ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

সাকিবদের ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটে’ বাশারের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ১৩ মার্চ ২০২৩  
সাকিবদের ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটে’ বাশারের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি

চন্ডিকা হাথুরুসিংহের তুলির আঁচড়ে যেন বদলে গেছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির রং। যদিও সবে শুরু, তবে এই শুরুটাই যে হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধরাশয়ী করে। চনমনে থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট, শরীরি ভাষায় ক্ষীপ্রতা, জস বাটলার-জোফরা আর্চারদের চোখে চোখ রেখে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো ইঙ্গিত দেয় টি-টোয়েন্টির জাগরণের।

এক কথায় তারুণ্যে গড়া সাকিব আল হাসানের এই দল যেন দুর্বার। তাইতো প্রথম ম্যাচের পর পেসার হাসান মাহমুদ এই দলটিকে ‘টি-টোয়েন্টির সেরা দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টানা দুই ম্যাচ হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বড় দলগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশ আগেও সিরিজ জিতেছে, তবে এটি আলাদা।

কেন আলাদা? এক কথায় টি-টোয়েন্টি যেভাবে আগ্রাসী মনোভাবে খেলতে হয় সেই প্রতিরূপটাই দেখা গেছে সাকিবদের দলে। মরা উইকেট তৈরি করে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ নয় একবারে স্পোর্টিং উইকেটেই এবার বাজিমাত। এর আগে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, সেবার উইকেট নিয়ে হয়েছে দেশে বিদেশে বিস্তর সমালোচনা। 

আরো পড়ুন:

দুই দলের জন্য সমান সুবিধা; এমন উইকেটে ইংলিশদের ধরাশয়ী করে কর্তাদের ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি। নির্বাচক হাবিবুল বাশার সোমবার সাংবাদিকদের সিরিজ জয়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আড়াল করতে পারেননি উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ যেভাবে কর্তৃত্ব দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে সেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটই যেন এতদিন চাওয়া ছিল সাকিবদের কাছে।

বাশার বলেন, ‘(সিরিজ জেতায়) অবশ্যই খুব ভালো লেগেছে। কয়েকটা কারণ তো অবশ্যই ছিল। আমরা যেই ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছি, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে খেলতে পেরেছি। অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা করছি, চেষ্টা করছিলাম। সবসময় হচ্ছিল না।’

‘সাফল্য যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে আমরা যেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, এই সিরিজে কিছুটা হলেও পেরেছি। সিরিজের ফল ২-০ হয়ে গেছে। আমরা সিরিজ জিতে গেছি। তবে যেটা বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেভাবে আমরা খেলতে চাই, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে এখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি’-আরও যোগ করেন বাশার।

বাশারের তৃপ্তিত কারণ পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দুটিতে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন অসহায়। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সর্বোচ্চ রান উঠেছিল ১৩১। নিউ জিল্যান্ড সিরিজে সর্বোচ্চ ১৬১ রান হয়েছিল শেষ ম্যাচে। একটি ম্যাচে ১৪১, দুটি ম্যাচে ১৩০ রানের নিচে আর একটি ম্যাচ পেরোতে পারেনি তিন অঙ্কের ঘর। প্রথম ইনিংসের গড় রান ছিল ১১৬। 

বাশারের ভাষ্য, ‘(২০২১) বিশ্বকাপের আগে আমরা অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে যে রকম উইকেটে খেলেছিলাম, সেটা একটু ভিন্ন ছিল। কিন্তু এবার উইকেট কিন্তু অতটা খারাপ ছিল না। আমার মনে হয় না, বল অতটা স্পিন করছে। হয়তো কিছুটা মন্থর থাকতে পারে। মনে হয় না, খুব বেশি কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে ম্যাচ দুইটি জিতেছি। এজন্য আরও বেশি তৃপ্তিদায়ক।’

আর এবারের সিরিজ তার উল্টো। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ জিতেছে দেড়’শ-র বেশি রান টপকে। ঢাকায় আগে ব্যাটিং করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি। তবে ব্যাটসম্যানদের জন্য এই পিচ খুব কঠিন কিছু ছিল না। সবকিছু মিলিয়ে মাঠের ক্রিকেটে আগ্রাসী রূপেই ইংল্যান্ড বধ করেছে বাংলাদেশ। 

টি-টোয়েন্টির বদৌলতে এর আগে ইন্টেন্ট, ইম্প্যাক্ট কিংবা বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটসহ নানা ধরনের কথা হয়েছে। কোনোটারই রূপ দেখা যায়নি ২২ গজে। এবার বাইরে নয় সরাসরি মাঠেই দেখিয়ে দিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

তাই ইংলিশদের বিপক্ষে এই দুই ম্যাচ স্পেশাল বাশারের কাছে, ‘অনেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছি, অনেক ম্যাচ জিতেছি। তবে এই দুইটা ম্যাচ একটু স্পেশাল মনে হয়েছে আমার। কারণ, আমার মনে হয় না, কন্ডিশনের খুব বেশি সুবিধা নিয়ে ম্যাচ দুইটি জিতেছি। আর দলের যে চিন্তাভাবনা, আমি যেটুকু দেখেছি, দলের সঙ্গে কথা বলে, আমার মনে হয় দলও এখন প্রস্তুত, যে কোনো কন্ডিশনে আমরা জিততে চাই। কন্ডিশনের সুবিধা সবসময় নিতে চাই না। এই মনোভাবটা আমাকে সবচেয়ে বেশি খুশি করেছে।’

রিয়াদ/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়