বড় জয়ের সঙ্গে স্বস্তি তানজীদ-লিটনের ছন্দময় ব্যাটিং
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
এক প্রান্তে তানজীদ হাসান তামিম, আরেক প্রান্তে লিটন দাস একের পর এক নান্দনিক শট খেলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ডাগআউটে স্বস্তির নিঃশ্বাস, আনন্দের বন্যা। ভাবনা আসতে পারে এটি স্রেফ একটি প্রস্তুতি ম্যাচ, এত খুশি হওয়ার কি?
কিন্তু যে ওপেনিং নিয়ে বাংলাদেশ ভুগছে ম্যাচের পর ম্যাচ, সব শেষ এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ, সেই ওপেনিংয়ে তরুণ তানজীদের সঙ্গে অভিজ্ঞ লিটনের রানে ফেরার ইঙ্গিত বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ শিবিরে এনে দেবে নিশ্চিত স্বস্তির হাওয়া। তানজীদের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৮৪ রান। আর লিটন করেন ৫৬ বলে ৬১ রান।
শুরু থেকে তানজীদ ছিলেন সাবলীল। ৫২ বলে ফিফটি করেন এই তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দিচ্ছিলেন সেঞ্চুরির আভাস। লাহিরু কুমারাকে মিড অফ ফিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন আসালাংকার হাতে। ১০ চার ও ২ ছয়ে ৮৮ বলে সাজান এই ইনিংস। লিটনের শুরুটা ধীরগতিতে হলেও খোলস ছেড়ে বের হতে সময় নেননি। ফ্লিক আর দারুণ সব শটে লঙ্কান বোলারদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে চূরমার করে দিয়েছেন। মাত্র ৩৯ বলে ফিফটি করা লিটন আউট হন সীমানায় ক্যাচ দিয়ে। তার ৫৬ বলের ইনিংসে চারের মার ছিল ১০টি।
এর আগে সবশেষ ১০ ম্যাচে লিটনের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৩। নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা এই ব্যাটার ব্যাটও ভাঙেন হতাশায়। প্রস্তুতি ম্যাচে ছন্দে ফেরা লিটন যেন বড় স্বস্তির বিষয়। অন্যদিকে এশিয়া কাপে শূন্যতে ক্যারিয়ার শুরু করা তানজিদ ছিলেন দুর্দান্ত। পরের তিন ম্যাচে রান না পেলেও তার ওপর আস্থা হারায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বকাপ দলে তাকে অন্তর্ভূক্ত করে তামিম ইকবালের জায়গায়। গৌহাটির রান প্রসবা উইকেটে নিজেকে মেলে ধরেন এই ব্যাটার।
১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির রান শতরানের ঘর পেরোয়। সেই ছন্দ ধরে রাখেন পরের ব্যাটসম্যানরাও। তিনে নামা মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ফিফটি আর মুশফিকুর রহিমের সাবধানী ইনিংসে বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেয় ৭ উইকেটে। বল হাতে ছিল ৬৪টি। লঙ্কান বোলারদের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন লাহিরু কুমারা, দুনিথ বেলালাগে ও দুশান হেমন্থ।
সাকিবের চোটে অধিনায়ক হওয়া মিরাজ বল ও ব্যাট হাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ৬৭ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। সঙ্গে মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৩৪ রানে।
গৌহাটিতে শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ২৬৩ রানে অলআউট হয়। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। তুলনায় বেশ খরুচে ছিলেন শরিফুল ইসলাম-হাসান মাহমুদরা।
শেখ মাহেদী হাসান সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। এ ছাড়া ১টি করে উইকেট নেন তানজীম হাসান সাকিব, শরিফুল, নাসুম আহমেদ ও মিরাজ। সবচেয়ে বেশি খরুচে ছিলেন হাসান। ৫ ওভারে মাত্র ৪৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। তাসকিন আহমেদ ৭ ওভারে ২৯ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি। স্পিনে নাসুম ছিলেন কিছুটা খরুচে। ৮ ওভারে ৫১ রান দেন তিনি। সবচেয়ে কৃপণ ছিলেন মিরাজ, তিনি ১০ ওভারে মাত্র ৩২ রান দেন। লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন পাথুম নিসাংকা । এ ছাড়া ৫৫ রান করেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
ম্যাচ শেষে লিটন বলেছেন বিশ্বকাপ যাত্রায় বাংলাদেশের ওয়েলকাম স্টার্ট। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে এই মাঠেই ২ অক্টোবর ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে পাওয়া আত্মবিশ্বাস এবার পুরো বিশ্বকাপজুড়ে ধরে রাখলেই হয়!
ঢাকা/রিয়াদ