চনমনে সাকিবের ঝরঝরে অনুশীলনে শঙ্কার কালো মেঘের ছুটি
ক্রীড়া প্রতিবেদক, পুনে থেকে || রাইজিংবিডি.কম
অনিশ্চিয়তার মেঘ জমেছিল। সংশয়ের ঘোর চারিপাশে। উৎকণ্ঠা আর উদ্বিগ্নতায় কাটছিল সময়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে পাওয়া যাবে তো?
৪৫ মিনিটের ঝরঝরে নেট সেশন শেষে হালকা রানিং। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে লম্বা সময় কাটিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর এক চিলতে হাসিতে সাকিব হয়তো স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমি ঠিক আছি! সেই ঠিক আছি’র মানে হয়তো শতভাগ ঠিক নয়। কিন্তু তার কাছাকাছি। তাতেই যথেষ্ট?
সাকিবকে বৃহস্পতিবার পাওয়া যাবে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ঊরুতে চোট পান সাকিব। দলের প্রয়োজনে বোলিং করেছিলেন ১০ ওভার। এরপর মাঠ থেকে উঠে যান। তার বামপায়ের স্ক্যান রিপোর্টে বড় কিছু ধরা না পড়ায় বিপদ থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও সংশয় ছিল।
মাঠে সাকিব কেমন অনুশীলন করেন তা ছিল দেখার। মঙ্গলবার সেই সংশয়ও কেটে যায়। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের অধিনায়ক টস করতে নামবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত ধরাই যায়।
পুনেতে সাকিবের অনুশীলন শুরু হয়েছিল ফুটভলি খেলে। নিজেদের মধ্যে আয়োজিত সেই খেলায় সাকিব কিক করে খেলা শুরু করলে পরবর্তীতে তার অংশগ্রহণ ছিল সামান্য। খুব বেশি বলে কিক করতে দেখা যায়নি। ডানপায়ে দুয়েকটি শট নিলেও বামপা রেখেছিলেন সুরক্ষিত। কোনো চাপ যেন না পড়ে সেজন্য ছিলেন সজাগ। এর আগে মাঠে নেমে হালকা স্ট্রেচিংয়ে শরীরের জড়তা কাটিয়ে নেন।
দুপুর ২টায় অনুশীলনে নেমে গোটা দলের মিটিং ছিল সবুজাভ মাঠে। সাকিবই সেখানে প্রধান বক্তা। লম্বা বক্তব্যে শুরুতে কিছুটা সময় বেশ সিরিয়াস ছিলেন সাকিব। শেষ দিকে এনালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনকে গোল চক্রের ভেতর শুয়ে কিছু একটা অভিনয় করে দেখাতেই সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। এরপর শান্ত বাদে দলের প্রত্যেকে চলে যান ফুটভলি খেলতে। শান্তর ঠিকানা নেটে।
সাকিব এরপর কিছুক্ষণ মাঠে ঘোরাফেরা করেন। এ সময়ে তাকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায়। কথা বলেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গেও। তার সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন তখন নেটে ব্যাট করছিলেন তানজিদ ও মুশফিক। মুশফিকের ব্যাট সমানতালে চললেও তানজিদ খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না। তা খুব কাছ থেকে দেখে হয়তো ভালোভাবে নেননি সাকিব।
অধিনায়ক এরপর উঠে যান ড্রেসিংরুমে। কিছুক্ষণ বাদে নেমে পড়েন ব্যাট-প্যাড পরে। তার সঙ্গে ছিলেন লিটন দাস। নেট ফাঁকা না থাকায় দুজন বেশ কিছু সময় একা কথা চালিয়ে যেতে থাকেন। সাকিবের ব্যাটিং অনুশীলন শুরু হয় হালকা নকিং দিয়ে। ফিল্ডিং কোচ ডিকেন্স নেটে পেছনে নিয়ে তাকে আন্ডারআর্ম অনুশীলন করান। যেখানে সাকিব কেবল বলের ওপর চোখ ঠিক রাখার কাজটা করেছেন। এরপর সাকিব চলে যান নেটে।
