ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

ওপেনিং এখন বাতিলের খাতায়!

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চেন্নাই থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ১২ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ২২:০১, ১২ অক্টোবর ২০২৩
ওপেনিং এখন বাতিলের খাতায়!

মুখ ফুটে শান্ত শুধু বলতে পারলেন না, ওপেনার ছাড়াই খেলছে বাংলাদেশ! নয় তো বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি নিয়ে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান যে মন্তব্য করলেন তাতে দাঁড়ায়, বাংলাদেশ দল এখন ওপেনিং নিয়ে কোনো আলোচনাই করে না। ওপেনাররা ভালো করলে খুশি। খারাপ করলে অভিযোগ নেই। মানিয়ে নিয়েছে দল!

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে কি ওপেনারদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে শান্ত যেভাবে দলের ওপেনিং নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখালেন তাতে তা-ই মনে হলো, ‘আমার মনে হয় এই ওপেনিং নিয়ে আমরা আর চিন্তাই না করি। মানে এই চিন্তাটাই বাদ দিয়ে দেই।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ শুরু থেকে ইংল্যান্ড ম্যাচ পর্যন্ত ১২ ওয়ানডেতে ছয় ওপেনিং জুটি দেখেছে বাংলাদেশ। লিটন ও তামিম দিয়ে শুরুর পর লিটন-নাঈম, নাঈম-তানজিদ, মিরাজ-নাঈম, তানজিদ-জাকির এবং লিটন-তানজিদ জুটির দেখা মিলেছে। এ সময়ে কেবল দুই ম্যাচে বাংলাদেশের রান ফিফটি পেরিয়েছে। এছাড়া চার ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। পাঁচটিতে পেরোতে পারেনি বিশের ঘর। দিনের পর দিন ব্যর্থতার বোঝা ভারী হচ্ছে। জমছে একের পর এক স্তুপ। বারবার অদল-বদল হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ নেই। নতুন যে-ই আসছে সেও ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা।

সবচেয়ে ভরসার হয়ে ছিলেন লিটন দাস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে ৭৬ রানের আগে পাঁচ ইনিংসে তার রান ছিল যথাক্রমে ১৩, ৬, ০, ১৫ ও ১৬। দৃষ্টিকটুভাবে আউট হচ্ছিলেন প্রায় প্রতিবার। তবে শেষ ওয়ানডেতে তার রানের ফেরায় দল একটু স্বস্তি পাচ্ছে। কিন্তু অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসানের ব্যাট বিবর্ণ হয়ে আছে। প্রস্তুতি ম্যাচে দুই ওয়ানডেতে ভালো করায় মনে হচ্ছিল বিশ্ব মঞ্চে ভালো করতে পারেন তিনি। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার দৃষ্টিকটু আউটে হচ্ছে সমালোচনা। যদিও দুই ওয়ানডে দিয়ে তাকে বিবেচনা করতে নারাজ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

ইংল্যান্ড ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ‘দুই ওপেনার…আসলে কখনো ভালো করছে, কখনো ভালো করছে না। বেশিরভাগ সময়ই তারা আড়ালে। তারা ভালো করলে গল্পগুলো ভিন্ন হতে পারত।’

দলে নেই তৃতীয় কোনো ওপেনার। মেক শিফট ওপেনার দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে। সেই বিবেচনায় আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বিশ্বকাপ মঞ্চে সেই ঝুঁকি দল নেবে কিনা সেটাই দেখার।

শান্ত এখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় স্তম্ভ। শেষ ম্যাচে গোল্ডেন ডাক পেলেও প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ফিফটি। তার বিশ্বাস সামনে ওপেনাররা ভালো কিছু করবে। শান্ত কঠিন সময় পেরিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এক সময়ে তার ব্যাটেও ছিল রান খরা। আউট হতেন যখন-তখন, দলকে বিপদে ফেলে। অথচ বিরুদ্ধ সেই সময় পেরিয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন আলো ছড়াচ্ছেন। তারও বিশ্বাস, এখন যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তারা সামনে ভালো করবেন। একটা ভালো ইনিংস গড়ে দিতে পারে ব্যবধান।

‘স্টিল পাঁচ-ছয়টা ম্যাচই খেলেছে। প্রতিটি খেলোয়াড়েরই আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় কারও একটু বেশি সময় লাগে, কারও একটু কম সময় লাগে। তবে সবার ওই বিশ্বাসটা রাখা উচিত তার ওপর। যেন আমরা ওকে সমর্থন দেই ও বিশ্বাস করি। কারণ, এখানে যে কয়েকজন এসেছেন, সবাই ক্যাপেবল ভালো কিছু করার জন্য।’

তবে শান্ত মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ওপেনিংয়ে ব্যর্থতার পরও দল যেভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তাতে ব্যাটিং সামর্থ্যের ছবি আঁকা যায়, ‘নতুন বলে ব্যাটিং করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। যেকোনো পরিস্থিতিতে অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। যদি শুরু ভালো হয়, দলের জন্য ভালো। কিন্তু আমার জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ দুই-তিন উইকেট যদি পড়ে যায়; ওখান থেকে আমরা কীভাবে কামব্যাক করি। এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে, দুই তিনটা উইকেট পড়ে যাওয়ার মানে এই না যে আমরা খুব অল্প রানে অলআউট হয়ে যাবো। ওখান থেকে কীভাবে আমরা বড় রান করতে পারি, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি শুরুটা ভালো হয়, তাহলে তো অবশ্যই দলের জন্য ভালো।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শান্ত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও সতীর্থদের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না, ‘আমার মনে হয় যারাই টপ-অর্ডারে ব্যাটিং করছে, সবাই খুব ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। আমার মনে হয় একটা-দুইটা ভালো ইনিংসে ওই ব্যাটারের আত্মবিশ্বাস আসবে। কেউই এখানে এমন না যে রিল্যাক্স আছে বা টিমের জন্য চেষ্টা করছে না। সবাই চেষ্টা করছে। আশা করছি আগামী ম্যাচ থেকে টপ-অর্ডারেও ভালো কিছু হবে।’

ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়