ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

চেনা মাঠে ভরাডুবি, কোথায় ছিল গলদ?

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ১১ অক্টোবর ২০২২  
চেনা মাঠে ভরাডুবি, কোথায় ছিল গলদ?

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২। নারী এশিয়া কাপের আগের দিন। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ দল ছিল প্রাণচঞ্চল, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, চোখে-মুখে ট্রফি জয়ের নেশা। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেই দিলেন, ‘নিজেদের ঘরে ওভাবে চ্যালেঞ্জ আমরা মনে করতেছি না।’

বাংলাদেশ এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। নিজেদের মাঠে খেলা। আর সিলেটের এই মাঠেই নারী ক্রিকেটাররা নিজেদের গড়েছেন ভেঙেছেন। তাইতো জ্যোতিদের আত্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়েছিল সকলে। 

ঠিক ১১ দিন পর। অক্টোবর ১১, ২০২২। নেই সেই আগের প্রাণচঞ্চলতা। এখন শুধু হারানোর বেদনা। দুপুর গড়াতে বিষণ্ণ চেহারায় সিলেট মাঠ ছাড়তে হচ্ছে টিম হোটেলের উদ্দেশ্যে। সেই চেনা সিলেট স্টেডিয়ামে এখন অন্যরা খেলবে। আর মেয়েদের শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে। 

আরো পড়ুন:

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শুরু এবং শেষ দিনের চিত্র বলে দেয় জ্যোতিদের যেতে হয়েছে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে। থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে এশিয়া কাপে সূচনা হয়েছিল উড়ন্ত। এরপর চার ম্যাচ খেলে তিনটিতে হার। আজ শেষ ম্যাচ প্রকৃতির লীলাখেলার উপর ছেড়ে দিতে হয়েছে। প্রকৃতি আজ সহায় হয়নি। কোথায় ছিল গলদ?

ঘরের মাঠে এমন দুরাবস্থা কেন জানতে চাইলে মেয়েদের কোচ একেএম মাহমুদুল ইমন রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘মেয়েরা টেকনিক কাজে লাগাতে পারেনি। মাঠে তাদের পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার পেছনে আমি যেটাকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখি, তিন বিভাগ একসঙ্গে কাজ করতে পারেনি।’

সহায় হয়েছে সেই থাইল্যান্ডের যারা এর আগে প্রকৃতির বিচারেই বিশ্বকাপ খেলা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অন্যের উপর কিংবা প্রকৃতির উপর কেন নির্ভর করতে হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। আগেরবারের চ্যাম্পিয়নদের কেন এমন ভরাডুবি?

এশিয়া কাপ সংশ্লিষ্ট সাবেক এক নারী ক্রিকেটার মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি তাদের খেলা দেখেছি। আগেরবার চ্যাম্পিয়ন দলটিই প্রায় এবার খেলেছে। তাদের সামর্থ্য ছিল। মোটাদাগে যেটা আমার কাছে মনে হলো তারা ঘরের মাঠে খেলার চাপটা নিতে পারেনি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারা খেলেছে, এবারও চ্যাম্পিয়ন হতে হবে এমন চাপ নিয়ে খেলার কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করি।’

থাইল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নদের মতো শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ পাকিস্তানের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। ৭০ রানে অলআউট হয়ে ৯ উইকেটে হার। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আবার ৮৮ রানের জয়ে কামব্যাক করলেও ভারতের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়েছে। হার ৫৯ রানে। আর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বোলিংয়ে দুর্দান্ত করার পরও ব্যাট হাতে ব্যর্থ। ৭ ওভারে ৪২ রান নিতে পারেননি জ্যোতিরা। হারতে হয়েছে ৩ রানে। এক ওভারে ৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মূলত হারাতে হয়েছে ম্যাচটি।

কোচের মতো সাবেক এই নারী ক্রিকেটারের বলেছেন, ‘কিছু ম্যাচে পরিকল্পনার অভাব দেখেছি। অথচ ঘরের মাঠে এখানে আমাদেরই এগিয়ে থাকার কথা ছিল। গৎবাঁধা নিয়মে চলেছে। এভাবেতো সফল হওয়া যায় না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের একটু ভিন্নভাবে ব্যাটিং অর্ডার নামাতে পারলে এভাবে হারতে হতো না।’

লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যর্থতার কারণ বলতে গিয়ে কোচ বলেন, ‘আমাদের সবার সিদ্ধান্ত ছিল সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচটা ক্লোজ করবো। জ্যোতি ক্রিজে থাকা পর্যন্ত এগোচ্ছিল। ষষ্ঠ ওভারে আমরা ৪ উইকেট হারালাম, মাত্র ৩ রান নিলাম। এখানে পিছিয়ে গেছি। এই ওভারে আর মাত্র ৩ রান নিতে পারলে আমরা জিতে যেতাম। আমি আগেই বলেছি মাঠে পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করার দায়িত্ব মেয়েদের, তারা করতে পারেনি।’

তাহলে কি পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাব ছিল? এভাবে জিতে আসার অভ্যাস এখনো গড়ে উঠেনি মেয়েদের? ঠিক এমনটা মনে করেন না ইমন, ‘আমরা পর্যাপ্ত অনুশীলন করি, কোন মোমেন্টের কিভাবে খেলতে হবে সব আলোচনা হয়। অনুশীলনও করি। একমাত্র ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা আমাদের সমানই। তবুও আমরা পারিনি। বোলিংটা ভালো হলেও ব্যাটাররা তাদের সামর্থ অনুযায়ী খেলতে পারেনি। বেশিরভাগ উইকেটই গেছে ঠিকভাবে ব্যাট না চালানোর কারণে। কিন্তু অনুশীলনে আমরা ঠিকভাবেই সব করি।’

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়