সেঞ্চুরিয়ন থেকে হোবার্ট: চলছে তাসকিনের তোপ
সেঞ্চুরিয়ন থেকে হোবার্ট। আফ্রিকা থেকে ওশেনিয়া। মাঝে ভারত মহাসাগর। দূরত্ব ১০ হাজার কিলোমিটার। তাসকিন আহমেদের গল্পে এই দুই মহাদেশের হিসেব নিকেষ কেন?
২০২২ সালের ২৩ মার্চ। সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ এনে দেন বাংলাদেশকে। আফ্রিকার মাটিতে ৫ উইকেট শিকারি প্রথম বাংলাদেশি। তাসকিনের কৃতিত্ব লাল সবুজের অঙ্গন ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্ব দরবারে।
ঠিক ৭ মাস পর। এবার অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। মঞ্চ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ১৫ বছর ধরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় দেখেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিংটা বরাবরের মতো ভালো হয়নি। তাসকিন এলেন ত্রাতা হয়ে। প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে ভড়কে দেন। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত এক জয়।
অনেকে তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন। যেখানে সকলে শেষ ভেবে নিয়েছেন ঠিক সেখান থেকে তাসকিনের শুরুটা হয়েছে। শেষ থেকে শুরু। নিজেকে ভেঙেছেন গড়েছেন, ব্যাক্তিগত কোচ হতে শুরু ট্রেনার তাসকিন এখন বাংলাদেশের পেসারদের জন্য রোল মডেল।
তাসকিনের পুনর্জন্মে কলকাঠি নেড়েছেন দেশি কোচ মাহবুব আলী জ্যাকি। রাইজিংবিডিকে জ্যাকি বলেন, ‘তাসকিনের মতো আমি কাউকে ডাইহার্টেড দেখতেছি না। ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট যেভাবে আগাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে ভালো পজিশন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে, আমার কাছে মনে হয় বোলিং ইউনিটের প্রত্যেকটা ক্রিকেটার এভাবে যদি নিজের দায়িত্বগুলো নেয়, আমারা আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো।’
সেঞ্চুরিয়ন আর হোবার্ট নয় শুধু। তাসকিনের তোপ দেখেছে পালেকেল্লে কিংবা হারারে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পেসারদের সাফল্য মলিন। এক তাসকিন যেন এখন সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন চলছে তাসকিনের রাজত্ব। সাদা বলে মোস্তাফিজুর রহমানকে বিবেচনা করা হয় বাংলাদেশের প্রধান বোলার হিসেবে। ধীরে ধীরে সেই জায়গা নিয়ে নিচ্ছেন ডানহাতি তাসকিন।
হোবার্টে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ডাচদের ১৪৫ রান টার্গেট দেয়। কন্ডিশন ও উইকেট বিবেচনায় এই রান কঠিনই ছিল। তাসকিন আরও কঠিন করে তোলেন। নেদারল্যান্ডস অলআউট হয় ১৩৫ রানে। তাসকিন ২৫ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে তাসকিন এর আগে কখনো দুই উইকেটের বেশি পাননি।
হোবার্টের উইকেট বিবেচনায় তাসকিন টেস্ট লেন্থে বোলিং করেছেন। ম্যাচ শেষে সেই গল্পটা তাসকিন নিজেই শুনিয়েছেন। ‘আমি মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক মতো করার জন্য চেষ্টা করেছি। প্রথম ইনিংসে নেদারল্যান্ডসের বোলিং দেখছিলাম। ভালো মুভমেন্ট ছিল। ক্যারিও ছিল। সে জন্য আমি টেস্ট ম্যাচ লেংথে বল করেছি। দুই দিকে বল মুভ করাতে চেয়েছি। এটাই কাজে দিয়েছে।’
বাংলাদেশের পেস বোলিং গুরু সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত অ্যালান ডোনাল্ড। তার হাত ধরে তাসকিন হচ্ছেন আরও ক্ষুরধার। দুই দিকেই বল মুভ করা শিখছেন ডোনাল্ডের কাছ থেকেই। তাসকিন বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি যে কোনো জায়গা থেকে যেন দলের জয়ে সাহায্য রাখতে পারি। বোলিংয়ের সময় আমার কবজির অবস্থান ভালো হচ্ছে। আমি দুই দিকেই বল মুভ করাতে পারি। আমি উন্নতিতে মনোযোগ দিচ্ছি। আমি বিশ্বমানের বোলার হতে চাই।’
ম্যাচ শেষে তাসকিনের প্রশংসা করেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। না করে উপায় কি? অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভালো কিছু করতে হলেতো পেসারদের জ্বলে ওঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাসকিন সেটা ভালো করেই জানেন, তাইতো মেলে ধরেছেন নিজেকে নিজের সেরাটা দিয়ে।
পরিসংখ্যান দিয়ে লেখাটা শেষ করা যাক। অভিষেকের পর ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তাসকিন টি-টোয়েন্টিতে ১৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১২ উইকেট, আর ২০২১-২২ সালে নিয়েছেন ২৩ ম্যাচে ২০ উইকেট। টেস্ট ও ওয়ানডেতেও ঠিক একইভাবে চলছে তাসকিনের তোপ।
ঢাকা/ইয়াসিন