান মুগ্ধতা। শাই হোপকে ফিরিয়ে উইকেটের খাতা খুলতে পারতেন। এবারও সেই রিভিউ বাধায় অপেক্ষা দীর্ঘ হয় নাসুমের। কিন্তু সেই অপেক্ষা ফুরায় ব্রুকসের উইকেট দিয়ে। তার আর্ম ডেলিভারিতে বোল্ড হন স্বাগতিক ব্যাটসম্যান।
উচ্ছ্বসিত নাসুমের ব্যতিক্রমী উদযাপন নজর কেড়েছে সবার। এক হাত আড়াআড়ি রেখে আরেক হাত নিচে খাড়াভাবে ধরে ছুটতে থাকেন তিনি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে নাসুমের উদযাপন নিয়ে ম্যানেজার নাফীস ইকবাল বলেন, ‘উদযাপনের মানে হলো ‘আ নিউ টাইগার ইজ কামিং’… এটা হলো ‘T’ (হাত দিয়ে দেখিয়ে), টি-তে টাইগার, এটিই ওই উদযাপন।’ ব্রুকসের উইকেটের পর নাসুম একই ওভারে সাজঘরের পথ দেখান শাই হোপ ও নিকোলাস পুরানকে।
এবার ১০ ওভারে ৪ মেডেনে ১৯ রানে নাসুমের শিকার ৩ উইকেট। তাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক তামিম তাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেছেন, ‘দুর্দান্ত বোলিং করেছে। সাকিব থাকলে সে ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। আমার মনে হয়, সে অবিশ্বাস্য রকমের ভালো বোলিং করেছে। কন্ডিশনকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে সে। আমি মনে করি, সে সত্যিই দারুণ বোলিং করেছে।’
অধিনায়কের সুরে সুর মিলিয়েছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও। ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘নাসুমের নিয়ন্ত্রণ দুর্দান্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অনেক খেলেছে সে। সে স্মার্ট বোলার। ব্যাটসম্যানদের একদমই জায়গা দেয় না, আলগা বল করে না। সে জানে কখন লেংথ টেনে বল করতে হবে, কখন একটু ধীরে বল করতে হবে।’
শুধু বোলিংই নয়, ডমিঙ্গো নাসুমের ফিল্ডিংয়ের প্রশংসা করেছেন। অজানা এক তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ‘আরেকটি ব্যাপার হলো, বছর দেড়েক আগে যখন সে শুরু করেছিল, আমার দেখা সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ ফিল্ডার ছিল সে। তবে এখন সে দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন হয়ে উঠছে। ওকে নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। ওয়ানডেতে সুযোগ খুব একটা পায়নি, কারণ সাকিব আছে, সঙ্গে মিরাজকে খেলানো হয়। তবে এখানে এসে সে দারুণভাবে সুযোগটি লুফে নিয়েছে।’
বাঁহাতি স্পিন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোহাম্মদ রফিক, মাঞ্জারুল ইসলাম রানা, আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানরা বাংলাদেশকে উল্লাসে ভাসিয়েছেন বহুবার। এবার নাসুমের পালা। উত্তরসূরি হয়ে শুরুটা ভালো করেছেন সিলেটের তরুণ। তাহলে তো বলাই যায়, ‘আসছে নতুন এক বাঘ’।
ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম