তাইজুলের রঙিন দিনে দুই ওপেনার হারানোর হতাশা
হতচকিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন তামিম ইকবাল। আউট হওয়ার পর তার এমন দৃশ্য দেখা গেছে অনেকবারই। কিন্তু এবারেরটা তামিম কেন, অপরপ্রান্তে থাকা মুমিনুল হকও যেন বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না!
এতো বাউন্স, এতো টার্ণ! মিনিট পয়ত্রিশ আগেও তো এমন টার্ণ পাচ্ছিলেন না বাংলাদেশের স্পিনাররা। অথচ ওই উইকেটে অ্যান্ডি ম্যাকবিরনে টার্ণ পেলেন। সঙ্গে লাফিয়ে উঠা বাউন্স। তাতে তামিমের ব্যাটে বল ছুঁয়ে গেল দ্বিতীয় স্লিপে। দিনের খেলার শেষ বলে তামিম আউট। এর আগে এমন ঘটনা বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেকবার ঘটেছে। কিন্তু এভাবে বিস্ময়কর ডেলিভারীতে দিনের শেষ বলে আউট হবেন তা কল্পনাতেও আনেনি কেউ।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের একমাত্র আফসোসের মুহূর্ত তামিমের আউট। নয়তো তাইজুলের এগারতম ৫ উইকেটের দিনে আইরিশদের ২১৪ রানে অলআউট করে আপারহ্যান্ডেই ছিল স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে। ১৮০ রানে পিছিয়ে থাকলেও হাতে ৮ উইকেট রেখে এই রান অনায়েসে টপকে যাওয়ারই কথা বাংলাদেশের।
দিনের শুরুটা ছিল চমকপ্রদ। আয়ারল্যান্ডের ৬ ক্রিকেটারের একসঙ্গে অভিষেক। ৪ বছর আগে সবশেষ টেস্ট খেলা আয়ারল্যান্ডের সাত ক্রিকেটারই এবার নেই। তাই নতুন ক্রিকেটারদের মিছিল লেগেছিল। আইরিশরা অবশ্য তাদের অভিষেক ক্যাপ দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা আগের রাতেই সেরে নিয়েছিল। নয়তো আজ সকালে দেরি করার ফাইন কপালে জুটত!
বোলিংয়ে তাইজুল ছিলেন দিনের সেরা। ২৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫ উইকেট পেয়েছেন দারুণ বোলিংয়ে। উইকেটের ঘাসের ছোঁয়া থাকায় তেমন টার্ণ ছিল না। তাই গতির বৈচিত্র্য এনে সাফল্য পেতে হয়েছে। সঙ্গে মিরাজ আরেকপ্রান্ত থেকে ২ উইকেট নিয়ে রেখেছেন অবদান। তবে দুই স্পিনারের সাফল্য দিনে অবাক করেছেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়ক বোলিং করেছেন কেবল ৩ ওভার। বোলিংয়ে এসেছিলেন তৃতীয় সেশনে, ৬৬তম ওভারে।
ফিল্ডিংয়েও তাকে খুব প্রাণবন্ত লাগেনি। শরিরী ভাষায় ছিল না আগ্রাসন। স্লিপে ফিল্ডিং করছিলেন শুরু থেকে। পরবর্তীতে মিড অফে, শর্ট মিড উইকেটে, ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চলে ফিল্ডিং করেছেন। দ্বিতীয় সেশনে তামিমকেই বরং খুব সক্রিয় লাগছিল।
আইরিশদের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেছেন অভিষিক্ত হ্যারি টেক্টর। তার সঙ্গে ৭৪ রানের জুটি গড়ার পথে ৩৪ রান করেন কুর্টিস কম্পার। এছাড়া ৩২ রান করে মার্ক আডায়ার দলের রান দুইশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে আইরিশরা বড় সংগ্রহ না পেলেও শুরুতে দুই পেসারই সাফল্য এনে দেন। শরিফুল এলবিডব্লিউ করেন মুরে কামিন্সকে। ইবাদতের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন জেমস ম্যাককুলাম। ২২ গজে হাত ঘোরানো কেবল খালেদ আহমেদই পাননি উইকেটের স্বাদ।
অতিথিদের অল্পরানে আটকে দিনটা ভালোভাবে শেষ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু দুই ওপেনারকে হারিয়ে শেষটা হয়েছে বিষাদময়। শান্তর গোল্ডেন ডাকের পর তামিম ও মুমিনুল পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু দিনের খেলার শেষ বলে তামিমের (২১) আউটে রীতিমত ধাক্কাই হজম করেছে স্বাগতিকরা। মুমিনুল অপরাজিত ১২ রানে। বুধবার দ্বিতীয় দিনে বাকি ব্যাটসম্যানরা বড় কিছু না করলে এই ধাক্কা বড় ক্ষতির কারণও হতে পারে।
ঢাকা/ইয়াসিন