মিরাজকে থিতু করতে বাকি সব ‘ওলটপালট’
ক্রীড়া প্রতিবেদক, পুনে থেকে || রাইজিংবিডি.কম
মেহেদী হাসান মিরাজ এমনভাবে জ্বলে উঠবেন তা কেউ হয়তো প্রত্যাশা করেননি! স্রেফ বাজিয়ে দেখার জন্যই তাকে টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়েছিল এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশের টপ অর্ডার তখনও ভুগছিল। এখনো ভুগছে। কিন্তু পাকিস্তানের লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ১১২ রানের ইনিংস খেলে সব আলো নিজের করে নেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। যুব ক্রিকেট থেকে উপরের দিকে ব্যাটিং করে অভ্যস্ত মিরাজ। জাতীয় দলে তার জায়গা ছিল শেষ দিকে। কিন্তু উপরের দিকে যতবারই সুযোগ পেয়েছেন ততবারই নিজেকে মেলে ধরেছেন। এর আগে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৩২ রানের ইনিংসটিকে বলা হয় বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে সবচেয়ে মান বাঁচানো ইনিংস। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একশর পর ছয় ইনিংসের দুটিতে ওপেনিং, দুটিতে তিন ও দুটিতে পাঁচে ব্যাটিং করেছেন মিরাজ। যেখানে তার স্কোর ছিল যথাক্রমে ০, ২৮, ১৩, ৫৭, ৮ ও ৩০। মাঝে দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচে রান করেছেন অপরাজিত ৬৭ ও ৭৪। সব মিলিয়ে মিরাজ টপ অর্ডারে রান করায় বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার এখন এলোমেলো হয়ে গেছে।
তাকে উপরে থিতু করতে গিয়েই ‘সর্বনাশ’ ব্যাটিং অর্ডারে এমনটাই মনে করছেন দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন, ‘এমন যদি হতো মিরাজ তার পজিশনে ব্যাটিং করছে তাহলে এই সমস্যাটাই থাকতো না। শান্ত তিন, সাকিব চার, তাওহীদ পাঁচ, মুশফিক ছয়, সাতে রিয়াদ বা সাতে মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ আটে। যেভাবেই হোক। আসলে মিরাজকে টপ অর্ডারে ব্যবহার করাতে এবং লেফট হ্যান্ড রাইট হ্যান্ড কম্বিনেশন খোঁজাতে হয়তো জিনিসটা হচ্ছে।’
কিন্তু বারবার একই পরিকল্পনায় দল সাজানোয় এবং টপ অর্ডার রান না পাওয়ায় দলের পরিকল্পনা ব্যাকফায়ার করছে বলে মনে করছেন খালেদ মাহমুদ, ‘মিরাজ এশিয়া কাপে একশ করেছে। বিভিন্ন সময়ে রানও করেছে টপ অর্ডরে। অনুশীলন ম্যাচেও রান করেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ভালো ব্যাটিং করেছে। এই চিন্তা করেই হয়তো ওকে টপ অর্ডারে খেলানো হচ্ছে। শেষ ম্যাচ খেলেও ৩০ করেছে। তারপরও আমাদের লিটন, তানজিদ, সাকিব, শান্ত, মুশফিক এদের ওপর নির্ভর হতে হবে। তারা রেগুলার ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওই যে একটা-দুইটা উইকেট শুরুতে পড়লে মিরাজকে পাঠাতে চাচ্ছি, উইকেটটা যদি আটকাতে পারে, ওখানে যদি একটা পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারে। পরে হয়তো আমরা আক্রমণাত্মক কিছু করতে পারব…সেটা আসলে আমাদের ব্যাকফায়ার করছে।’
দলের সিদ্ধান্তে এখন খালেদ মাহমুদ জড়াচ্ছেন না। অধিনায়ক ও কোচ সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তবে এই দল সম্পর্কে খালেদ মাহমুদও কম জানেন না। তাইতো স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের তাদের পজিশনেই খেলানোর পক্ষে তিনি, ‘কিছু স্পেশালিস্ট পজিশনে কিছু স্পেশাল ব্যাটসম্যান প্রয়োজন। কেন তাদেরকে তাহলে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান বলা হয়। ওপেনার স্পেশালিস্ট, নাম্বার থ্রি স্পেশালিস্ট। মিরাজ হয়তো সফলতা পেয়েছে তিনবার। এজন্য হয়তো টিম আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। এজন্য ব্যাটিং অর্ডার শেষ দিকে বড় করছে। আমি যেটা অনুভব করি।’
‘আমি অবাক হই আর না হই, দলের অধিনায়ক ও কোচ যেটা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাকেই মনে করতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। আপনি বলতে পারবেন না যে, ও এখানে খেললে ভালো করতো। ও ওখানে গেলে ভালো করতো। যেহেতু ফল পাচ্ছি না তাই এই কথাগুলো উঠছে।’
মিরাজ কিংবা ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, যত সমালোচনা হচ্ছে সবকিছু থামিয়ে দিতে পারেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। তারা রান করলেই শুরুর বিপর্যয় ঠেকিয়ে বড় কিছু করা সম্ভব, ‘শুরুতেই ৫টা উইকেট চলে যাচ্ছে। তাই শেষ ১০ ওভারে পাওয়ার প্লে ব্যবহার হচ্ছে না। শেষ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ইনিংসটি হয়তো কি ফ্যাক্টর হতে পারত। যদি টপ অর্ডার ওই ব্যাটিংটা করতো তাহলে সেটা সহজ হয়ে যেত। যদি টপ অর্ডার ভালো করতো তাহলে একজন ব্যাটসম্যান কম নিয়ে খেলে একজন বাড়তি বোলার খেলাতে পারতাম। আমরা এখনো আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বোলাররা অল্পরানে ওদেরকে আটকে রাখায় কাজটা সহজ হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা কেউ পারেনি। এখন পর্যন্ত ব্যাটিংটাই আমাদের উইক জোন হিসেবে কাজ করছে।’
‘আমরা আশাবাদী, এখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি প্রথম ১০ ওভারে ভালো ব্যাটিং করি, কোনো উইকেট না হারাই। তাহলে অবশ্যই আমাদের সামর্থ্য আছে ৩০০ রানের বেশি করার।’
‘যেই আগ্রাসন, ম্যাচ ক্লোজ হওয়া, টাইট পরিস্থিতি হবে সেরকম হচ্ছে না বলে আমাদের সবারই মন খারাপ। আমাদের সবাই ফর্মে ছিল। কিন্তু কেউ এক্সিকিউশন করতে পারছে না। আশা করছি এখান থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।’
ইয়াসিন/আমিনুল