খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রেকর্ড গড়ে পাকিস্তানকে জেতালেন রিজওয়ান
১২২ কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগে লং অফে উড়িয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে লুটিয়ে পড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এভাবে পুরো ইনিংস জুড়ে বেশ কয়েকবার ক্র্যাম্পের শিকার হন পাকিস্তানের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তবে দমে যাননি। ফখর জামানের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া আব্দুল্লাহ শফিক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দিয়েছিলেন দারুণ সঙ্গ। তিনি শেষ করতে না পারলেও ইফতেখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন রিজওয়ান।
হায়দরাবাদে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে রেকর্ড ৩৪৪ রান করে। তাড়া করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ১০ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। এই নিয়ে দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই জিতেছে বাবর আজমের দল। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা দুটি খেলে দুটিতেই হার। বিশ্বকাপে রান তাড়া করে পাওয়া জয়ের দিক দিয়ে এটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ইতিহাসে এটি দ্বিতীয়।
রিজওয়ান ১৩১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। তার সঙ্গে ইফতেখার পালন করেন ক্যামিও রোল। মাত্র ১০ বলে ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন ইফতেখার। ৯৭ বলে রিজওয়ান পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। শেষ পর্যন্ত ১২১ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান।
আব্দুল্লাহ শফিক মাত্র ৯৭ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান। সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। বদলি ফিল্ডার দুশান হেমন্থের অসাধারণ ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন ১০৩ বলে ১১৩ রান করে। মাঝে ৩০ বলে ৩১ রান করেন সৌদ শাকিল। ইমাম ১২ ও বাবর ১০ রানে ফিরলে শুরু হয় রিজওয়ান-শফিকের মহাকাব্য। ১৫৬ বলে ১৭৬ রান যোগ করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন দিলশান মাদুশংকা।
তার আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। শূন্যরানে কুশল পেরেরা ফেরেন হাসান আলীর শিকার হয়ে। ১ রানে জীবন পেয়ে কুশল মেন্ডিস আর পেছনে ফিরে তাকাননি। সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে পয়েন্টে তার ক্যাচ ছাড়েন ইমাম-উল-হল। জীবন পেয়ে পাথুম নিসাঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন শতরানের জুটি। নিসাঙ্কা ৫১ রানে আউট হলে ভাঙে ১০২ রানের জুটি।
এরপর মেন্ডিসের সঙ্গী হন সাদিরা সামারাবিক্রমা। এবার তাণ্ডব চালান দুজনে। মেন্ডিস মাত্র ৬৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হয়ে এটি দ্রুততম শতক। মাত্র ৭৭ বলে ১৪ চার ও ৬টি ছয়ে শেষ পর্যন্ত ১২২ রান করেন। তার আউটে ভাঙে সাদিরার সঙ্গে গড়া শতরানের জুটি। এবার মাত্র ৬৯ বলে ১১১ রান যোগ করেন দুজনে।
মেন্ডিস ফেরার পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করনে সাদিরা। তাও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। মাত্র ৮২ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। শেষ পর্যন্ত আউট হন ৮৯ বলে ১০৮ রান করে। এ ছাড়া ২৫ রান আসে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাট থেকে। দুই শতরানের জুটিই মূলত শ্রীলঙ্কাকে ব্যাট হাতে চালকের আসনে বসায়।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে চতুর্থবারের মতো একই ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরির জুটি দেখেছে শ্রীলঙ্কা। সবশেষ ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিল দেশটি। এ ছাড়া বিশ্বকাপে একই ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি সেঞ্চুরির ঘটনা এটি দ্বিতীয়বার। সবশেষে ২০১৯ বিশ্বকাপে জো রুট-জস বাটলার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, এই প্রথম বিশ্বকাপের এক ম্যাচে হলো চার সেঞ্চুরি।
পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন হাসান। ১০ ওভারে ৭১ রান দিয়ে এই উইকেটগুলো নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৭ ইনিংসে এই পেসার এখন পর্যন্ত নেনে ২১ উইকেট! হারিস রউফ ১০ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। শাহীন আফ্রিদি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ৯ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন তিনি।
রিয়াদ/আমিনুল