ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২১ ১৪৩১

‘এমন কিছু হবে যা আগে হয়নি’

ইয়াসিন হাসান,ধর্মশালা থেকে: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ৯ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৬:৫০, ৯ অক্টোবর ২০২৩
‘এমন কিছু হবে যা আগে হয়নি’

‘গোউজ ফর হিরো। বোল্ড হিম। ফুল অ্যান্ড স্ট্রেইট। দ্য বাংলাদেশ টাইগারস হ্যাভ নকড দ্য ইংলিশ লায়ন্স, আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ। ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট ডেইজ ইন দ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট হিস্টোরি, ওয়ান অব দ্য লোয়েস্ট পয়েন্টস ইন ইংলিশ ক্রিকেট।’

নাসের হুসেইন ধারাভাষ্যকক্ষে তখন আওড়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের স্তুতিগাঁথা। যার জন্য এতো প্রশংসা সেই তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশের দ্রুতগতির বোলিংয়ের ঝান্ডা উড়ানো রুবেল হোসেন।

আরেকটি বিশ্বকাপ যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন স্মৃতির আয়নায় ভেসে আসে ইংল্যান্ড বধের মহাকাব্য। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এই পেসার। তিনটি বিশ্বকাপ খেলার রুবেল এখন জাতীয় দল থেকে দূরে থাকলেও মনটা পড়ে আছে ওই লাল-সবুজের ড্রেসিংরুমে। বিশ্বকাপকে ঘিরে তার উন্মাদনারও শেষ নেই। 

তার কথা শুনেছে রাইজিংবিডি ডটকম...

বিশ্বকাপ এলেই ইংল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডকে জড়িয়ে আপনার নামই আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। নিশ্চয়ই কারণটা জানেন...
রুবেল হোসেন: অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারানো (হাসি)। ওই ম্যাচটা ভুলি কি করে! আমার জীবনের সেরা স্মৃতি। ওইটা এমন একটা ম্যাচ ছিল যেটা আমরা জিততে চেয়েছিলাম ১১ এগারজন। জানপ্রাণ দিয়ে খেলেছি। আমরা তো সেবার কোয়ার্টার ফাইনালও খেললাম বিশ্বকাপের। অন্যরকম একটা আনন্দ। ইংল্যান্ড তো বিশ্বাসই করছিল না আমরা ওদেরকে হারিয়ে দিয়েছি! 

এটাই কী বিশ্বকাপে আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ। তিনটা বিশ্বকাপ খেলেছেন আপনি...
রুবেল হোসেন: অ্যাডিলেডের সেই ম্যাচটার কথাই বলবো। ওই ম্যাচটা কোনোদিনও ভোলা সম্ভব না। তবে আমার ভালো যে রেকর্ড আরো দুই-তিনটা আছে সেগুলো বিশ্বকাপে না। নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে হ্যাটট্রিকসহ ছয় উইকেট। প্রথম নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার সময় কাইল মিলসকে বোল্ড করা...সেগুলোও আমার খুব স্মরণীয়।

আপনি তিনটা বিশ্বকাপ খেলেছেন। বিশ্বকাপ আসলে কি? এর ঝাঁঝ নিয়ে যদি বলেন...
রুবেল হোসেন: বিশ্বকাপ অন্য উচ্চতার। বিশাল ইভেন্ট। এশিয়া কাপও বড়। কিন্তু বিশ্বকাপের জৌলুসই আলাদা। একজন খেলোয়াড় যখন খেলা শুরু করে তখন একবার হলেও সে চিন্তা করে আমি বিশ্বকাপ খেলব। এই একটা খেলা সারা পৃথিবীর মানুষ দেখে। আর ক্রিকেট নেশন দেশগুলোতে এটা ছড়িয়ে পড়ে বেশি। হাইলাইট হওয়া যায় বেশি। আর এখানে ভালো পারফর্ম করলে মানুষ মনে রাখে বেশি।  

