মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা নির্বাচকদের, গ্রিন সিগন্যাল মেলেনি হাথুরুসিংহের
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, স্কোয়াড নেওয়া যাবে ১৭ জন ক্রিকেটার। সেই মোতাবেক তিন সদস্যের নির্বাচক প্যানেল নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়েছিল অনেক আগে।
প্রাথমিক স্কোয়াডে রেখেছিলেন একাধিক এমন ক্রিকেটার যাদের নাম ছিল আলোচনায়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শেখ মেহেদী, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিমসহ একাধিক ক্রিকেটার মিরপুরে চালিয়ে যাচ্ছিলেন অনুশীলন। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়াতেই নির্ধারণ হয়েছে চূড়ান্ত স্কোয়াড। যে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন প্রবল আলোচনায় থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
শনিবার সকালে মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে প্রধান নির্বাচক একে একে ১৭ জন ক্রিকেটারের নাম ঘোষণা করেন। লম্বা এই তালিকায় সুযোগ হয়নি মাহমুদউল্লাহর।
কেন নেই মাহমুদউল্লাহ? উত্তরটা দিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন,
‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে অনেক দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে প্রথমদিকে। অনেক আলোচনার পর...টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দেয়। সামনে কোন দেশের সঙ্গে কিভাবে খেলবে সেই পরিকল্পনা। ওই চিন্তা ভাবনা করেই কিন্তু রিয়াদকে অফ করা হয়েছে।’
‘ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনাকে অবশ্যই আমরা মনে করি এটা ভালো। সঙ্গে হেড কোচের পরিকল্পনা আছে টিম কিভাবে পরিচালনা করবে। সব ডিসকাসন করা হয়েছে। আমাদের অধিনায়কের সঙ্গে ডিসকাসন করা হয়েছে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ - যোগ করেন মিনহাজুল আবেদীন।
মাহমুদউল্লাহ সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তার ব্যাট থেকে আসে ৩১, ৩২ ও ৮ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতায় মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে দলের জায়গা যে নড়ে গেয়েছিল তা টের পাওয়া যাচ্ছিল স্পষ্ট।
বিতর্ক এড়াতে 'বিশ্রাম' নামক নিরাপদ শব্দের আশ্রয় নিয়ে তাকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজে দলের বাইরে রাখেন নির্বাচকরা। আফগানিস্তান সিরিজে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে সরিয়ে নেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে।
জাতীয় দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে আবার অনুশীলনে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। অনুশীলনে নিজের একটি পুরোনো ছবি ফেসবুকে দিয়ে মাহমুদউল্লাহ লেখেন, ‘চ্যালেঞ্জ ইওর স্টোরি।’ নিজেকে নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নামলেও এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ পড়ে নিশ্চিতভাবেই ধাক্কা খেলেন।
তবে তার প্রস্তুতিতে ঘাটতি চোখে পড়েনি। ফিটনেস যাচাইয়ে ‘ইয়ো ইয়ো’ টেস্টে পেয়েছিলেন ১৭ এর মতো। বয়স বিবেচনায় যে মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছিল তাতে পাশ করে গেছেন তিনি। ব্যাট-বলে স্কিল অনুশীলনেও দেখাচ্ছিলেন মাঠে ফেরার জেদ, লড়াইয়ের তাড়না। বড় কিছুর ক্ষুধা যে এখনও তার রয়েছে তা ঘাম ঝরানো একেকটি সেশন দেখে বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পরিকল্পনায় আসার মতো যথেষ্ট ছিল না।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ২০২৩ বিশ্বকাপের দরজা তার জন্য কতটা উন্মুক্ত? বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন আলোচনা এ নিয়েই। মাহমুদউল্লাহকে ওয়ানডের হিসাব–নিকাশ থেকে এখনো পুরোপুরি বাদ দেননি বলেই দাবি নির্বাচকদের, ‘এটা বিশ্বকাপের দল নয়, এশিয়া কাপের দল। এখন এশিয়া কাপের দল নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি। বিশ্বকাপের দল দেই আমরা তারপর এটা জানানো হবে।’ ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দিতে হবে বিশ্বকাপের প্রাথমিক দল।
নির্বাচকরা দল বাছাই করেছেন হাথুরুসিংহের চাওয়াতে তা বোঝা গেছে মিনহাজুলের কন্ঠে, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদেরকে যে পরিকল্পনা দিয়েছে…অ্যাডিশনাল এক্সট্রা স্পিনার নিয়ে খেলা বা অ্যাডিশনাল পেসার নিয়ে খেলা, এসব নিয়ে লং ডিসকাসন হয়েছে। ৭-৮ নম্বরে কারা খেলবে। সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এশিয়া কাপের জন্য তাদেরকেই বাছাই করা হয়েছে।’
মাহমুদউল্লাহর মতো পোড় খাওয়া ক্রিকেটার নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে না জিতে-ই কী হারিয়ে যাবেন?
ঢাকা/ইয়াসিন