আকাশপথে সন্ধ্যা নামে
আমিনুল ইসলাম, হ্যাংজু, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম
ফ্লাইট দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে। ইমিগ্রেশন শেষ করে অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। ভেবে নিয়েছিলাম ফ্লাইট দেরি হবে। তাই হয়েছে।
বিমানে উঠে দেখি জানালার পাশে সিট। ডেল্টা ও ওমিক্রন দুই দফা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর মাঝে মাঝে প্যানিক অ্যাটাক হয়। সঙ্গে আবদ্ধভীতিও কাজ করে। বিমানে উঠে বসার আধাঘণ্টা পর টের পেলাম আমার কেমন কেমন যেন লাগছে। বিমান রানওয়েতে ওঠার পর ভয়টা আরও জেকে বসলো। নিজেকে বোঝালাম বিমানের প্রায় ২০০ জন যাত্রীর যদি নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা না হয় তাহলে আমার কেন হবে? কিন্তু ভেতর তো এই বুঝ মানছে না।
দ্রুতবেগে বিমান ছুটে শূন্যে ভেসে উঠলো। আমিও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। সেটা অবশ্য মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায়। এখন তো পাখির চোখে ১২৭৪ কিলোমিটারের গোটা পথ দেখবো। মেঘের ওপর মেঘ। সাদা-শুভ্র মেঘ। মেঘের পাহাড়, পাহাড়, সমুদ্র, নদী আর প্রকৃতি।
২১ সেপ্টেম্বর বৃষ্টি থাকার কারণে ঢাকার আকাশে প্রচুর মেঘ ছিল। মনে হচ্ছিল ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে বিমান যাচ্ছে। দৃষ্টির সামনের সবকিছু কুয়াশাচ্ছন্ন। একটু পরেই সেই মেঘ ভেদ করে বিমান আরও উপরে উঠলো। এবার মেঘ নিচে, আমরা উপরে। একটু পর বিমান আরও উপরে উঠলো। মেঘের ওপর মেঘ, তার উপরে আমরা।
বিকেলের সূর্যের আলো মেঘের ওপর পড়ায় সেগুলোকে বড় বড় সাদা শুভ্র তুলোর বলের মতো মনে হচ্ছিল। যেগুলোর ওপর আলো পড়ায় বরফ খণ্ডের মতো জ্বলজ্বল করছিল। মেঘের একপাশে চোখ জুড়ানো শুভ্র আলোর সৌন্দর্য, অন্যপাশে নিজেরই হালকা ছায়ার কালশিটে আবরণ।
পরিস্কার আকাশের যতদূর চোখ যায় একের পর এক মেঘের সারি। তারই নিচে পাহাড়ি-প্রকৃতি। সাপের মতো একেঁবেঁকে বয়ে চলা নদী। দেখলে মনে হয় নরম মাটির ওপর দিয়ে কেঁচোর চলার পথ। গাঢ় সবুজ পাহাড় আর আঁকাবাঁকা নদীর ভাজে টিনের চালার ঘরগুলো উপর থেকে ঠিক ছোট আয়নার মতো লাগছিল। সেগুলোর ওপর আলো পড়ায় জ্বলজ্বল করছিল।
একটু সামনে আগাতেই চোখে পড়লো আস্ত এক রংধনু। নিচ থেকে অসংখ্যবার রংধনু দেখলেও এই প্রথম উপর থেকে দেখা আর অন্যরকম ভালো লাগা। নিচে ও উপরে সাদা মেঘের পাহাড়গুলোর সারি একে অন্যের সঙ্গে প্রতিবেশী হয়ে মিতালি পাতিয়ে চলে গেছে বহুদূর পর্যন্ত। ঠিক যতদূর চোখ যায়।
আকাশপথে এক সময় একেক রকম চোখ জুড়ানো দৃশ্য চোখে পড়ে। মেঘের ওপর মেঘ তার নিচে কখনো সমুদ্র, কখনো নদী, কখনো পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, কখনো কখনো জনপদ আবার কখনো বিস্তৃত বিরান এলাকা। মুগ্ধ নয়নে সেগুলো তাকিয়ে দেখতে দেখতে লম্বা সময়ের ঘুমহীন চোখজোড়া অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যপট স্মৃতির পটে ধারণ করে কখন যে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে টের পাইনি। চোখ খুলতেই দেখি অন্ধকার। অবশ্য ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আকাশপথে তখন সন্ধ্যা নেমেছে।
হ্যাংজু/আমিনুল/বিজয়