ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

৫৫ লাখ স্কয়ার ফিটের এমএমসি

আমিনুল ইসলাম, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ৬ অক্টোবর ২০২৩  
৫৫ লাখ স্কয়ার ফিটের এমএমসি

এয়ারপোর্ট থেকে বের লাগেজ নিয়ে সামনে আগাতেই দেখি অ্যাক্রিডিটেশন ভেরিফিকেশনের ডেস্ক। সেখানে গিয়ে ভেরিফাই করে বের হতেই হ্যাংজুতে পিএইচডি করা বাংলাদেশি ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জনি সঙ্গে পরিচয়। তার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে আমরা দুইভাগ হয়ে গেলাম। একভাগ গেমস আয়োজক কর্তৃপক্ষের পাঠানো বাসে করে প্রধান মিডিয়া কেন্দ্রে (এমএমসি) যেতে আগ্রহী। আরেকভাগ আগে হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর এমএমসিতে যেতে আগ্রহী। আমাদের সাথে ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ থাকায় শেষ পর্যন্ত সবাই আগে হোটেলে যাওয়ার ঐক্যমতে পৌঁছাই।

সেখান থেকে বের হয়ে হ্যাংজু এয়ারপোর্টের মেট্রো স্টেশনে যাই। প্রথমে ভেবেছিলাম টিকিট কাটবো। পড়ে আমাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখানোয় ফ্রি-তেই জার্নি করার সুযোগ দেয় তারা। ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমরা হোটেলে পৌঁছে যাই। হোটেলে গিয়ে গোসল করে ট্যাক্সিতে চেপে বসি, গন্তব্য ২৫ কিলোমিটার দূরের এমএমসি। ৩৩ মিনিটের মধ্যে আমরা সেখানে পৌঁছে যাই। যাওয়ার পথে হ্যাংজুর ফ্লাইওভারগুলোতে লাগানো সাড়ে ২১ লাখ গোলাপ গাছ ও তাতে থরে থরে ফুটে থাকা গোলাপ দেখে পুলকিত হই। মনে হচ্ছিল, আমাদের স্বাগত জানাতেই এতশত গোলাপের আয়োজন।

আরো পড়ুন:

মিডিয়া সেন্টারে ঢুকতেই অবাক হই। চেকিং ডেস্কে ঢুকতে না ঢুকতেই অটো স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে আমাদের কার্ড স্ক্যান হয়ে ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে। ব্যাগ ও নিজেদের স্ক্যানিংয়ের পর আমরা ভেতরে ঢুকতে শুরু করি। বিশাল এমএমসি, ৫৫ লাখ স্কয়ারফিটের বিশাল জায়গা। দামি দামি সব শিল্পকর্ম দিয়ে নিখুঁতভাবে সাজানো প্রবেশ পথের দুই দেয়াল। প্রযুক্তির সব ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে এখানে।

কি নেই এখানে? হ্যাংজু তথা চীনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রথা ও সংস্কৃতি প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আছে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোর আউটলেট ও তাদের নানা আয়োজন। আছে শহরের আকর্ষণীয় সব স্পট ঘুরে দেখার প্যাকেজও। এশিয়ার ৪৫টি দেশের ১০ হাজার সাংবাদিক ধারণক্ষমতার এমএমসিতে আছে স্মার্ট লকার, মেকআপ নেওয়ার সুযোগ, দিনে দুই ঘণ্টা ও রাতে ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ। অবশ্য যারা কাজ করতে আসেন তারা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান কই!