শুরুতে স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করেন। মেহেদী হাসান, নেট বোলার কারাপ্পা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাসুম আহমেদের বল খেলেছেন টানা। এই চার স্পিনারের বল কমপক্ষে ৭-৮ রাউন্ড খেলেছেন। নিজের খেলা তৃতীয় বলেই সাকিব তেড়ে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাইমিং মেলাতে পারেননি। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম বলে মাহেদী হাসানকে উড়িয়েছিলেন লং অন দিয়ে। যেভাবে ব্যাটের টাইমিং হয়েছিল তাতে গোটা স্টেডিয়ামে একটা সুন্দর আওয়াজ ছড়িয়ে গিয়েছিল। ওই শটের পর মনে হয়েছিল সাকিব মনে হয় স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাতেই আছেন। কিন্তু না। ব্যাটিংয়ে তাকে জড়তা দেখা না গেলেও টাইমিং মেলাতে পারছিলেন না কিছুতেই। একাধিকবার স্পিনাররা তাকে বোল্ড করেছেন। সাকিব হাওয়ায় ভাসিয়ে ক্যাচ তুলেছেন আকাশে। তবে আজকের ব্যাটিংয়ে টাইমিং মেলানো, শট নির্বাচন কিংবা চার-ছক্কা কতটা মেরেছেন তার হিসেব জরুরি ছিল না একদমই।
সাকিবের শরীর কতটা সতেজ, কতটা সাপোর্ট করছে তা ছিল দেখার। যেভাবে এগিয়ে এসে শট খেলেছেন, ইনটেনসিটি দেখিয়েছেন তাতে বোঝা গেছে শরীর তাকে সাপোর্ট করছে। শুধু তাই নয়, মিনিট বিশেক স্পিনারদের খেলার পর তিন পেসারকে খেলার সময়ও তাকে এক মুহূর্তের জন্য অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায়নি। তাসকিন, শরিফুল ও মোস্তাফিজকে সুন্দর কাট, পুল খেলেছেন। স্ট্রেইট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ ও ছিল দৃষ্টিনন্দন। তবে বড় শটগুলো চলে যাচ্ছিল এদিক-সেদিক। বোঝা যাচ্ছিল ফ্রি হিট প্র্যাকটিসে সাকিবের মনোযোগ ছিল বেশি। নেট থেকে বের হওয়ার পরপরই আবার চলে সাকিব ও হাথুরুসিংহের বৈঠক। সেই আলোচনা স্থায়ী হয় মিনিট পাঁচেক। এরপর আরেকটি নেটে ঢুকে তিন থ্রোয়ার দিয়ে চলে তার আরেক সেশনের ব্যাটিং। যেখানে সাকিবকে কেবল বাউন্সার, হাফ ভলি বল সামলাতে দেখা গেছে। কিছু বল সাকিব খেলেছেন অনায়েসে। কিছু বল ডাক করেছেন। সেখানেও সাকিবকে অস্বস্তি অনুভব করতে দেখা যায়নি। বরং তার অনুশীলন ছিল বেশ সতেজ।
সাকিব রানিং করবেন তা সূচিতেই ছিল। কিন্তু ৪৫ মিনিট নেট সেশনের পর তার চাওয়া ছিল বিশ্রাম। তাইতো দূরের ফাঁকা নেটের পাশে গিয়ে ত্রিশ মিনিটেরও বেশি সময় বসে ছিলেন। তার পাশে শুরুর দিকে ছিলেন লিটন। এরপর সেখানে যোগ দেন হাথুরুসিংহে। মাঠে সাকিব ও হাথুরুসিংহে দফায় দফায় আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনার শেষটা হয় সেখানেই। যেটা ছিল বেশ দীর্ঘ।
সেই আলোচনা পর্ব শেষে ফিজিওকে নিয়ে চলে সাকিবের রানিং সেশন। এর আগে সকালেও একবার রানিং করেছিলেন। সেটা ছিল কেবল স্ট্রেচিংয়ের। এবার ব্যাট-প্যাড আর হেলমেট পড়েই সাকিব রানিং করেছেন। কখনো এক রান নেওয়ার জন্য। কখনো দুই রান। খুব জোর দিয়ে রানিং করেননি অবশ্য। তবে প্রয়োজনের বেশি রানিংয়ে সময় দেননি।
৪৫ মিনিটের নেট আর লম্বা সময় মাঠে থেকে সাকিব যে হাসি দিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তাতে সমর্থকরা আশা দেখতেই পারে। সাকিবকে নিয়েই মাঠে নামছে বাংলাদেশ।
ইয়াসিন/আমিনুল