ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

সরিষা ক্ষেত থেকে নয়নাভিরাম ক্রিকেট স্টেডিয়াম

আমিনুল ইসলাম, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ৪ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ২২:৪৭, ৫ অক্টোবর ২০২৩

চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের রাজধানী হ্যাংজু বেশ সাজানো-গোছানো শহর। ছবির মতো শহর বললেও ভুল হবে না। তার অদূরেই অবস্থিত ঝেজিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। যেটার ক্যাম্পাস কল্পনার ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর। প্রকৃতি যেন এখানে আপন বসতি স্থাপন করছে স্ব-মহিমায়। লতাগুল্ম নির্ভয়ে প্রবেশ করেছে বিভিন্ন ভবন ও তার অলিগলিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে চারদিক থেকে আগলে রেখেছে সবুজে ঘেরা পাহাড়। ক্যাম্পাসের উত্তরপ্রান্তে এই পাহাড়ের কোল ঘেষে তৈরি করা হয়েছে ঝেজিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট মাঠ। যেখানে এশিয়ান গেমসের নারী ও পুরুষদের ক্রিকেট ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর এই স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এর প্রধান কাঠামো দাঁড়িয়ে যায়। মোট ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচে তৈরি হয় এই স্টেডিয়াম। যেখানে দর্শক ধারণক্ষমতা মাত্র ১ হাজার ৩৪৭।

স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে শুরু করে সংলগ্ন চারতলা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্টিল দিয়ে। যাতে করে অবকাঠামোটি হালকা হয় এবং ভূমিকম্প সহনীয় হয়। এর মাধ্যমে কেবল সবুজ শিল্পায়নই ঘটেনি, সময়ও বেঁচেছে অনেক।

স্টেডিয়ামটি অবশ্য অন্যান্য ক্রিকেট মাঠ থেকে একটু ছোট। আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। দৈর্ঘ্যে মাঠটি ১৫০ মিটার। আর প্রস্থে ১২০ মিটার। দুটি প্রান্তের একটি লাইব্রেরি প্রান্ত, অন্যটি প্যাভিলিয়ন প্রান্ত। মাঠটিতে রয়েছে চারটি পিচ।

মজার বিষয় হলো, স্টেডিয়াম নির্মাণের আগে এই জায়গাটি ছিল ফসলের ক্ষেত। পালাক্রমে এখানে সরিষা ও সূর্যমুখী ফুলের চাষ হতো। এখন যেমন ক্রিকেট খেলা দেখতে এখানে হ্যাংজুর মানুষজন আসেন, তখন বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত কিংবা সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসতেন। তারা এখানে আড্ডা দিতেন, ছবি তুলতেন। তখন পশ্চিমপ্রান্তে ছিল কেবল লাইব্রেরিটি। উত্তর প্রান্তে চীনের তৃতীয় বড় পাহাড়। আর বাকি দুই প্রান্ত ছিল ফাঁকা।

মাঠটির রয়েছে দুর্দান্ত ড্রেনেজ সিস্টেম। বৃষ্টি থামার দশ মিনিটের মধ্যে পানি নিষ্কাশন সম্পন্ন করে খেলার উপযোগী হয়ে ওঠে মাঠটি। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির পানি তারা ধরে রাখারও ব্যবস্থা রেখেছে। সেই পানি ফিল্টার করে আশে-পাশের গাছের গোড়ায় দেওয়া হয়।

দিবারাত্রির ম্যাচ আয়োজনের জন্য এখানে রয়েছে চারটি ফ্লাডলাইট। নির্মাণের পর থেকে এখনে ইতোমধ্যে ২৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে। তার মধ্যে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে ১৭ বার। আর পরে ব্যাট করা দল জিতেছে ১১ বার।স্টেডিয়ামটি চীন সরকার নির্মাণ করলেও এটার মালিকানায় রয়েছে ঝেজিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অবকাঠামোগত দিক দিয়ে এটাই চীনের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। এর আগে কেবল গুয়াংজুতে চীনের একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল। সেখানে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এশিয়ান গেমস ক্রিকেটের ম্যাচ। এবারের এশিয়ান গেমস উপলক্ষ্যে হ্যাংজুতেও নির্মিত হলো নয়নাভিরাম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামের বদৌলতে এগিয়ে যাক হ্যাংজুর পাশাপাশি চীনের ক্রিকেটও।

হ্যাংজু/আমিনুল/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়