ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

মেহেদী রঙে রাঙা মিরাজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধর্মশালা থেকে  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৮ অক্টোবর ২০২৩  
মেহেদী রঙে রাঙা মিরাজ

‘মিরাজ ভাই আপনাকে সাকিব আল হাসান হতে হবে’— আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে মিরাজ যখন ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন গ্যালারি থেকে আসছিল এমন প্রত্যাশার কথা। মিরাজ এমন কিছু নতুন শুনছেন না। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বাংলাদেশের সুপারস্টারের সঙ্গে তার তুলনা নিশ্চয়ই আলাদা গুরুত্ব বহন করে। 

নাসের হুসেন একবার সাকিবকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘হি ইজ দ্য সুপারস্টার অব বাংলাদেশ ক্রিকেট। অ্যান্ড হি প্লেইড লাইক এ সুপারস্টার’— সেই নাসির হুসেন গতকাল মিরাজকে স্তুতি ভাসিয়ে বলেছেন, ‘এনাদার সুপারস্টার বর্ন।’ ইংলিশ ধারাভাষ্যকার মিরাজকে নিয়ে এমন প্রশংসা না করে পারেননি। কেননা আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরাজ ছিলেন দুর্দান্ত, উড়ন্ত, অফুরন্ত। বল হাতে উইকেট। ব্যাট হাতে রান। সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে তেজদীপ্ত। মাঠে এমন মিরাজকে দেখা যায় প্রায়শই। তাই তো বর্তমানের সাকিবের সঙ্গেই চলছে তার তুলনা। অবশ্য এই তুলনা শুরু হয়েছে যুব ক্রিকেট থেকেই। সামনে থেকে নেতৃত্ব, স্পিনে বিষ আর ব্যাটিংয়ে নিখুঁত থাকায় মিরাজকে ভাবা হচ্ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশের। সেভাবে নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অবশ্য শুরু করতে পারেননি। বোলার হিসেবে আবির্ভাব হয়েছিল তার। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ব্যাটসম্যান সত্ত্বাকে প্রকাশ করেছেন। 

মিরাজের ক্রিকেটীয় মনোভাব, চিন্তা-চেতনা সর্বমহলে প্রশংসিত। ধর্মশালায় সেসব কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু, ‘মিরাজ শুধু কয়েক ম্যাচ ধরে ভালো খেলছে, তা নয়। কয়েক মৌসুম ধরেই ভালো খেলছে। খেলাতে সবটুকু দেওয়ার প্রেরণা তার মধ্যে যে আছে, তা সব খেলাতেই দেখা যায়। বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং, সব জায়গাতেই সে নিজের শতভাগ দিয়ে করে। সব খেলোয়াড়ই তা করে। তবে মিরাজের ভেতর একটা আলাদা জোশ কাজ করে যে এইখানে না হলে অন্যখানে, যেহেতু তিনটি বিভাগেই সে ভালো; একটিতে না পারলে আরেকটিতে কাভার করে দেওয়ার চেষ্টা করে।’ 

ব্যাটিংয়ে মিরাজের পজিশন ছিল লোয়ার অর্ডারে। অথচ গত এক বছরে ওপেনিং থেকে শুরু করে আট নম্বর, সাত নম্বরে ছাড়া সব পজিশনে ব্যাটিং করেছেন। ইস্পাত দৃঢ় মনোবল না হলে এমনটা সম্ভব না মিরাজের কথা ফুটে উঠল, ‘আমরা ক্রিকেট খেলোয়াড়, মানিয়ে নেওয়াটাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মানিয়ে নেওয়া নয়, আমার কাছে মনে হয় আমাদের প্রতিটি ক্রিকেটারই মানিয়ে নিয়ে এই অবস্থানে এসেছে। বড় কিছু অর্জন করতে গেলে মানিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমিও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ 

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজ ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। এবার মূল বিশ্বকাপেও তেমন কিছুর স্বপ্ন বুকে লালন করছেন তিনি, বড় টুর্নামেন্টে যদি অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করতে পারি, এটা আমার জন্য ভালো হবে এবং দলের জন্যও ভালো হবে। তো অবশ্যই, এটা তো সবারই স্বপ্ন থাকে।’ 

মিরাজ বর্তমানে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত, ডানহাতি অফস্পিন অলরাউন্ডার সব সমস্যার সমাধান। নতুন বলে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং। ওপেনিংয়ে বোলিং। ফিল্ডিংয়ে সীমানাতেও যেরকম। বৃত্তের ভেতরেও সেরকম। একদম পারফেক্ট টিমম্যান। কেবল দলের চিন্তা করেই তার এমন মানসিকতা, ‘মানিয়ে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমি নই, প্রত্যেকেই মানিয়ে নিয়ে খেলছে। বড় কিছু অর্জন করতে গেলে মানিয়ে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’  

ধর্মশালায় মেহেদী রঙে মিরাজ রাঙিয়েছেন বাংলাদেশকে। তার রঙ সামনে লাল সবুজের ক্যানভাসকে আরও রাঙিয়ে তুলবে এমনটাই তো প্রত্যাশা। তানভীর আহমেদের বিশ্বাস এখান থেকে মিরাজ কেবল সামনেই এগিয়ে যেতে পারেন, ‘ওর পারফরম্যান্স ওর ভেতরের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবে। পরের ম্যাচ যেগুলো আছে, আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আছে আমাদের, ওসব ম্যাচের জন্য ওর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবে।’

ধর্মশালা/ইয়াসিন/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়