এমএমসি’র করিডোর পেরিয়ে মেইন প্রেস সেন্টারে (এমপিসি) ঢুকেই প্রথম কাজ হলো মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া। কিন্তু সবার মোবাইলে সংযোগ পেলেও আমারটা তারা কোনোভাবেই কানেক্ট করতে পারছিল না। পাঁচ-ছয়জন স্বেচ্ছাসেবী দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা জোড়া তখন ব্যাথায় কাতর। শেষ পর্যন্ত মোবাইল বাদ দিয়ে ল্যাপটপে নেট কানেক্ট করতে সক্ষম হই এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি।

অফিসে কয়েকটা নিউজ পাঠিয়ে যাই আমাদের মিডিয়া ব্যাগ সংগ্রহ করতে। অত্যন্ত সুন্দর একটি ব্যাগ ধরিয়ে দেওয়া হলো আমাদের। তার মধ্যে অনেক ধরনের স্যুভিনিয়র ও গিফট আইটেম। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছাতা, মাসকট, ডায়েরি, কলম, পানির পট, নেট পিলোসহ আরও অনেক কিছু। এক ব্যাগে জায়গা হয় না। তাই আরও একটি ব্যাগ দেওয়া হয়েছে সেগুলো নেওয়ার জন্য। ব্যাগের সঙ্গে ফ্রি মেট্রো কার্ড ও ডাইনিং কার্ডও দেওয়া হয়।

এর মধ্যেই টের পেলাম ক্ষুধার তাড়না। অগত্যা মিডিয়া সেন্টারের ডাইনিংয়ের দিকে ছুটলাম। এক্সেলেটরে একতলা নিচে ঢুকতেই দেখি ডাইনিং কার্ডে টাকা রিচার্জ করে খেতে হবে! দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ২০ আরএমবি (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৫০ টাকা)। আর সকাল ও বিকেলের নাশতার জন্য ১০ আরএমবি। ২০ আরএমবি রিচার্জ করে ভেতরে ঢুকে দেখি এলাহি কাণ্ড। বিরাট ডাইনিং হল। সেটা আবার তিনভাগে ভাগ করা।

শেষ ভাগের একটা কোণে আছে মুসলিমদের জন্য হালাল কর্নার। সেখানে গিয়ে দেখি বুফে সিস্টেম। আঠালো ভাতের সাথে গরুর মাংসের কয়েক আইটেমের, খাশির মাংসও দুই ধরনের, মুরগি আছে, মাছ আছে, সবজি আছে, আপেল-কমলা, তরমুজ, নাশপাতি সহ নানান ফলমূলও আছে বেশ কয়েক প্রকারের। আয়োজনের কোনো কমতি রাখেনি তারা। পেটপুরে খেয়ে আবার কাজে ফিরলাম। হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা। ট্যাক্সিতে বেশ খরচ হয়। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকার মতো।

কয়েকদিন এভাবে আসা-যাওয়া করার পর মানিব্যাগের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে শুরু করে। তাই ফ্রি মেট্রো কার্ড ব্যবহার কিভাবে করা যায়, কিভাবে মেট্রো দিয়ে হোটেল থেকে এমএমসিতে যাওয়া যায় সেই পন্থা বের করার চেষ্টা করলাম। অবশেষে জাহিদের পাঠানো মেট্রো রুট ধরে একদিন ঠিকই এমএমসিতে পৌঁছে গেলাম।

প্রথমে গাওশা রোড থেকে কোচ সেন্টার, সেখান থেকে লাইন বদলে সানবাও। আর সানবাও থেকে লাইন বদলে এক্সপো সেন্টার- যেখানে এমএমসি অবস্থিত। সকালে হোটেল থেকে বের হয়ে এমএমসি হয়ে বিভিন্ন ভেন্যুতে ঘুরে ঘুরে নিউজ সংগ্রহের কাজ করতে লাগলাম আমরা। হোটেল-মেট্রো-এমএমসি-শাটল বাসে বিভিন্ন ভেন্যু। আবার বিভিন্ন ভেন্যু-এমএমসি-মেট্রো-হোটেল; এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের হ্যাংজুর দিনগুলো।

চলবে…

পর্ব-১: আকাশপথে সন্ধ্যা নামে
পর্ব-২: ফ্লাইট বিলম্বে রাজকীয় আপ্যায়ন
পর্ব-৩: ভাঙা লাগেজ বদলে দিলো এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ 

হ্যাংজু/আমিনুল/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়