১৯৬২: ফুটবল মাঠে এমন সহিংসতা কেউ দেখেনি আগে
মোহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম
সহিংসতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে ম্যাচটিকে `ব্যাটল অব সান্তিয়াগো` নাম দেওয়া হয়
আয়োজক: চিলি, দল: ১৬, ভেন্যু: ৪, ফাইনাল: ব্রাজিল ও চেকোস্লোভাকিয়া, জয়ী: ব্রাজিল (৩-১), ইতিহাস: প্রথম পর্বে ইতালির বিপক্ষে এক প্রকার জোর করেই জয় ছিনিয়ে নেয় স্বাগতিক চিলি। সহিংসতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে ম্যাচটিকে ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’ নাম দেওয়া হয়। ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান পেলে।
এর আগের দুইবার ইউরোপে হয় বিশ্বকাপ। টানা তৃতীয়বারও ইউরোপে আয়োজনের কথা ভেবেছিল ফিফা। তখনই বিশ্বকাপ বর্জনের হুমকি দেয় ল্যাতিন আমেরিকার দলগুলো। ফলে আবার বিশ্বকাপ ফেরে ল্যাতিনে। আয়োজক হিসেবে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু কি মনে করে চিলিকে স্বাগতিক ঘোষণা করে ফিফা।
বিশ্বকাপ আয়োজনের দুই বছর আগে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয় চিলিতে- ৯.৫ মাত্রার। প্রায় বিধ্বস্ত হয় দেশটির অবকাঠামো। লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া চিলির চারদিকে শোকের মাতম আর দুর্ভিক্ষের ছায়া। স্টেডিয়ামগুলো হয় ক্ষতিগ্রস্ত। তবে পিছু হটেনি চিলি। স্টেডিয়াম পুনঃনির্মাণ করে, সফলভাবে আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় দেশটি। যদিও কিছু নিন্দিত ঘটনাও পিছু ছাড়েনি।
বাছাই পর্বে ৫৬টি দেশের মধ্যে লড়াই হয়। যথারীতি বেছে নেওয়া হয় ১৬টি দেশ। ইউরোপ থেকে সুযোগ পায় ১০টি দেশ – পশ্চিম জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি, চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বুলগেরিয়া। ল্যাতিন আমেরিকা থেকে খেলে ৫টি দেশ – ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, চিলি ও কলোম্বিয়া। এছাড়া সুযোগ মেলে মেক্সিকোর। এই বিশ্বকাপে শক্তিশালী কোনো দলই বাদ পরেনি বাছাই পর্বে।
চিলির ৪টি স্টেডিয়ামে মূল পর্বের মোট ৩২টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আগের বিশ্বকাপের মতোই ১৬টি দলকে চার ভাগে গ্রুপ করা হয়। গ্রুপ পর্ব কিংবা নকআউট পর্ব নিয়ে কোন বিতর্ক না হলেও মাঠের খেলায় বিতর্ক ছড়ায় এ বিশ্বকাপ। প্রথম পর্বে ইতালির বিপক্ষে এক প্রকার জোর করেই জয় ছিনিয়ে নেয় স্বাগতিক চিলি। সহিংসতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে ম্যাচটিকে 'ব্যাটল অব সান্তিয়াগো' নাম দেওয়া হয়। দুই দলই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে আহত করার খেলায় মেতে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত ইতালিকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল পুলিশি প্রহরায়। নিন্দিত এ ম্যাচটি চিলি জিতে নেয় ২-০ গোলে। চিলির গায়ের জোর অব্যাহত ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত।
ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান পেলে। তার উপর সেমিফাইনালের ম্যাচে ব্রাজিলের প্রাণভোমরা গারিঞ্চাকে বহিষ্কার করা হয় প্রায় বিনা কারণেই। তবে এর আগেই জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। ফলে ব্রাজিল ম্যাচটি জিতে নেয় ৪-২ গোলে। নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের মাঝে বহিষ্কার হলে তখন পরের ম্যাচেও বহিষ্কার থাকার কথা। তবে গারিঞ্চাকে বহিষ্কারের জোরালো কারণ না থাকায় পরের ম্যাচ খেলতে দেওয়া হয়। ফাইনালে গোল না করলেও তার শৈলীতেই চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেন গারিঞ্চা। এ কারণেই এ বিশ্বকাপকে বলা হয় গারিঞ্চার বিশ্বকাপ।
সপ্তম বিশ্বকাপে মোট গোল হয় ৮৯টি।
এ আসরেই প্রথমবারের মতো গোল গড় ৩ এর নিচে (২.৭৮) আসে। এরপর আর কখনোই যা ৩ এর উপরে উঠতে পারেনি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ৬ জন খেলোয়াড়। ব্রাজিলের গারিঞ্চা ও ভাভা, চিলির লিওনেল সানচেজ, হাঙ্গেরির ফ্লোরিয়ান আলবার্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেলেন্তিন ইভামভ এবং যুগোস্লাভিয়ার দ্রাজান জেরকোভিচ প্রত্যেকেই ৪টি করে গোল দেন।
তারা//