ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

অধিনায়ক-কোচেই আলোচনা শেষ!

ইয়াসিন হাসান, পুনে থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০২, ১৪ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ২০:০৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৩
অধিনায়ক-কোচেই আলোচনা শেষ!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ হারের পর দলের তিন মাথার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে খুব সরল উত্তর দিলেও তা নিয়ে বেশ কানাঘুষা হয়েছে। দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন, টিম পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কিভাবে কাজ করেন তা নিয়ে ছিল জানতে চাওয়া। হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন, সবার কাজ দলের জন্য অবদান রাখা। দলের জন্য ভালো সেই পরামর্শ দেওয়া। সম্মিলিত সেসব অবদানেই নির্ধারিত হয় দলের পরিকল্পনা।

কিন্তু হাথুরুসিংহে তো এমন নন! প্রথম মেয়াদে নিজের সিদ্ধান্ত বাদে শোনেননি কারো কথা। অনেক সময় অধিনায়ককেও নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে বাধ্য করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদেও হাথুরুসিংহে পরির্বতন হননি। এখনও দলে তার প্রভাব অটল। পরির্বতন, সিদ্ধান্তের প্রশ্নে তার নামের পাশেই বসে যায় ফুলস্টপ। সেখানে খালেদ মাহমুদ সুজন কিংবা শ্রীধরণ শ্রীরামের অবদান বলতে গেলে শূন্য। খালেদ মাহমুদ সরাসরি বলতে চাননি। তবে যেভাবে বলেছেন তাতে স্পষ্ট দলে তার অবদান সামান্যই, ‘অধিনায়ক পেশাদার। কোচ পেশাদার। তারা অভিজ্ঞ। সব সিদ্ধান্ত তারাই নিচ্ছেন। বাড়তি ইনভলবমেন্টের দরকার হচ্ছে না।’

হাথুরুসিংহে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্যে এখন পাশে পাচ্ছেন কেবল সাকিব আল হাসানকে। তাদের দুজনের আলোচনাতেই হচ্ছে সব সিদ্ধান্ত। এরপর পরিকল্পনা। বাকিরা স্রেফ এখানে দর্শক! দলের সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কথায় তা উঠে আসে, ‘কোচ ও অধিনায়ক সব বলতে পারবেন। উনারাই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’

বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বিশ্বকাপে যা হচ্ছে তা রীতিমত বিস্ময়কর। প্রশ্নের উর্ধ্বে যাওয়ার মতোই এক আলোচনা। বিশ্বকাপে অন্যান্য দলগুলো নিজেদের খেলোয়াড়দের স্থির রেখে সেরা পারফর্ম আদায় করে নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ একেক পজিশনে একেক খেলোয়াড়কে খেলিয়ে পরীক্ষায় ফেলছেন সাকিব-হাথুরুসিংহে জুটি। অথচ বিশ্বকাপের আগে নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমদের জায়গা স্থির ছিল। নিয়মিত তারা পারফর্ম করেও আসছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ মঞ্চে তাদের নাড়াচড়া হওয়ায় পুরো ব্যাটিং অর্ডার এলোমেলো।

প্রত্যেক ম্যাচের আগে কোচ ও অধিনায়ক জানিয়ে দিচ্ছেন পরিকল্পনা। তাতে খেলোয়াড়দের নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে নামছেন পরীক্ষায়। শান্ত, মিরাজ, তাওহীদদের অভিযোগ তোলার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের সুবিধার কথাও মনে করিয়ে দিলেন গত এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সেরা পারফর্ম করা শান্ত, ‘আমরা যারা ব্যাটিং করি তারা সবাই জানি কে কখন ব্যাটিং করবে। ম্যাচের আগে তা বলে দেওয়া হচ্ছে। পেছনের কারণ অধিনায়ক ও কোচ বলতে পারবেন। যদি না হয় (ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন) তাহলে ব্যাটসম্যানের জন্য সুবিধা হয়। এখন কারো কোনো অভিযোগ নেই।’

শেষ ১১ খেলায় বাংলাদেশের নয় ইনিংসেই একশর রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে। টপ অর্ডার ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডারকে দিতে হচ্ছে পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় তারা কখনো সফল হচ্ছেন। কখনো ব্যর্থ। কোচ ও অধিনায়ক যে পরিকল্পনা করছেন তা কাজে আসছে না। নিরুপায় ব্যাটসম্যানদের তাই বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলার কথা বললেন শান্ত, ‘প্রতিদিনই পরিকল্পনা করা হয় কিভাবে ভালো করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে, আমাদের দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করা উচিত। টপ অর্ডার চ্যালেঞ্জ থাকবে। নতুন বল সেটাও সবাই জানি। সবাই সবার ভূমিকা জানি। এজন্য সবার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। স্কিল খুব বেশি ভূমিকা রাখবে না। দায়িত্বটা জরুরি।’

বাধ্য হয়ে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই তা জানিয়ে রাখতে অবশ্য ভুল করলেন না বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ‘একটু তো অ্যাডজাস্ট করাই লাগে। সবারই ওই ফ্লেক্সিবিলিটি থাকা দরকার যে কোনো সময় যে কোনো পজিশনে ব্যাটিং করার।’

শান্তকে বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে উড়িয়ে আনা হয়েছে। দলের পরিকল্পনায় তার ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে বলেছেন, ‘অবশ্যই আলোচনা হয়।’ সেই আলোচনা যদি হয়ে থাকে শান্ত অবশ্যই নিজ ইচ্ছায় তিন নম্বরের জায়গা ছেড়ে দেননি। যদি হয়ে-ও থাকে বুঝতে পারছেন না, ‘আসলে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সেটাও বুঝতে পারছি না।’ এমন ধ্রুমজালে থেকে বিশ্বকাপে সেরা পারফরম্যান্স করা কি আদৌ সম্ভব? 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়