বিশ্বকাপে আপনি ১৪ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছেন, গড় ৪৬, ইকোনমি ৬ এর উপরে। আপনার পছন্দের উইকেট কোনটা?
রুবেল হোসেন: অ্যান্ডারসনের ওই বোল্ডটা। ওই বলটা রিভার্স করে যেভাবে ঢুকেছে, যে কোনো ব্যাটসম্যান হলেও আউট হয়ে যেত। আর ওইটা মনে আছে বেশি কারণ ম্যাচ উইনিং উইকেট ছিল। এছাড়া বিরাট কোহলিকেও ২০১৫ বিশ্বকাপে ভালো বলে আউট করেছিলাম।  

এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে বলে বিশ্বাস আপনার? 
রুবেল হোসেন: সত্যি কথা বলতে আমার প্রত্যাশা অনেক উচুঁতে। কারণটা হচ্ছে আমাদের বোলিং আক্রমণ। এটা এখন খুবই স্ট্রং। সঙ্গে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছে। আবার যারা চার-পাঁচ বছর খেলছে এমন ক্রিকেটারও আছে। তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটারও আছে। এছাড়া এশিয়ার মাটিতে খেলা। এশিয়ার বাইরের দলগুলোর বিপক্ষে ভালো করার সুযোগ থাকবে। এ কারণে আমার বিশ্বাসটা খুব উচুঁতে। এবার ভালো কিছু হবে।

সাকিব আল হাসানের ওপর আপনার প্রবল বিশ্বাস। আমরা সবাই ক্রিকেটার সাকিবকেই চিনি। ব্যক্তি সাকিবকে নিয়ে কিছু বলবেন?
রুবেল হোসেন: ব্যক্তি সাকিবের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খুব গভীর। তাকে খুব কাছ থেকে দেখে যেটা বুঝি, খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মানুষ। কোনো কিছু লুকাতে পছন্দ করেন না। কারও পেছনে কথা বলতে পছন্দ করেন না। যে কারণে আমি বেশি পছন্দ করি। উনি যদি আপনার কোনো কিছু পছন্দ না করে মুখে ওপরে এসে বলে যাবে। শুধু আমি একা না, বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম ক্রিকেটারদের পছন্দের মানুষও সাকিব। কাউকে ছোট করছি না। কিন্তু উনার ব্যক্তিত্ব, উনার চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় সুলভ মানসিকতার কারণে উনাকে সবাই বেশি পছন্দ করে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অতুলনীয়। ব্যক্তি সাকিব আল হাসানও চ্যাম্পিয়ন। 

কয়টা ম্যাচ জিতলে বলবেন ওয়ার্ল্ডকাপ সাকসেসফুল?
রুবেল হোসেন: কয়টা ম্যাচ না...আমি চাই এবার আমাদের একটা ভালো ফলাফল করতে হবে। বাংলাদেশের এর আগে কখনো হয়নি এমন ফল পেতে হবে। আমি খেয়োড় হিসেবে তো চাইবো আমার দেশ ফাইনাল খেলুক। এটাই চাই। আমার আত্মবিশ্বাস খুব আছে। ব্যাটসম্যানদের একটু দায়িত্ব নিতে হবে। বোলিং ইউনিট ভালো করছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করলে মনে হচ্ছে বাকি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।  

এখন যারা পেসার আছে, তাসকিন-হাসান-শরিফুল-মোস্তাফিজ তাদের থেকে আপনার প্রত্যাশা?
রুবেল হোসেন: আমি সবচেয়ে বেশি খুশি আমাদের পেস বোলিং বিভাগ নিয়ে। খুব চমৎকার একটা বোলিং ইউনিট। সবাই ১৪০ কিমিতে বোলিং করতে পারে এবং সবার ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য আছে। সেটা তারা প্রমাণও করেছে। এই ইউনিটে কেউ কারো ওপর ডিপেন্ডেবল না। সবার আত্মবিশ্বাস থাকে যে ম্যাচটা জেতাতে পারবে, সিনারিও চেঞ্জ করতে পারবে। ওরা দীর্ঘ সময় সার্ভিস দেবে এটা প্রত্যাশা। 

ধর্মশালা/ইয়াসিন/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়