ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

সেই তাসকিন, এই তাসকিন…

ইয়াসিন হাসান, কলকাতা থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২৬ অক্টোবর ২০২৩  
সেই তাসকিন, এই তাসকিন…

দুই সময়ের মাঝে জীবনের পাতায় যুক্ত হয়েছে কত-কত অধ্যায়। কখনো সাফল্যের পাতা ভারী তো কখনো ব্যর্থতা। কখনো প্রাপ্তি দুইহাত ভরিয়ে দিয়েছে তো কখনো ছিনিয়ে নিয়েছে সর্বস্ব।

খামখেয়ালিপনায় লাইনচ্যুতর ঘটনাও ঘটেছে। ফিরে এসে অজস্র ঘামবিন্দু ঝরিয়ে নায়ক হয়ে উঠার ঘটনাও ঘটেছে। নতুন জীবনে খোলনলচে পাল্টে ফেলে পোস্টারবয়ের তকমাও পেয়েছেন। যা ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে এসে দেদীপ্যমান।

কিন্তু ক্রিকেটের নন্দনকাননে যখনই তাসকিন আহমেদের পা পড়েছে ততবারই মাথায় দুঃশ্চিন্তা, কাঁধে বোঝা! ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম যেবার তাসকিন ইডেনে পা মাড়ান তখন বোলিং অ্যাকশন সন্দেহর তালিকায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ খেলেছিলেন প্রবল ঝুঁকি নিয়ে। এরপর টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান। কারণ তাকে পাঠানো হয় বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে।

সেবার ভালো বল করছিলেন। ছিলেন দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র। কিন্তু কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সাতদিনের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হতো। তাই ইডেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৩২ রানে শহীদ আফ্রিদি ও উমর আকমলের উইকেট নিয়ে তাসকিনকে সরে যেতে হয়।

সাত বছর পর আবার তাসকিন ইডেনে। মাঝে বাংলাদেশ এই ১৫৯ বছরের পুরোনো স্টেডিয়ামে কেবল খেলেছে এক টেস্ট, ২০১৯ সালে। দলের বাইরে থাকায় তাসকিনের সেবার খেলার সুযোগ হয়নি।

লম্বা সময় পর তাসকিন যখন আবার খেলতে এলেন তখন তার কাঁধে চোট। বিশ্বকাপে বাংলাদেশর সেরা অস্ত্র হয়ে এসেছেন খেলতে। কিন্তু কাঁধের পুরোনো চোট নাড়া দিয়ে উঠায় তাসকিন নেই নিজের ছন্দে। তাতে বোলিং আক্রমণে ধুঁকছে।

তবে আশার কথা, সেই চোট কিছুটা কাটিয়ে তাসকিনকে আজ পাওয়া গেল পুরোনো ছন্দে। দল থেকে তাকে আগেই বলা হয়েছিল, দুই ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দেওয়া হবে। এজন্য ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে তাকে খেলায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। ২৮ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ ইডেনে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাসকিনকে পাওয়া যাবে ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচে।

সেই প্রস্তুতি আজ শুরু করেছেন ডানহাতি পেসার। সন্ধ্যা ৬টায় ইডেনে দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনে বেশ ঝরঝরে ও চনমনে মনে হয়েছে তাকে। পুরোনো ছন্দ, পুরোনো গতি ও শতভাগ নিবেদন নিয়ে নেটে বোলিং করে গেছেন। দীর্ঘদিন পর বল হাতে দৌড়াতে পেরে যে হাসি তার মুখ থেকে ফুটছিল তা রাতের ইডেনকেও আলোকিত করে দিচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছে, ম্যাচের জন্য নিজেকে বেশ ভালোভাবে প্রস্তুত করছেন এই পেসার।

ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ঘর্মাক্ত তাসকিনের কাছে তার অবস্থান জানতে চাইলে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলে যান, ‘অল ওকে।’ মুখে যেই হাসিটা ২০১৬ সালে হারিয়ে গিয়েছিল, ২০২৩ সালে তা ফিরে এসেছে।

বিশ্বকাপে যে তিনটি ম্যাচ তিনি খেলেছেন, ব্যাথা সঙ্গে নিয়েই খেলতে হয়েছে তাকে। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় ওভার করে বল করেন। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে করেন ৮ ওভার। তিন ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন দুটি। এক আসর পর বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও এখনও মেলে ধরার মতো পারফরম্যান্স আসেনি।

তবে এসব নিয়ে তাসকিন বিচলিত নন একদমই। কারণ, খুব ভালো করেই জানেন, ব্যর্থতা পেরিয়ে সাফল্যের সূর্য্যের দেখা মিলবে। ২০১৬ সালের সেই তাসকিন বোলিং অ্যাকশন ঠিকঠাক করে মাঠে ফিরলেও নিজের ক্যারিয়ার গোছাতে পারেননি। এই তাসকিনের ক্যারিয়ার অনেকটাই গোছানো। সামনে তার পথটা আরও কঠিন। এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে পুরোপুরি ফিট তথা আজকের তাসকিনকেই তো চাই…

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়