‘ক্লোজডোর’ অনুশীলন, ক্রিকেটারদের চাওয়া নাকি হাথুরুসিংহের বাড়াবাড়ি!
![‘ক্লোজডোর’ অনুশীলন, ক্রিকেটারদের চাওয়া নাকি হাথুরুসিংহের বাড়াবাড়ি! ‘ক্লোজডোর’ অনুশীলন, ক্রিকেটারদের চাওয়া নাকি হাথুরুসিংহের বাড়াবাড়ি!](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023August/Close-Door-01-2308131207.jpg)
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অন্যরকম এক আবহ। অন্য দশটা দিনের মতো আজও ছিল ক্রিকেটারদের অনুশীলন। কিন্তু সেই অনুশীলন হচ্ছে ‘ক্লোজডোরে।’
এশিয়া কাপের স্কোয়াড চূড়ান্ত হওয়ায় ক্রিকেটারদের কাজের পরিধি বেড়েছে। নির্দিষ্ট হয়েছে কাজের প্রক্রিয়া। এখন ছক কাটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। সবকিছুই হচ্ছে কঠোর গোপনীয়তায়।
গতকাল স্কোয়াড ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে এশিয়া কাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি। আগের দিনই বিসিবি জানিয়ে দেয়, ক্লোজডোরে ২-৫ টা পর্যন্ত চলবে অনুশীলন। এদিন কাউকেই দেখতে দেওয়া হবে না অনুশীলন। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বরাদ্দ কেবল ১৫ মিনিট। খবর প্রকাশের জন্য যতটুকু ভিভিও বা স্থিরচিত্র নেওয়া প্রয়োজন ওইটুকু সময়েই সংগ্রহ করত হবে।
এবারই যে বিসিবি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনুশীলন ‘ক্লোজডোরে’ করেছে এমনটা নয়। এর আগেও এমন রুদ্ধদ্বার অনুশীলন হয়েছে। তবে এবারের কঠোর গোপনীয়তা এবং শৃঙ্খলতা বাড়তি আগ্রহ তৈরি করছে। প্রশ্ন উঠছে, ক্রিকেটারদের চাওয়াতেই কী ক্লোজডোর অনুশীলন নাকি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বাড়াবাড়ি?
জানা গেছে, ক্রিকেটারদের চাওয়া ও হাথুরুসিংহের বাড়াবাড়ি; দুয়ের চাওয়াতেই ক্লোজ ডোরে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ। প্রথমত, ক্রিকেটাররা গণমাধ্যমের উপস্থিতি উপভোগ করছে না নানা কারণে। আর হাথুরুসিংহে চান নিজের মতো করেই নিজের কাজ চালিয়ে নিতে। কাছ বা দূর থেকে গণমাধ্যমকর্মী বা কেউ অনুশীলন অনুসরণ করুক চান না শ্রীলঙ্কান কোচ। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে ক্লোজডোর প্রস্তাব আসায় বিসিবি তা বাস্তবায়ন করে চটজলদি।
বাংলাদেশে কিংবা উপমহাদেশের ক্রিকেটে এতোদিন যেটা হয়ে আসছিল তা হলো, ক্রিকেটাররা যতক্ষণ অনুশীলন করেন ততক্ষণ তাদের পাখির চোখে পরখ করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের অনুশীলন দেখা, সেই অনুশীলন নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করা, নিজের মতো করে মতামত দেওয়া, গল্প সাজানো হয়ে আসছিল। যা অনেক সময় ইতিবাচক আবহ তৈরি করেছে। আবার অনেক সময় নেতিবাচক আবহেরও জন্ম দিয়েছে।
গত কয়েক মাসের আগেরই ঘটনা। মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন করছিলেন জাতীয় দলের এক ব্যাটসম্যান। আফগানিস্তান সিরিজের আগে লেগ স্পিনের ওপর নিজের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করছিলেন। সেই অনুশীলন খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমকর্মী নিজের খবরের শিরোনাম করেছিলেন এভাবে, ‘নেটের লেগ স্পিনার-ই সামলাতে পারে না, রশিদ খানকে সামলাবে কিভাবে?’ সেই খবর জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে অনেকেই ভালোভাবে নেননি।
অনুশীলন মানেই নিজেদের দুর্বলতা সারবেন ক্রিকেটাররা। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চালাবেন অনুশীলন। শুধু কী তাই, নতুন জিনিস চেষ্টা করবেন। সাফল্য পেতে নতুন উপায় খুঁজবেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় তাকে ব্যর্থ, সফল বলার মতো পরিমাপ করা হলে স্বস্তি পাওয়া যায় না মোটেও। এজন্য বাধ্য হয়ে অনেক ক্রিকেটার চেয়েছেন অনুশীলন থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের দূরে রাখতে।
এতে ভুল কিছু নয় অবশ্যই তা ফুটে উঠল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের কণ্ঠে, ‘এটা সত্যি ক্লোজডোর অনুশীলন খারাপ কিছু নয়। আমি আমার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু সেই প্রস্তুতি দেখে আপনি আমাকে বিচার করছেন। তা তো হতে পারে না। ক্রিকেটারদের নিয়ে দলের পরিকল্পনা থাকে। দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এমন কিছু করা লাগতে পারে যেগুলো হয়তো একদমই নতুন তার জন্য। ওখানেই তো ক্রিকেটাররা নিজেদের ভুল শুধরাবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তত হবে। তাই ওদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।’
তবে হাথুরুসিংহের চাওয়াটা কতটা যৌক্তিক? দলের পরিকল্পনা, রণ কৌশল অনেক সময়ই অনুশীলন দেখে বোঝা যায়। জাতীয় দলের অনুশীলনেই তা ফুটে উঠে। কিন্তু হাথুরুসিংহে চান না তার মিশনের খবর আগেভাগেই বাইরে ছড়াক! প্রস্তুতিটা সবার চোখের আড়ালে রেখে প্রতিপক্ষদের বিস্ময় দিতে চান। তাতে বিসিবি পূর্ণ সমর্থনই দিয়েছে।
উপ-মহাদেশের বাইরে ক্রিকেট বা ফুটবলের অনুশীলনের পুরোটা সময় গণমাধ্যমকর্মীদের থাকার সুযোগও থাকে না। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুশীলন দেখার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর বন্ধ হয়ে যায় গেট। অবশ্য ওই সময়টায় ক্রিকেটার ও ফুটবলাররা তেমন কিছু করেনও না। বেঁধে দেওয়া ওই সময়ে গা-গরম করেন। চলে আড্ডাবাজি, হাসি, ঠাট্টা। মূল অনুশীলন শুরু হয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিদায় নিলে।
হাথুরুসিংহে অ্যান্ড কোং সেটাই শুরু করেছেন রোববার থেকে। মিরপুর শের-ই-বাংলার দুয়ার এখন ‘ক্লোজডোর।’
ইয়াসিন/আমিনুল
আরো পড়ুন