সংখ্যায় অবিশ্বাস্য পেলে
একটা প্রবাদ আছে, ‘পেলের আগে ‘১০’ ছিল কেবলই একটি সংখ্যা’। পেলে যখন ১০ নম্বর জার্সি পরলেন, সেটা হয়ে উঠলো একটা গল্প। শুধু ১০ সংখ্যাই নয়, আরও অনেক সংখ্যা দিয়ে অবিনশ্বর হয়ে থাকবেন ফুটবলের রাজা। তার মৃত্যু হয়েছে সত্যি, কিন্তু তার কীর্তি হয়ে থাকবে চির অমলিন।
পেলে যখন ফুটবল খেলেছেন, তখনকার অনেক রেকর্ডই সংরক্ষণ করা হতো না। তাই তার ক্যারিয়ারের গোলসংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থেকে গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তার গোলসংখ্যা ১২৮১টি। ফুটবলকে ‘সুন্দর খেলা’ হিসেবে পরিচিত করেছিলেন তিনি। ‘জোগো বোনিতো’ শব্দ এসেছে তার হাত ধরে।
ফুটবলকে শুধু শিল্পের পর্যায়ে তুলেই ক্ষান্ত হননি, তার পাশে বসা সংখ্যাগুলো চোখ ধাঁধানো। সেগুলোর দিকে একটু ফিরে দেখা যাক-
১- পেলে একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে ট্রফি হাতে নেন তিনি।
১২৮১- পেলে ১৩৬৩ ম্যাচ (অনানুষ্ঠানিক ম্যাচসহ) খেলে করেছেন ১২৮১ গোল। অনানুষ্ঠানিক ম্যাচও বিবেচনায় নেওয়ার কারণ ওই সময় সান্তোস বিশ্বজুড়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রীতি ম্যাচ খেলতো। তার গোলসংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়ে গেছে, তবে আইএফএফএইচএস-এর এই পরিসংখ্যান সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।
৬৪৩- শুধু যদি অফিসিয়াল গোলের হিসাব করা হয়, তাহলে পেলে সান্তোসের হয়ে গোল করেছেন ৬৪৩টি। শুধু একটি ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়ের তালিকায় দ্বিতীয় তিনি। মেসি বার্সার হয়ে ৬৭২ গোল করে এক নম্বরে।
৬, ২, ২- সান্তোসের সঙ্গে পেলে ছয়টি ব্রাজিলিয়ান শিরোপা জিতেছেন, দুটি কোপা লিবার্তাদোরেস এবং দুটি আন্তঃমহাদেশীয় কাপ (১৯৬২ ও ১৯৬৩)।
১- ১৯৭৭ সালে এনএএসএল শিরোপা জেতেন নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে। তিন মৌসুমে দলটির সঙ্গে ৬৪ গোল করেন (৩৫-৩৭ বছর বয়সে)।
১২- ১৯৭০ সালে পেলের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ার শেষ হয়। বিশ্বমঞ্চে তার গোল ১২টি, ওই সময় তার চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ গোল ছিল কেবল ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টেইনের (১৩)। ১৯৫৮ সালে ছয়টি, ১৯৬২ সালে একটি, ১৯৬৬ সালে একটি এবং ১৯৭০ সালে চার গোল করেন। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় এখন তিনি কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে যৌথভাবে ষষ্ঠ স্থানে।
১/৫- চারটি বিশ্বকাপে গোল করা পাঁচ খেলোয়াড়ের একজন পেলে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৫), লিওনেল মেসি, মিরোস্লাভ ক্লোসা ও উই সিলার আছেন এই তালিকায়।
৭৭- মাত্র ৯২ ম্যাচ খেলে পেলে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন ৭৭টি। ৬০ বছরেরও (১৯৬২-২০২২) বেশি সময় ধরে ব্রাজিলের শীর্ষ গোলদাতার আসনে একাই বসে ছিলেন তিনি। তবে কাতার বিশ্বকাপে তাকে ছোঁন নেইমার। এই কীর্তি গড়তে নেইমারকে পেলের চেয়ে ৩২টি বেশি ম্যাচ খেলতে হয়েছে।
০.৮৪- প্রতি ম্যাচে পেলের গোলের অনুপাত ০.৮৪। ব্রাজিলের জাতীয় দলের ইতিহাসে এটাই সেরা (অন্তত ৩০ গোল)।
১৬- ব্রাজিলে পেলের অভিষেক হয় মাত্র ১৬ বছর বয়সে। আর শেষ ম্যাচ খেলেন ৩১ বছর বয়সে (১৯৭১)।
১৭+- বিশ্বকাপে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন পেলে (১৭ বছর, ২৩৯ দিন)। এছাড়া বিশ্বমঞ্চে সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিক গোলদাতাও (১৭ বছর, ২৪৪ দিন) তিনি। সবচেয়ে কম বয়সে (১৭ বছর, ২৪৯ দিন) ফাইনালে গোলও তিনি করেছেন। ১৯৫৮ সালে সুইডেনে ব্রাজিলকে শিরোপা জিততে আসলেই জ্বলন্ত ছিলেন পেলে।
৮৬%- এই সংখ্যা অবিশ্বাস্য। ১০টির বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলা সব খেলোয়াড়দের মধ্যে পেলের জয়ের শতাংশই সেরা। ১৪ ম্যাচ খেলে করেছেন ১২ গোল।
৭২.৮%- ২০০০ সালে ফিফার শতবর্ষের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পেলে (বিংশ শতাব্দির)। ফিফা অফিসিয়ালস, সাংবাদিক ও কোচদের (৭২.৮%) কাছ থেকে প্রায় তিন চতুর্থাংশ ভোট পান তিনি। তবে ইন্টারনেট ভোটে ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন এগিয়ে। শেষ পর্যন্ত দুজনকে যৌথভাবে শতাব্দির সেরা ঘোষণা করে ফিফা।
ঢাকা/ফাহিম