‘এখানে এত ভালোবাসা পাই, বুঝতে পারি না এটা ভারত না বাংলাদেশ’
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। ভারতের ক্রিকেটের মহারাজ ঢাকায় দুই দিনে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের কাজে এসেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে তিনটায় ঢাকায় পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান হোটেল ওয়েস্টিনে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র কাপের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত হয়েছেন গাঙ্গুলি। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের অঢেল ভালোবাসা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। কথার ঝাঁপি খুলে মহারাজ আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করেন।
সৌরভ বলেন, ‘আমি বহুদিন ধরে যাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি- আকরাম (খান), আতহার (আলি খান), (খালেদ মাসুদ) পাইলট এখানে আছে। আমি অনেক দিন পর এলাম ঢাকায়। সবশেষ এসেছিলাম (২০১৪) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়, যেবার শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হারে ভারত। তখনই শেষ ঢাকায় এসেছিলাম। বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় এরপর এখানে আসার সময় হয়ে ওঠেনি। তবে একটা কথা আমি বলি, যতবারই আমি এখানে আসি, মানুষের এত ভালোবাসা পাই যে বুঝতে পারি না এটা ভারত না বাংলাদেশ। আমাকে এত ভালোবাসায়, এত আপন মনে করার জন্য আমার তরফ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।’
বাংলাদেশে প্রথম আসার কথা এখনো মনে আছে তার, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশে আমি প্রথম আসি ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিলাম। সেই থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। প্রচুর মানুষ বন্ধু আমার। (ইফতেখার রহমান) মিঠুর কথা শুনলেন। সেই দিন থেকে আমার বন্ধু। দশ বছর আমি বাংলাদেশে আসিনি। তবে তার সঙ্গে, তার পরিবার ও বাকি বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই আমার দেখা হতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।’
স্মৃতিবিধুর সৌরভ, ‘আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়েও খুব ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশের গান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি... গান হলো বাংলাদেশের হৃদস্পন্দন। বহু বিখ্যাত গায়ক-গায়িকা বাংলাদেশ থেকে ভারতবর্ষে গেছেন। আমার এখনো মনে আছে যখন প্রথম পিংক টেস্ট হয়... এটাও কাকতালীয়। ভারতের বোর্ড প্রেসিডেন্ট সেটাই ছিল আমার প্রথম পিংক টেস্ট, বাংলাদেশের বিপক্ষে। আপনাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তখন গিয়েছেন, আমার আমন্ত্রণে। তাই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রচুর মধুর সময় কেটেছে আমার।’
ঢাকা উত্তরের সবগুলো ওয়ার্ড নিয়ে ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবল প্রতিযোগিতা হবে মেয়র কাপ টুর্নামেন্টে। টুর্নামেন্টের স্লোগান হচ্ছে, ‘খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকি, মাদকমুক্ত দেশ গড়ি।’ বিশাল এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে বেশ আনন্দিত সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের মানুষ এই যে মাদকমুক্ত দেশ গড়ার চেষ্টা করছেন, এটা সত্যিই প্রয়োজনীয়। সারা পৃথিবীতে হয়। আমি বিভিন্ন দেশে এমন ক্যাম্পেইন দেখেছি। কারণ মাদক কমবয়সী যুব সমাজের জন্য একটা আতঙ্কের কারণ। আমি মাননীয় মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই, উনি বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে যুবসমাজকে ব্যস্ত রেখেছেন। আমি মনে করি, মাদকমুক্ত দেশ হওয়ার জন্য খেলাধুলাই একমাত্র সমাধান।’
তিনি আরো বলেন, ‘মেয়র্স কাপ পশ্চিমবঙ্গেও হয়। আমরা ফুটবল করি। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সহায়তায় ক্রিকেট হয় মেয়র্স কাপে। এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা মেয়র্স কাপের পরিচালনায় হয়ে থাকে। আমি সবার কাছে অনুরোধ করবো, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে, মাদক কোনো সমাধান নয়। জীবনের জন্য একমাত্র সমাধান হলো কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। তাই খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকো, গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত থাকো, পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত থাকো। পড়াশোনা, ডিগ্রি তোমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
দীর্ঘদিন পর ঢাকায় এসে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, পরিবর্তনও চোখে পড়েছে সৌরভের, ‘আমি যতবার ঢাকায় আসি... এই শহরের মধ্য দিয়ে যখন আসি, প্রচুর পরিবর্তন দেখি... বহুদিন আগে ঢাকায় এসেছি, প্রায় ৮-৯ বছর হয়ে গেছে। এত বছর বাদে যখন আমি শহরে আসি, আমি দেখি রাস্তা কত চওড়া হয়েছে, বিভিন্ন ফ্লাইওভার হয়েছে। গুলশান দিয়ে যখন এলাম, এটা হয়তো বাংলাদেশের অন্যতম পশ জায়গা, এখানেও কত উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন কাদের জন্য? যুব সমাজের জন্য। এই উন্নয়নের সঙ্গে তোমরা এগোও। এই উন্নয়নে অংশ নাও, সেটা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজের কাছে অংশ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
শেষটায় আবেগ ঝরলো তার কণ্ঠে, ‘সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা, অনেক ভালোবাসি। তোমরা এরকমই থাকবে, তোমরা ভালো থাকো। আবার বলি, যতবার আমি বাংলাদেশে আসি, আমার অসাধারণ লাগে। এত মানুষের ভালোবাসা... ভালোবাসা মানে সত্যিকারের ভালোবাসা। এসব দেখে আমি সত্যিই আপ্লুত হই। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।’
ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম