ভাঙা লাগেজ বদলে দিলো এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ
আমিনুল ইসলাম, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম
রুমে যাওয়ার আগে রিসিপশন থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল- যেহেতু সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইট, সেহেতু আমাদেরকে রাত সাড়ে ৩টা বাজে ডেকে দিবে। পাশাপাশি এও বলে দিলো যে, সকালে আমাদের নাশতায় থাকছে দুধ, দুটি ডিম ও ব্রেড।
ভ্রমণক্লান্তি অতোটা না থাকলেও যাওয়ার আগের কয়েকদিনের ধকল ছিল শরীরে। তাতে করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাই। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙে। কে ওখানে? বলতেই বোঝা গেল ডেকে তুলতে এসেছেন তারা। দরজা খুলতেই ‘শুভ সকাল’ জানিয়ে প্রস্তুত হতে বলে গেলেন। সঙ্গে নাশতা দিয়ে গেলেন। বেলকনি থেকে সামনে দাঁড়ানো গাড়ীটা দেখা যাচ্ছিল। হাত-মুখ ধুয়ে ৪টার পর পর আমরা বেরিয়ে যাই হোটেল থেকে। যাওয়ার সময় নাশতার সঙ্গে আমাদের সবাইকে একটা করে গিফটও দেওয়া হয়েছিল। পাঁচটার মধ্যে পৌঁছে যাই কুনমিং চাংশো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
আমাদের জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন দুইজন। ‘ফলো মি’ বলে চলতে শুরু করলেন। একটু সামনে আগাতেই দেখি আরও দুইজন অপেক্ষা করছেন। তাদের দুজনের হাতে দুইটি নতুন লাগেজ। আমাদের দুজনকে একটি ফরম পূরণ করতে দিলেন। আমরা সেটা পূরণ করার পর তারা আমাদের দুটি নতুন লাগেজ বুঝিয়ে দিলেন। পুরনো লাগেজ থেকে জিনিসপত্র নতুনটায় নিয়ে আমরা ‘লোকাল ইমিগ্রিশন’-এর দিকে গেলাম।
সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাদের ভিআইপি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে লাইনে দাঁড় না করিয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো বিশেষ একটি জায়গায়। সেখানে কেবল আমরা ১০ জন। আমাদের ইমিগ্রেশনের চেকিং শেষ হলো সাড়ে ৫টায়। কুনমিং থেকে হ্যাংজুর ফ্লাইট ছাড়বে ৬টা ৫৫ মিনিটে। গেইট খুলবে ৬টা ১৫ মিনিটে। ৪৫ মিনিটের জন্য আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ভিআইপি লাউঞ্জে। সেখানে ছিল সব ধরনের আয়োজন। নানারকমের খাবার-দাবার ও সুযোগ-সুবিধা। ভিআইপি লাউঞ্জে খাওয়া-দাওয়া আর গল্প করতে করতে সোয়া ৬টা বেজে গেল। আমরা আস্তে আস্তে ১৮ নম্বর কাউন্টারের দিকে আগাতে লাগলাম।
রাতে অল্প ঘুম হওয়ায় বিমানে উঠেই ঘুম চলে আসলো। ঘুম ভাঙলো এয়ার হোস্টেজদের ডাকে। তারা সকালের নাশতা নিয়ে এসেছেন। কাঁচা ঘুম ভাঙলেও হাসিমুখে তার নেওয়া নাশতা নিয়ে ঝিম ধরে বসে রইলাম। পাশেই বসেছিলেন একজন স্থানীয় ভদ্রমহিলা। তিনি বার বার আমার ফোনের দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর কি যেন বলছিলেন চাইনিজ ভাষায়। আমি তার কিছুই উদ্ধার করতে পারিনি। পারার কথাও না।
অগত্যা এয়ার হোস্টেজকে ডাকলাম। তিনি আসলে তাকে ইংরেজিতে বললাম যে পাশের ভদ্রমহিলা আমার কাছে যেন কি চানতে চাচ্ছেন আপনাদের মাতৃভাষায়। তিনি ভদ্র মহিলার সঙ্গে কিছু কথা বললেন। এরপর আমাকে যেটা বুঝালেন সেটা হলো- আপনার মোবাইলের টাইম দুই ঘণ্টা কম দেখাচ্ছে। আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন? সেটা জানতে চেয়েছেন ভদ্রমহিলা। আমি হেসে তাকে বললাম ‘বাংলাদেশ’ থেকে। এরপর চাইনিজ ভাষায় তিনি কিছু একটা বললেন। এয়ার হোস্টেজ তর্জমা করে বললেন, ‘আপনাকে চীন দেশে স্বাগতম।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে সিটের সঙ্গে মাথা এলিয়ে দিলাম।
আবার এয়ার হোস্টেজের ডাকে ঘুম ভাঙলো। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আপনারা কয়জন এসেছেন? আমি হিসাব করে বললাম, ‘দশজন’। তিনি চলে গেলেন। একটু পরে আইপ্যাড নিয়ে এলেন। সেখানে সব যাত্রীদের নাম রয়েছে। আমার কাছ এক এক করে দশজনের নাম টুকে নিলেন। এরপর বললেন, ‘যাত্রা শেষে আমরা আপনাদের সঙ্গে ছবি তুলবো।’
বিমান অবতরণ করার পর সবাই নামতে শুরু করলেও আমাদের অনুরোধ করা হলো বিজনেস ক্লাসে বসতে। সবাই নেমে যাওয়ার পর একটি প্লেকার্ড নিয়ে এয়ার হোস্টেজ ও অন্যান্যরা হাজির। আমাদের সঙ্গে তারা ছবি তুলে রাখলেন। ধন্যবাদ জানালেন তাদের বিমানে ভ্রমণ করার জন্য। আবার দেখা হবে।
পরে বুঝতে পারলাম। বাংলাদেশ থেকে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর তাদের বলেছিলেন আমরা ঠিকমতো পৌঁছেছি কিনা সেটার একটা ছবি যেন তাকে পাঠানো হয়।
চলবে…
পর্ব-১: আকাশপথে সন্ধ্যা নামে
পর্ব-২: ফ্লাইট বিলম্বে রাজকীয় আপ্যায়ন
হ্যাংজু/আমিনুল/বিজয়