দাপুটে জয়ে ৪০০তম ওয়ানডে রাঙালো বাংলাদেশ
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। ধবলধোলাইয়ের লজ্জা উঁকি দিচ্ছিল। মাঠে, মাঠের বাইরে নানা আলোচনায় গোটা দলটের অ্যাপ্রোচ ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। হারারেতে শেষ ওয়ানডে জিম্বাবুয়ে জিতে নিলে তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের ওপর প্রবল চাপ পড়ত। তার আগেই সতর্ক বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ে মাঝারিমানের পুঁজি পেলেও বোলারদের দ্যুতিময় বোলিংয়ে শেষ ম্যাচ জয় দিয়ে রাঙালো বাংলাদেশ। সঙ্গে ওয়ানডেতে নিজেদের ৪০০তম ম্যাচও জিতে নিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে শেষ ওয়ানডেতে ১০৫ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করলো তামিমের দল।
এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজও বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল।
টস জিতে এবারও জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। প্রথম ওয়ানডেতে ৩০৩ এবং দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৯০ রান তোলা বাংলাদেশের এবারের পুঁজি মাত্র ৯ উইকেটে ২৫৬। আগের দুদিন বড় স্কোর পেয়েও জিততে না পারা বাংলাদেশ শেষ হাসিটা কি হাসবে?
পথের কাঁটা ছিলেন সিকান্দার রাজা। দুই ওয়ানডেতে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অতিথিদের কড়া জবাব দেন তিনি। আজ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। অভিষিক্ত পেসার ইবাদত হোসেনের ইনসুইং ইয়র্কার ফেরানোর কোনো উত্তর তার জানা ছিল না। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাকের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের জয়সূর্যও ডুবে যায় তখনই।
৮৩ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। সেখানে শেষ উইকেটে নউয়ুচি ও গাভারার ৫৮ বলে ৬৮ রানের জুটি বাংলাদেশের জয় বিলম্ব করে। মোস্তাফিজ যখন ৩৩তম ওভারে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন তখন জিম্বাবুয়ের রান ১৫১।
বাংলাদেশের জয়ের নায়ক আফিফ হোসেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৮১ বলে ৮৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন। ৬ চার ও ২ ছক্কায় তার সাজানো ইনিংসটি না হলে বাংলাদেশ খাদেই পড়ে যেত। এছাড়া টপ অর্ডারে রান পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ৭১ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৬ রান করেন তিনি।
ইনিংসের মধ্যভাগে ৩৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তার আজকের ইনিংসটি ছিল ৬৯ বলে সাজানো। ৬৯ বলে ৪১টিই ডট বল খেলেন তিনি। শুরুর দিকে তামিম ১৯ রানে রান আউটে কাটা পড়েন। রানের খাতা খুলতে পারেননি শান্ত ও মুশফিক।
আগের দুই ম্যাচ লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু আজ তাদের ব্যাটিং ছিল ছন্নছাড়া। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে পথ হারায় স্বাগতিকরা। বিশেষ করে ষষ্ঠ ওভারে রাজাকে হারানোর পর তারা জয়ের পথ থেকে সরে যায়। প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পাওয়া ইনোসেন্ট কাইয়াও ভালো করেননি। ১০ রানে ফেরেন সাজঘরে। অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ক্লিভ মাডান্ডে ২৪ রান করেন। এছাড়া সর্বোচ্চ ৩৪ রান আসে গাভারার ব্যাট থেকে। ৬ চার ও ১ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখেন লেট অর্ডারে ব্যাটিং করা এ ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের সেরা বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। এছাড়া ইবাদত ও তাইজুল পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। মিরাজ ও হাসান মাহমুদ ১টি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন।
অসাধারণ জয়ে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা এড়ালেও এই সিরিজ থেকে অনেক কিছু নিশ্চয়ই গ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ। কোনো প্রতিপক্ষকে হাল্কা করে দেখার যে সুযোগ নেই সেটাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা হতে পারে। সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে ভরাডুবির কারণে ম্যাচ যে হাতের মুঠোয় থেকে বেরিয়ে যেতে পারে সেটাও হাতে কলমে প্রমাণ পেল।
ক্রিকেট বিশ্বের দশম দল হিসেব বাংলাদেশ আজ ৪০০তম ওয়ানডে খেললো। এর আগে নিজেদের এক’শ ও দুই’শতম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। হেরেছিল তিন’শতম ম্যাচ। চার’শতম ম্যাচ জিতে দিনটি স্মরণীয় করে রাখল তামিম অ্যান্ড কোং। এই সিরিজের ব্যর্থতা ভুলে সামনে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
ইয়াসিন/আমিনুল