ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ধর্মশালার ‘মান বাঁচাতে’ কঠিন তোড়জোড়

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধর্মশালা থেকে: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ৮ অক্টোবর ২০২৩  
ধর্মশালার ‘মান বাঁচাতে’ কঠিন তোড়জোড়

ওয়াও’ শব্দটাই ব্যবহার করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবার পা রেখে আশরাফুলের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায়। শুধু আশরাফুল কেন, হিমালয়ের বরফচূড়ার পাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা নয়ানাভিরাম স্টেডিয়ামের প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে যে কাউকেই।

বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেমন বলছিলেন, ‘অবশ্যই এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামগুলোর একটি।’ তাইতো নিজের ইনস্টাগ্রামে মাঠে দাঁড়িয়ে নিজের কয়েকটি ছবি তুলে পোস্ট করেছেন। একই অবস্থা প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর। তার ইনস্টাগ্রামে মাঠের ছবি। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৫৭ মিটার ওপরের এই স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁতে। যেখানে দাঁড়ালেই হিমালয়ের চূঁড়ার দেখা মেলে। কিন্তু পাহাড়ের বুক চিড়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেডিয়াম এখন লড়ছে নিজেদের মান বাঁচানোর লড়াইয়ে। প্রথমবার বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন করতে আয়োজকরা কোনো কমতি না রাখলেও কলঙ্ক লেগেছে মাঠের আউটফিল্ডে। এ যেন ‘চাদেঁর বুকে এক টুকরো কলঙ্ক’! সেই কলঙ্ক ঢাকতেই এখন উঠেপড়ে লেগেছেন আয়োজকরা। 

বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ম্যাচে ধর্মশালার সবুজের গালিচা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ মাঠ নিয়ে অভিযোগ না তুলে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেও আফগানিস্তানের কোচ প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। মিরাজ বলেছিলেন, ‘যেখানেই খেলা দেওয়া হোক না কেন, আমাদের খেলতে হবে। অজুহাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

আর জোনাথন ট্রট বলেছেন, ‘খেলোয়াড়রা নিশ্চিত নয় তারা এই মাঠে ডাইভ দিতে পারবে কিনা। কারণ এখানে ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ভাগ্যবান যে মুজিবের হাঁটুতে সিরিয়াস কিছু হয়নি। তার আসলে সেখানে ডাইভ দেওয়া উচিত হয়নি।’

আফগানিস্তানের মুজিবর উর রহমানের গতকাল সীমানায় ডাইভ দিয়ে উপড়ে পড়ার ভিডিও এখন ভাইরাল। যা নিয়ে প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে বিসিসিআই ও আইসিসি। নিজেদের মান বাঁচানোর লড়াইয়ে আজ কড়াকড়ি ছিল মাঠে চলাফেরার। ড্রেসিংরুমের আশপাশের গেট দিয়ে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি। আগের দিন মাঠে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের কাজ করলেও এদিন মাঠে পা রাখার আগেই নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে এসে প্রবেশে বাধা দেন। 

বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড এই মাঠেই মঙ্গলবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে। হাতে সময়ও নেই। তাই মাঠ প্রস্তুতিতে তোড়জোড়। আজ ইংল্যান্ড অনুশীলন করলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ছিলেন বিশ্রামে। কেবল দলের পাঁচ ক্রিকেটার শুধু জিম ব্যবহার করতে এসেছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা মুশফিক, তাসকিন, মোস্তাফিজ ও তাওহীদ এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন বাইরে থাকা তানজিম। তাদের বেরিয়ে যাওয়ার পর স্টেডিয়ামে ঢুকতেই বাঁধা! মূল গেট দিয়ে না ঢুকে যেতে হবে গ্যালারির গেট দিয়ে।

স্টেডিয়ামের ঘাস আজ কাটতে দেখা গেছে। দেখা গেছে কীটনাশক ছিটাতেও। আউটফিল্ডে খুব বেশি ঘাস নেই্। বালু চোখে পড়েছে দূর থেকেই। গতকাল বাংলাদেশের পেসার তাসকিনকেও রানিংয়ে ভুগতে দেখা গেছে। এছাড়া গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে জোর দিতে দেখা যায়নি কাউকে। ব্যাটসম্যানদের রান পেতেও ভুগতে হয়েছে। সহজাত টাইমিংয়ে শট খেললেও আউটফিল্ড দ্রুতগতির না হওয়ায় বাউন্ডারি বঞ্চিত হয়েছেন।

জানা গেছে, ধর্মশালার মাঠের ঘাস নতুন করে রোপন করা হয়েছে। বিশ্বকাপের খেলা মাঠে গড়ানোর আগে মাঠ সবুজাভ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু শেষ মৌসুমে শীত সময়ের চেয়ে বেশি থাকায় মাঠের পরিচর্যা করার মতো সুযোগ হয়নি গ্রাউন্ডসম্যানদের। এ কারণে মাঠে দৌড়ালে বালু উড়তে দেখা যায়। ডাইভ দিলে ইনজুরির ভয় থাকে।

ইংল্যান্ড আজ মূল মাঠে খুব বেশি সময় দেয়নি। নেটে সময় কাটিয়েছেন ব্যাটসম্যান বোলাররা। অনেকটা নাক উচুঁ স্বভাবের ইংল্যান্ড এই আউটফিল্ড নিয়ে অভিযোগ তুলবে। সেটা ধর্মশালা মাঠের গায়ে এক টুকরো কলঙ্কের ছাপ এঁকে দিবে নিশ্চয়ই। দুদিনে এই মাঠে নিজেদের মান ধরে রাখতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

ধর্মশালা/ইয়াসিন/বিজয়

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়