ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সামনে সময়, তৈরি হও ভারত!

সায়ন আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৬ অক্টোবর ২০২৩  
সামনে সময়, তৈরি হও ভারত!

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ লিখেছিলেন, ‘নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল।’

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরে ঘুরে দেখেছি, বিনোদ কাম্বলি কে অনেকেই মনে রাখেনা!একদা ভারতীয় ক্রিকেটের রাইজিং স্টার, শচীন টেন্ডুলকারের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু আজ বিস্মৃতির আড়ালে। ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ মনে করেন কাম্বলির পতনের কারণ তিনি নিজে- তাঁর বিশৃঙ্খল জীবনযাপন, বেহিসেবী পদক্ষেপ। 

কিন্তু মুম্বইয়ের শিবাজী পার্কে মাস তিনেক আগে কাম্বলির সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে দেখেছি স্থানীয় কোচেরা এখনও তাঁকে ভোলেনি। এদের অনেকেই কাম্বলির সঙ্গে ময়দানে খেলেছেন। এবং ওরা বিশ্বাস করেন, কাম্বলি ছিলেন ‘চাবুক’ ক্রিকেটার। ভাগ্য সহায় হলে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতকে জিতিয়ে দিতে পারলে মুকুট পরে মাঠ ছাড়তেন। ইডেনের ক্ষেপে ওঠা দর্শক, মাঠে তাণ্ডব চালিয়ে তাঁকে সেই সুযোগটুকুও দেয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারত জিততোই এমন কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। কিন্তু, ময়দানের অনেক কোচ মনে করেন, মাঠে থাকলে অন্তত কাম্বলি চেষ্টা করতে পারতেন। ওই ভাবে, চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হত না!

এবং প্রত্যেক বার বিশ্বকাপ এলে আমার কাম্বলির ওই মুখটা মনে পড়ে। চোখের জলে ব্যাট হাতে ড্রেসিংরুম মুখো হচ্ছেন!কোনও ক্রিকেট সমর্থক এই ছবি দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মত, ভারতের কোটি কোটি সমর্থক চান প্রতি ম্যাচে জিতুক তাদের প্রিয় টিম। স্বপ্নপূরণ হলে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যান ওরা, স্বপ্নভঙ্গ হলে দীর্ঘমেয়াদী হা-হুতাশ!

শেষবার যখন কাম্বলির সঙ্গে শিবাজী পার্কে হাঁটছিলাম, ওঁকে বলেই ফেলি, ‘বিশ্বকাপ এলেই আমার বারবার মনে হয়, এবারে যেন কাউকে কাম্বলি হতে না হয়...’ শুনে, মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘কিন্তু ক্রিকেট আর কবেই বা কাউকে নিশ্চয়তার জীবন দিয়েছে!’

ঠিক-ই তো! আগামী দেড় মাস প্রত্যেক টিমের এটাই মনে রাখা উচিত - ক্রিকেটে সত্যিই নিশ্চয়তা বলে কিছু নেই। ফেভারিট বলেও আদতে কিছু হয় না! ঘরের মাঠে ভারতের পাল্লা ভারী, কিন্তু উপমহাদেশের উইকেটে এমন কোনও জুজু নেই যা বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার অজানা। সুতরাং, ইট ইজ এনি বডিজ টুর্নামেন্ট!

বিগত কয়েক মাসে ভারতের কম্বিনেশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারত এশিয়া কাপ যদি জিতেও যায় এই প্রশ্নের দল উত্তর খুঁজবে বিশ্বকাপ না জেতা অবধি। সুতরাং, রোহিত শর্মার কাছে আগামী কয়েক সপ্তাহ ভীষণ চ্যালেঞ্জিং! বিশ্বকাপে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াবে টিম ইন্ডিয়া। গুয়াহাটির হব হব ঠাণ্ডা থেকে চেন্নাইয়ের প্যাচপ্যাচে গরম। ধর্মশালার হিম শীতল আবহাওয়া থেকে আমদাবাদের অল্প স্বল্প ঠাণ্ডায় টুর্নামেন্টের চল্লিশ দিন মোটেও সোজা হবে না ভারতের। 

বিভিন্ন প্রান্তের আবহওয়া ভিন্ন, উইকেট অন্য ধরনের, জল হাওয়ার পরিবর্তন- ভারত কীভাবে সামলায় সেটা দেখার বিষয়। গত এক দশকে আইসিসি ইভেন্টে ফাইনালের গণ্ডি না পেরোনো ভারত, কাগজে কলমে অন্যতম সেরা দল, কিন্তু শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছেই। দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে থাকা জসপ্রীত বুমরাহ আদৌ ধকল নিতে পারবেন কী না সেই নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। যদিও টিম ম্যানেজমেন্ট আশাবাদী, প্রশ্ন থামছে না। থামবে না।

ভারত দর্শনে বেড়িয়ে পড়া ভারতীয় দলের কাছে আরেকটি বড় প্রশ্ন- কম সময়ে এত ট্রাভেল সামলাতে পারবেন রোহিতরা? আইপিএলের সময়েও হিলী দিলী করে বেড়াতে হয় প্রত্যেক দলকে, কিন্তু আইপিএল ও বিশ্বকাপ এক নয়। এমন এক টুর্নামেন্ট যা ভারত ২০১১-র পর আর জেতেনি, সেখানে এত ঘোরাঘুরি কতটা যুক্তিযুক্ত, তার উত্তর দেবে সময়। 

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ যে কোনও দলের কাছে অত্যন্ত স্পেশাল এবং এই টিকিট নিয়ে হাহাকারের মাঝে অগুনতি ক্রিকেট পাগল এখনও ভারতের ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন সত্যি হতেই পারে যদি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পারে ভারত। টিম কম্বিনেশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করে।

কিন্তু বিশ্বকাপ যত এগোচ্ছে আমার কাম্বলির কথা মনে পড়ছে। মনে পড়ছে ইডেনের সেই জলন্ত সেমিফাইনালের কথা, যেদিন ম্যানেজার অজিত ওয়াাদেকারের বারণ সত্ত্বেও টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় দল। এবং সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে পরের কয়েক ঘন্টায়। ২০১১-র মাহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ না জিতলে ভারতকে হয়ত এখনও তাড়া করত ১৯৯৬ ইডেনের বিপর্যয়। 

আবার দেশে আরেকটা বিশ্বকাপ এবং ভারতের সামনে বিরাট সুযোগ। তবে কী এবার স্বপ্ন পূরণ নাকি স্বপ্ন ভঙ্গের এক দশকের ট্র্যাডিশনই চলবে? উত্তর দেবে সময়, তবে বরাবরের মত আশা করবো অন্তত এই বার কেউ যেন ৯৬’র কাম্বলি না হন। 

দলে তারকার সমাবেশ, ট্যালেন্ট সীমাহীন এবং নবীন-প্রবীণের চমৎকার মেলবন্ধন। কোহলি,  রোহিত, হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ধরে ফের ইতিহাস সৃষ্টির মঞ্চ তৈরি। প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকতা আর আগ্রাসনের। 

তবু আশায় বুক বাঁধা।
সামনে সময়, তৈরি হও ভারত!

লেখক: সহকারী সম্পাদক, স্পোর্টস্টার পত্রিকা (ভারত)

ঢাকা/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়